বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর ফ্যাশন ডিজাইনার কে? তাঁর শাড়ির নকশা তৈরি করেন কারা? এই শাড়ি কোথা থেকে কেনেন তিনি? মুখ্যমন্ত্রীর শাড়ির দামই বা কত? কোথায় পাওয়া যায় মুখ্যমন্ত্রীর এই শাড়ি? মুখ্যমন্ত্রী হয়েও কেন সাদামাটা তাঁতের শাড়িই পড়েন মুখ্যমন্ত্রী?
দুধ সাদা শাড়ি আর নীল রঙের সরু পাড় এটাই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চির চেনা রূপ। রাজনীতির আঙিনায় আসার পর থেকেই এটাই তৃণমূল সুপ্রিমোর স্টাইল স্টেটমেন্ট। তাই বিদেশ সফর হোক কিংবা মঞ্চ থেকে বক্তৃতা রাখার সময় অথবা কালীঘাট নিজের বাড়িতে সব সময় এই শাড়িতেই দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে। কিন্তু সকলেই জানতে চান মুখ্যমন্ত্রীর শাড়ির ডিজাইনার কে? কোথায় পাওয়া যায় মুখ্যমন্ত্রীর এই শাড়ি? উঠে আসে এমনই নানান প্রশ্ন। সব মিলিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর শাড়ি নিয়ে আমজনতার কৌতূহল রয়েছে সীমাহীন!
সম্প্রতি বিরোধী শিবিরের পক্ষ থেকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার প্রশ্ন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী যে শাড়ি পরেন, তার টাকা কোথা থেকে আসে? আয়ের উৎস নিয়ে কটাক্ষ কানে আসতেই শান্তিপুরের প্রশাসনিক সভা থেকেই মমতা বন্দোপাধ্যায় জানালেন তিনি কোন ‘ব্র্যান্ডে’র শাড়ি পরেন, এমনকি তাঁর শাড়ির ডিজাইনার কে? জানলে অবাক হবেন কোনো নামি দোকান কিংবা কোনো সেলেব ডিজাইনার নয় নয় মুখ্যমন্ত্রীর শাড়ি আসে কৃষ্ণনগর, শান্তিপুর,ফুলিয়া,নবদ্বীপ,মুর্শিদাবাদ, কিংবা রানাঘাটের দোকান থেকে। আর মুখ্যমন্ত্রী নিজে হাতে ডিজাইন করে দেন সেই শাড়ি। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘আমি নিজে হাতে শাড়ি ডিজাইন করে, ছবি এঁকে দিই। তাঁতিরা বুনে দেন।’
তাঁতের শাড়ি মানেই বাংলার পুরনো ঐতিহ্য। যার সাথে মিশে রয়েছে বাংলার গন্ধ। এদিন নদিয়ার শান্তিপুর, ফুলিয়ার তাঁতশিল্প নিয়ে কথা বলতে গিয়েই এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি গর্বিত নদিয়ার তাঁত শিল্পীদের জন্য। আমি যত শাড়ি পরি সব নদিয়ার। আমি নিজের হাতে এঁকে ডিজাইন করে দিই। তাঁতিরা আমাকে শাড়িগুলো বুনে দেয়। কখনও ধনেখালি, কখনও নদিয়ার শাড়ি পরি। এর কোনও তুলনাই নেই।’
কারিগররা নিজেদের মনের মতো করে মুখ্যমন্ত্রীরএই ‘সিগনেচার শাড়ি’। তবে বাংলার মুখ্যন্ত্রীর শাড়ি বলে কথা! তাই এই শাড়ি মোটেই যেমন তেমন শাড়ি নয়! মুখ্যমন্ত্রীর জন্য তৈরী এই স্পেশাল শাড়ি খাঁটি তন্তু আর খাঁটি সুতো দিয়ে তৈরি হয়। মুখ্যমন্ত্রীর ধড়বে সাদা শাড়িতে কোনো কাজ না থাকলেও পাড়ে হালকা নকশা থাকে আর আঁচলে থাকে ডোরা কাটা নীল-সাদা দাগ। মুখ্যমন্ত্রীর নীল সাদা শাড়িতে কোনো নকশা থাকে না। শাড়ির মধ্যে কোনো ডিজাইন না-পসন্দ তাঁর। তাই মাঝেমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর শাড়ির পাড়ের রঙে বদল আসলেও শাড়ির সাদা রঙ কিন্তু অপরিবর্তিত থাকে। এই শাড়িগুলি বাজার চলতি আর পাঁচটা সাধারণ তাঁতের শাড়ির মতো নয়। তাই মুখ্যমন্ত্রীর এই অথেন্টিক শাড়ির দামও অনেক বেশি হয়।
কিন্তু প্রশ্ন হল এত শাড়ি থাকতে মুখ্যমন্ত্রী তাঁতের শাড়িই কেন পরেন? এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন তিনি মনে করেন তাঁত বাংলার ঐতিহ্যবাহী শিল্প। তাই এই শিল্পকে তুলে ধরার জন্য মুখ্যমন্ত্রী নিজেও সারাক্ষণ এই তাঁতে বোনা শাড়িই পরে থাকেন।
বাংলার তাঁত শিল্পকে সকলের সামনে তুলে ধরতেই এদিনের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী জানান তিনি ক্ষমতায় আসার পর, মাত্র ৬ জন মসলিন তাঁতি বেঁচে ছিলেন। তাই সেই ৬ জনকে দিয়েই ৬০ জনের ট্রেনিং দিইয়ে নিয়েছিলেন তিনি। তারপরেই তৈরী হয় মসলিন তীর্থ। এখন সেই মসলিন তীর্থই সকলের মন জয় করে নিয়েছে।
Leave a Reply