গোটা ষষ্ঠী

সরস্বতী পুজোর পরের দিন শীতল ষষ্ঠী পালন করা হয় কেন জানেন? একে কেন গোটা ষষ্ঠী বলা হয় জানেন? কখনও ভেবে দেখেছেন গোটা ষষ্ঠীতে গোটা সবজিই কেন খাওয়া হয়? বাঙালিদের গোটা সিদ্ধ খাওয়ার পিছনে রয়েছে কোন প্রচলিত বিশ্বাস? গোটা সিদ্ধ খাওয়ার পিছনে রয়েছে কোন বৈজ্ঞানিক কারণ? কি বলছেন বৈজ্ঞানিরা? জানুন এই অবাক করা সত্যি!

উৎসব প্রিয় বাঙালির বারো মাসে ১৩ পার্বণ! তাই প্রায় প্রতিমাসেই নানান উৎসবের আনাগোনা লেগই থাকে। আর প্রত্যেক বাঙালি বাড়িতেই উৎসব মানেই তার সাথে খাওয়া-দাওয়াটা কিন্তু মাস্ট। প্রত্যেক বছর মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে গোটা বাঙালি ধুমধাম করে বাগদেবী সরস্বতীর আরাধনায় মেতে ওঠেন। এবছর সরস্বতী পুজো পড়েছে ১৪ ই ফ্রেব্রুয়ারি।

আর ঠিক তারপরের দিনই  অর্থাৎ ১৫ ফ্রেব্রুয়ারি বাংলার প্রত্যেক ঘরে ঘরে পালন করা হবে  শীতল ষষ্ঠী বা গোটা ষষ্ঠী। এই বিশেষ দিনে সন্তানের মঙ্গল কামনায় ব্রত পালন করেন বাড়ির মায়েরা। প্রচলিত লোকাচার অনুযায়ী এই বিশেষ দিনে শিল-নোড়াকে বিশ্রাম দেওয়া হয়। তাই এই দিনে উনুন জ্বালানোর  নিয়ম নেই। শীতল ষষ্ঠীর দিন গোটা বাংলা জুড়ে পালন করা হয় অরন্ধন।

গোটা ষষ্ঠীর দিন ৬ রকমের ৬-টা গোটা সবজি সেদ্ধ করে খাওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী সরস্বতীপুজোর  দিন রান্না করে পরের দিনেই খাওয়া হয় এই গোটা সেদ্ধ। যেহেতু গোটা সবজি রান্না করা হয় তাই এর নাম গোটা ষষ্ঠী। তবে শুধু পুরনো লোকাচারই নয় এই গোটা সিদ্ধ খাওয়ার পিছনে রয়েছে একটি বৈজ্ঞানিক কারণ-ও। সরস্বতী পুজোর সময় শীতকাল প্রায় শেষ হয়ে আসে।

আর এই সিজন চেঞ্জের সময়টাই শরীর খারাপের জন্য একেবারে আদর্শ। এই সময় চিকেন পক্সের  মতো বিভিন্ন ধরনের রোগেও  ভোগেন অনেকে। তাই শরীর ঠান্ডা রাখতে গোটা সেদ্ধ খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী। চিকিৎসকরাও  বলেন এই গোটা সিদ্ধ ‘কমফর্ট ফুড।’  কিন্তু প্রশ্ন হল কেন ৬ রকমের ৬’টা  সবজিই খাওয়া হয়? আসলে যেহেতু ষষ্ঠীর দিন, তাই প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ৬’টা করেই ৬ রকমের মরসুমি সবজি একসাথে রান্না করে খাওয়ার নিয়ম রয়েছে।

তবে এখনকার ব্যস্ত জীবনে কাজের চাপে অনেকটাই ফিকে হয়েছে উৎসবের মেজাজ। শিথিল হয়েছে পুরোনো নিয়মরীতি। তবে শহরাঞ্চলে এই নিয়ম সেভাবে চোখে না পড়লেও গ্রামাঞ্চল কিংবা শহরতলীতে এখনও কিন্তু এই গোটা ষষ্ঠী ব্যাপকভাবে প্রচলিত। তবে এখানে বলে রাখি, এই গোটা ষষ্ঠী মূলত পশ্চিমবঙ্গের আদি বাসিন্দাদের জন্যই। অর্থাৎ এদেশীয়রাই এই নিয়ম পালন করেন। তাই এটি ওপার বাংলার মানুষদের নিয়ম নয় মোটেই।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *