রাজমিস্ত্রীর ছেলেটি এখন বাংলার গর্ব ! ছোটো গ্রাম থেকে উঠে আসা ছেলেটি এখন আই আই টির ছাত্র

রাজমিস্ত্রীর ছেলেটি এখন বাংলার গর্ব ! ছোটো গ্রাম থেকে উঠে আসা ছেলেটি এখন আই আই টির ছাত্র

রাজমিস্ত্রীর ছেলেটি
এখন বাংলার গর্ব !

ছোটো গ্রাম থেকে উঠে আসা
ছেলেটি এখন আই আই টির ছাত্র

কপালে জোটে না
দু মুঠো ভাত

মাথার ওপর ছাদ বলতে
ত্রিপল ঘেরা বাড়ি

সংগ্রামের আরেক নাম
সুদীপ কুমার মাইতি।

স্বপ্নপূরণ কাকে বলে
তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

বিড়ি বাঁধুনির ছেলে , দুবেলা ঠিক মতো খেতে পায় না । পেটে খিদে রেখে সম্পূর্ণ করেছে পড়াশুনা। সেই ছেলে আজ বাংলার গর্ব । বাবাও পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি, মাসে গুনে সঠিক কোনো আয় ইনকাম নেই । যখন যা জোটে তা দিয়েই দিন চলে যায় তাদের । সেই ছেলেই পথ দেখাচ্ছে আজ গোটা বাংলাকে। এই কৃতি ছেলের মেধা দেখে অবাক হবেন আপনারা। স্বপ্নকে জয় করার আরেক নাম সুদীপ কুমার মাইতি। যেখানে সমস্ত ছেলে – মেয়েদের বাবা মায়েরা তার সন্তানের পড়াশোনার জন্য লাখ লাখ টাকা খরচা করে , সেখানে সুদীপের মত ছোটো ছেলেটির চিন্তা থাকে দুপুরের পর রাতে কি খাবে। না নিজের পড়াশুনার জন্য কখনোই তার দামী জিনিসের প্রয়োজন পড়েনি । বরং মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে সে নিজে উপার্জন করে তার বাবা মায়ের সমস্ত ইচ্ছা পূরণ করবে । আর সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে সুদীপ। চলুন জেনে নিই সুদীপের স্বপ্ন পূরণের কাহিনী ।

সুদীপ কুমার মাইতি পাঁশকুড়া ব্লকের পুরুষোত্তমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত মহাম্মদ মুরাদ মাইতি পাড়া এলাকার বাসিন্দা। বাবা মা দুই দিদিকে নিয়ে তার পরিবার। যদিও দুই দিদির বিয়ে হয়েছে বছর কয়েক আগে। সম্বল বলতে শুধু বাবা মা। অভাব যেনো তাদের সংসারের নিত্যদিনের সঙ্গী। বাবা মা রোজগার করে যা আনে তাতে সংসারই চলে না ঠিকঠাক। বাজারে প্রতিটি জিনিসের মূল্য আগুন ছোঁয়া, কিছু কিনতে গেলেই তাদের দুবার ভাবতে হয়। যেখানে তার সব বন্ধুরা পড়াশোনায় ভালো ফল করার জন্য পাঁচটা ছয়টা টিউশন নেয়, সেখানে সুদীপ একাই পড়ে পরীক্ষা দিতে যায় । নতুন বইয়ের বদলে পুরোনো বই পড়ে দিব্যি ভালো ফল করে সুদীপ । সকলের মানিব্যাগে টিফিন খাওয়ার পয়সা থাকলে ছোটো সুদীপের তখন পকেট গড়ের মাঠ। স্কুল বাড়ী এসেও কপালে জোটে না দুমুঠো ভাত। মাথার ওপর সম্বল বলতে শুধুমাত্র ত্রিপল ঘেরা চারকোনা সেই বাড়ি। আবাস যোজনায় নাম লেখালেও কোনো সুবিধা পাননি তারা । বর্ষা হলেই ডুবে যায় বাড়ী, বর্ষার সময় ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটে তাদের । বাবা মায়ের কষ্ট দূর করতে ছোটো সুদীপ চালায় কঠোর পরিশ্রম। ত্রিপলের ঘর থেকেই বুনতে শুরু করে তার স্বপ্নের জাল । প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় তারই গ্রামের বিদ্যালয় থেকে। মেধাবী ছাত্র হওয়ার দরুন মাধ্যমিকে ভালো ফল করে বিজ্ঞান বিভাগের পড়াশোনা শুরু করেন । পূর্ব চিলকা লালচাঁদ হাই স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিকে মোটামুটি ভালো ফল করে সরকারি কলেজে পলিটেকনিকের সুযোগ পেয়ে যায়। তারপর সেখান থেকে কলকাতার একটি বেসরকারি কলেজ থেকে বি-টেক। তার দীর্ঘদিনের অক্লান্ত পরিশ্রম শেষমেষ সফল হয়,,,,,,,,, এরপর সুদীপ সুযোগ পান আইআইটি গুয়াহাটিতে এম-টেক পড়ার। স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপে পা রাখেন সুদীপ। এখন সুদীপ আইআইটি গুয়াহাটিতে এম-টেকের ছাত্র। যদিও তার কৃতি এখানেই থেমে নেই এম-টেক পড়াকালীন এই অভাবী ঘরের ছেলের সুযোগ আসে দুটি বড় বড় জায়গায়। তার মধ্যে অন্যতম হলো , ডিআরডিওর মত বড়ো সংস্থায় কাজ করার সুযোগ পান তিনি। এমনকী জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপেও সুযোগ পেয়ে যান সুদীপ ।
যদিও তার এই সাফল্যের পিছনে তার বাবা মায়ের কৃতিত্ব কম কিছু নয়। এমনকি তার বান্ধবী এষা ভৌমিক এবং তার দুই দিদি আর জামাই বাবুর কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য পেয়ে অভাবী ঘরের ছেলে আজ বাংলা কাঁপাছে। অভাব বা প্রতিকূলতা স্বপ্নের জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না তা আরো একবার প্রমাণ করে দিলেন সুদীপ কুমার মাইতি। সুদীপের এই কৃতিত্বে গর্বিত তার পরিবার, শুধু তাই নয় নিজের গ্রামেও তার জয় জয়কার। এখনো স্বপ্ন অনেক বাকী সুদীপের পূরণ করার , সেই লক্ষ্যেই গুটি গুটি পায়ে পৌঁছে যাচ্ছেন তিনি ।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *