ভারত মাতার পরমবীর সন্তান নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু। সদ্য গিয়েছে তাঁর ১২৬ তম জন্মদিন। এই দিনটিকে বীর দিবস হিসাবে উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই বিশেষ দিনে সারা দেশ জুড়ে ধুমধাম করেচলেছে নেতাজি বন্দনা। বলা হয় নেতাজির মৃত্যু নেই, তাই আমরা সবাই শুধু তাঁর জন্ম তারিখ টাই জানি। এইভাবেই বছরের পর বছর ধরে তিনি তাঁর কাজের মধ্যে দিয়েই জীবিত থাকবেন কোটি কোটি ভারতবাসীর হৃদয়ে। ভারতীয়দের কাছে নেতাজি মহান বীর তো বটেই সেইসাথে ঈশ্বরের থেকে কোনো অংশে কম নন। তাই এদেশে এমনও কিছু মন্দির আছে যেখানে কোনো ঠাকুর দেবতা নয় বরং পুজো করা হয় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর।
ভারতের মন্দিরের নগর বারাণসীর লামহি এলাকার ইন্দ্রেশ নগরে রয়েছে এমনই এক নেতাজি মন্দির। বিখ্যাত এই মন্দিরে সেখানে জাতীয় দেবতা হিসাবে পুজো করা হয় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর। এই মন্দিরের সিঁড়ি লাল রঙের, যা বিপ্লবের প্রতীক, আর মঞ্চটি সাদা রঙের, যা শান্তির প্রতীক।
এছাড়াও নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর যে ছয় ফুট মূর্তিটি রয়েছে তা কালো রঙের, এই রঙ শক্তির প্রতীক। আর উপরে রয়েছে একটি সোনালি রঙের ছাতা, যা সমৃদ্ধির প্রতীক। এইভাবে সমস্ত রঙ মিলিয়েই নেতাজি মন্দির এক বিশেষ বার্তা বহন করে। তা হল ‘বিপ্লবের পথ অনুসরণ করে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। শান্তির ভিত্তিতে ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হয়, যা সমৃদ্ধি আনে।’
২০২০ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে দেখতে দেখতে ৪ বছর হয়ে গেল এই মন্দিরের বয়স। চলতি বছরে নেতাজির ১২৬ তম জন্মদিন উপলক্ষে এই মন্দিরে ২০ জানুয়ারি থেকে পাঁচ দিনব্যাপী সুভাষ মহোৎসব পালন করা হয়েছে। দেশ-বিদেশ বহু নেতাজি ভক্তরা এই মন্দিরে আসেন তাঁর দর্শন পাওয়ার জন্য। কাশীতে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুকে মহান বীর এবং দেবতার মর্যাদা দেওয়া হয়।
প্রতিদিন সকাল সাতটায় ভারত মাতার প্রার্থনা ও আরতির মাধ্যমেই খোলা হয় এই মন্দিরের দ্বার। আর প্রত্যেকদিন সন্ধ্যায় আজাদ হিন্দ সরকারের জাতীয় সংগীত ‘সুখ ও শান্তির আশীর্বাদ বর্ষিত হোক’ গেয়ে স্যালুট দেওয়া হয়। তারপর হয় মহা আরতি। সব শেষে সালাম দেওয়ার পর দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় মন্দিরের।
জানলে অবাক হবেন, সুভাষ মন্দিরের পুরোহিত একজন মেয়ে। এই মন্দির ঐক্য-সম্প্রিতির প্রতীক। তাই এখানে কোনো ধরনের বৈষম্যের স্থান নেই। নেতাজি মন্দিরে এসে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে পারেন যে কোনো ধর্ম বা বর্ণের মানুষ।
তবে শুধু এই দেব ভূমিতেই নয় বাংলাতেও রয়েছে এমনই আর এক নেতাজি মন্দির। জলপাইগুড়ি মাশকলাইবাড়ি এলাকায় রয়েছে একটি হনুমান মন্দির। এখানেই বিগত ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন দেবদেবীর সাথে পূজিত হন নেতাজি। স্থানীয় মানুষদের মধ্যে প্রচলিত কাহিনী থেকে জানা যায়, ১৯৬৬ সাল নাগাদ জলপাইগুড়ি মাশকলাইবাড়ি শ্মশান সংলগ্ন এলাকায় এক সাধু এসেছিলেন। তাঁর হাত ধরেই এই হনুমান মন্দির স্থাপিত হয়েছিল। অন্যান্য দেবদেবীর সঙ্গে এই মন্দিরে তিনিই নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর মর্মর মূর্তি স্থাপন করে সারা বছর পুজো করতেন। সেই নিয়ম অটুট রয়েছে আজও। মন্দির নির্মাণের পর পাশেই ছাপড়া ঘর করে থাকতেন ওই সাধু। দিনের মধ্যে বেশিরভাগ সময় এই মন্দিরে ধ্যান করতেন তিনি।
নেতাজির প্রতি শ্রদ্ধা থেকেই প্রতিদিন স্থানীয় মানুষরা এসেও পুজো দিয়ে যান এই মন্দিরে। ফি বছর ২৩ জানুয়ারী নেতাজির জন্মদিন উপলক্ষ্যে পুজো দেওয়ার জন্য প্রচুর ভক্ত সমাগম হয় এই মন্দিরে।
Leave a Reply