ঘুম

আপনি কি কম ঘুমাচ্ছেন? ঘুম কীভাবে বিভিন্ন রোগ-প্রতিরোধ করে জানেন? জানেন  ঘুমের সাথে মানুষের আয়ুর কি সম্পর্ক? প্রতিদিন কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত জানেন? ঘুম কেন এত জরুরি? জানেন ঘুম কম হলে শরীরের ওপর কি কি প্রভাব পড়তে পারে?

শরীর-স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য আমাদের সকলেরই ঘুম অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এ কথা একেবারে প্রমাণিত সত্য। চিকিৎসা বিজ্ঞানে বলা হয় রাতে প্রত্যেকেরই কম করে  ৮  ঘন্টা ঘুমানো খুব জরুরি।  কিন্তু এখনকার রোজকার ইঁদুর দৌড়ের জীবনে কর্মব্যস্ত জীবনে সাময়িক অবসর হইতে নানা কারণে ঘুমের ব্যাঘাত হয় আমাদের তাই এ ক্ষেত্রে প্রথমেই জানতে হবে সত্যিই আমাদের ঘুম কম হচ্ছে কিনা তা জানার জন্য রয়েছে একটি সহজ পরীক্ষা। যা আপনি নিজেই করতে পারবেন নিজের উপর তার জন্য দুপুরের যেকোনো একটা সময় বিছানায় শুয়ে পড়ুন। ডান হাতটা বিছানার বাইরে ছড়িয়ে দিয়ে হাতে রাখুন একটা ধাতব চামচ, তার ঠিক নীচেই মেঝেতে রাখুন একটি ধাতব ট্রে।

এবার ঘুমানোর চেষ্টা করুন। দেখবেন একটা সময় নিজের অজান্তেই আপনি ঘুমিয়ে পড়বেন আর আপনার হাতের চামচ টা সঙ্গে সঙ্গে পড়বে নীচের ট্রেতে। এবার ঘড়ি দেখুন, যদি আপনার ঘুমাতে ১৫ মিনিট বা তার বেশি সময় লাগে তাহলে বুঝতে হবে আপনার ঘুমের পরিমাণ ঠিকই আছে। আর যদি দেখেন আপনার ঘুমাতে ১০ মিনিট সময় লেগেছে তাহলে বুঝতে হবে আপনি ঘুম বঞ্চিত । আর যদি আপনার ঘুমাতে আপনি পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েন তাহলে বুঝতে হবে আপনি অনেক বেশি ঘুম বঞ্চিত।

এই ঘুম বঞ্চিত মানুষের তালিকায় একা নন কেউই। কারণ আসলে তালিকাটা অনেক লম্বা। আসলে ঘুম আমাদের জীবনের খুবই সাধারণ একটি  অভ্যাস। কিন্তু  এই মানব জীবনে গত ২০০ বছরে ঘটে গিয়েছে বেশ  কিছু অভুতপূর্ব ঘটনা। শিল্প বিপ্লবের সাথেই সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অসাধারণ সব আবিষ্কারের সাথে সাথে এসেছে বৈদ্যুতিক বাতি।

তাই এখনকার দিনে বিজ্ঞান আর প্রযুক্তি হাত ধরাধরি করেই রাতের অন্ধকারকেও আলোয় ভরিয়ে তুলতে পারে। আর এইভাবেই মানুষ নিজের হাতেই নিজের চরম সর্বনাশ ডেকে আনল। এইভাবেই  প্রথম যে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় সে ব্যাঘাত ঘটাল তা হল ঘুম। আসলে আমাদের দেহ থেকে যখন মেলাটনিন নামের এক বিশেষ হরমোন নিঃসরিত হয় তখনই দু-চোখের পাতায় এসে ভিড় করে ঘুম। আর  এই হরমোন নিঃসরণের জন্য দরকার অন্ধকার। কিন্তু এখন ঘুমের জন্য রাতের অন্ধকার টুকুও মেলা দুষ্কর।

আর এই ডিজিটাইজেশনের যুগে বিগত চার দশকে এরসাথেই যুক্ত হয়েছে মোবাইল ফোন,ল্যাপটপ,ট্যাব,প্যাড কিংবা কম্পিউটারের মতো হরেকরকমের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস। যার স্ক্রিন থেকে ক্রমাগত বিচ্ছুরিত হতে থাকে ঘুমের চরম শত্রু অর্থাৎ  ব্লু লাইট বা নীল আলো। সেইসাথে সোশ্যাল মিডিয়া, বিভিন্ন ধরনের ভিডিও আর অনলাইন গেম তো আছেই। যার ফলে গত ৫০ বছরে মানবজাতি তার রাতের ঘুম থেকে দেড় ঘন্টা হারিয়ে ফেলেছে। আর এইভাবে মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে নিজেরই।

রোগব্যাধি নিয়ে মানুষের ওপর করা বিভিন্ন গবেষণা বলছে যে যত বেশি ঘুমাবে তার আয়ু তত বেশি, তেমনি  ঘুম কম হলে জীবনের আয়ুও  কমে আসবে। গোটা পৃথিবী জুড়ে ১৫৩ টি গবেষণা পর্যালোচনা করে জানা গিয়েছে কম ঘুমের সাথে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ,হৃদরোগ এবং মোটা হওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষের ওপর এই সমস্ত গবেষণা করা হয়েছে।

টানা তিন মাস ধরে কেউ যদি সঠিক মাত্রায় না ঘুমান তাহলে অকাল মৃত্যু,হার্ট অ্যাটাক,কিংবা স্ট্রোকের আশংকা দশ গুণ বেড়ে যায়। কমে যায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, বেশি ঠান্ডা লাগে, এমনকি টিকার কার্যকারিতাও কমে যায়। মানুষ যখন ঘুমায় মস্তিস্ক তখন স্মৃতি ও তথ্য সংরক্ষণ করে। ক্ষতিকারক উপাদান গুলো সরিয়ে ফেলে,যাতে ঘুম থেকে ওঠার পর শরীর ঠিক মতো কাজ করতে পারে।

গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে ঘুম কম হলে মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটে এমনকি শর্ট টার্ম মেমোরি লস হয়। দেখা দেয় প্যানিক অ্যাটাক বা আতঙ্কিত হওয়া, ফোবিয়া বা ভীতি, এবং ফ্যান্টম পেইন বা অকারণ অশ্বস্তির মতো সমস্যা। যা ডিপ্রেশন,দুশ্চিন্তা এমনকি আত্মহত্যা করার ইচ্ছাও তৈরী করতে পারে।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *