অল ইন্ডিয়া প্রেগন্যান্ট জব

বেকার যুবকদের জন্য বাজারে এল নতুন চাকরি! অদ্ভুত এই পেশায় সুন্দরী মহিলাদের প্রেগন্যান্ট করলেই মিলবে লাখ লাখ টাকা! নিঃসন্তান মহিলাদের মা বানাতে পারলেই মোটা টাকার হাতছানি! ব্যর্থ হলেও রয়েছে বিরাট অঙ্কের  সান্ত্বনা পুরস্কার! অভিনব এই চাকরির নাম জানেন?কারা পাবেন এই সুযোগ?

এই বেকারত্বের বাজারে দেশের পুরুষদের জন্য এল এক নতুন চাকরি। লাখ লাখ টাকার হাতছানির পাশাপাশি কাজটাও কিন্তু একেবারে অভিনব। সুন্দরী মহিলাদের প্রেগন্যান্ট করার এই চাকরির নাম দেওয়া হয়েছে ‘অল ইন্ডিয়া প্রেগন্যান্ট জব।’ সন্তানহীন মহিলাদের মাতৃত্বের স্বাদ দিতে পারলেই সফল পুরুষদের জন্য রয়েছে প্রায় ১৩ লক্ষ  টাকা রোজগারের হাতছানি। তাই আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টি কোন মহান কাজ বলেই মনে হতে পারে।

বেশ কিছুদিন  ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সুন্দরী মহিলাদের ছবি দিয়ে একটি বিজ্ঞাপন ঘোরা ফেরা করছিল। সেই বিজ্ঞাপনে দেওয়া হয় এক লোভনীয় প্রস্তাব। বলা হয়,সন্তানহীন নারীদের মা বানাতে পারলেই হাতে আসবে কড়কড়ে ১৩ লক্ষ টাকা। অবশ্য এই কাজে অসফল হলেও লস হবে না খুব একটা। টাকার অঙ্ক কমবে ঠিকই তবে সে ক্ষেত্রে পাওয়া যাবে মোট ৫ লক্ষ টাকার সান্ত্বনা পুরস্কার।

 

ব্যাস এখানেই শেষ! এইভাবেই এই ফাঁদে পা দিয়েই ফতুর হয়েছেন অসংখ্য যুবক। পুরাণ মতে রহস্যময়ী সুন্দরী অপ্সরাদের ছলনা থেকে রেহাই পাননি স্বয়ং স্বর্গের দেবতারাও! সেখানে এই ধরাধামের রক্ত মাংসের যুবকরা তো কোন ছাড়! তাই এবার দেশের  যুবকেদের  একই সাথে অর্থ উপার্জন এবং সুন্দরী মহিলাদের প্রেগন্যান্ট করার লোভ দেখিয়েই পাতা হয়েছে এক বিরাট প্রতারণার ফাঁদ।

তাই লোভ সংবরণ করতে না পারলেই ব্যাস যে কোনো মুহূর্তেই বোকা বোনে যেতে পারেন আপনিও! তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় সুন্দরী মহিলাদের প্রেগন্যান্ট করে টাকা উপাজর্নের বিজ্ঞাপন দেখে অনেকেই হয়তো বিজ্ঞাপনে দেওয়া ওয়েবসাইটের লিংকে ক্লিক করে কিংবা মোবাইল নম্বরে ফোন করে বিস্তারিত জানতে  চাইবেন।

তখনই হয়তো মোবাইলের ওপার থেকে অত্যন্ত পেশাদার স্টাইলে কেউ কথা বলবেন। তখন তারা নিজেদের কথার জ্বালে ফাঁসাতেই বলবেন তাদের ক্লায়েন্টরা বেশিরভাগই বড়লোক। এমনকি নিঃসন্তান মায়েদের কথা বলে তারা জনাবে ভারতে এমন অনেক অভিজাত পরিবারের  মহিলা আছেন যাঁরা অনেকে চেষ্টা করেও মা হতে পারছেন না। এইভাবে  নিজেদের  মহৎ উদ্দেশ্যের অজুহাত দিয়ে তাদের প্রেগন্যান্ট করার প্রস্তাব দেওয়া হবে। এই কাজে সফল হতে পারলেই হাতে তুলে দেওয়া হবে নগদ ১৩ লক্ষ টাকা।

 

এই ভাবে ফোনের ওপারে থাকা ব্যক্তির সমস্ত শর্তে রাজি হলেই দেওয়া হয় স্ট্যাম্প পেপারে লেখা খুবই লিগ্যাল দেখতে একটা কন্ট্রাক্ট পেপার। যা খালি চোখে দেখে আসল নকল ফারাক বোঝার উপায় থাকে না এতটুকুও। কিন্তু বাবা হওয়ার এই চাকরি পেতে গেলে করতে হবে একটা ছোট্ট রেজিস্ট্রেশন। তবে প্রাথমিকভাবে এই রেজিস্ট্রেশনের জন্য দিতে হবে কম করে ১০০০ টাকা ১২০০ টাকা। কিন্তু তখন মোটা টাকা পাওয়ার লোভ আর সুন্দরী মহিলাদের শয্যা সঙ্গী হিসাবে পাওয়ার স্বপ্নের কাছে এই টাকা নেহাত তুচ্ছ।

কিন্তু এখানেই শেষ নয়, এর পরের ধাপে স্ক্যামাররা মেডিকেল টেস্টের জন্য সিমেন এবং ব্লাড স্যাম্পেল চেয়ে পাঠায়। আর জন্য ভুয়ো ঠিকানাও পাঠানো হয়। কিন্তু লাখ পতি হওয়ার লোভে সেই ঠিকানা যাচাই করার কথাও ভেবে দেখে না কেউ। তাই  কিছু না বুঝেই স্ক্যামারদের দেওয়া ঠিকানায় ব্ল্যাড স্যাম্পেল আর সিমেন পাঠিয়েও দেন যুবকরা। আর তারপরেই ফোন আসে এই সমস্ত টেস্ট করার জন্য প্রায় ৫ হাজার টাকা খরচ হবে। তখন এই টাকা দিতেও দু’বার ভাবেন না কেউ।

স্ক্যামের এই দ্বিতীয় ধাপ পেরনোর পরেই শুরু হয় আসল খেলা। কিছুদিন চুপচাপ থাকার পর ওই স্ক্যামাররা নিজে থেকেই ফোন করে জানায় আপনার কিছুই পজিটিভ আছে। এইভাবে আশ্বাস দেওয়ার পরেই বেশ কিছু সুন্দরী মহিলাদের ছবি পাঠিয়ে বলা হয় আপনি ঠিক করুন আপনি কাকে প্রেগন্যান্ট করতে চান! এরপর বলা হবে আপনার পছন্দ করা মহিলা নির্দিষ্ট কোনো একটা হোটেলে থাকবেন। আর সেই হোটেলের ভাড়া দিতে হবে আপনাকেই।

 

এই ভাবেই একেবারে শেষ পর্যায়ে হোটেলের অ্যাডভান্স বুকিং বাবদ নেওয়া হয় প্রায় ১৫ হাজার টাকা। আর এই ভাবেই চুপিসারে স্ক্যামাররা যুবকদের পকেট থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। আর গোটা বিষয়টা সম্পর্কে নিজে যখন বুঝতে পারবেন ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যাবে। কারণ ওই নির্দিষ্ট দিনে যখন যুবকটি ওই নির্দিষ্ট হোটেলে গিয়ে পৌঁছবেন তখন তিনি সেখানে গিয়ে জানতে পারবেন আস লেতার  নামে কোনো বুকিং -ই নেই। কোনো সুন্দরী মহিলাও তার অপেক্ষায় নেই! তাই তখন নিজেই নিজের কপাল চাপড়ানো ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।

কারণ এটি এমনই একটি বিষয় যা সম্পর্কে লজ্জায় কিছুই  বলতে পারবে না কেউ। কারণ পুলিশে কমপ্লেন করলে লোক জানাজানি তো হবেই, বিশেষ করে লজ্জায় অনেকেই মুখ দেখতে পারবে না নিজের বাড়িতেই। তাই অনলাইন এই ব্যবসা বেশ রমরমিয়েই চলছিল। কিন্তু  সাহস করে কয়েকজন যুবক এই বিরাট স্ক্যাম সম্পর্কে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিল। তারপরেই তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে  বিহারের নওয়াদা এলাকায় এই চক্র চালাত  প্রায় ২০ জন যুবক। তাদের মধ্যে আপাতত আট জনকে গ্রেফতার করা হলেও এখনও পর্যন্ত  মূল অভিযুক্তের সন্ধান করছে পুলিশ।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *