লোকো পাইলট শৌচাগার

দূরপাল্লার ট্রেনে সফরকালে চলন্ত ট্রেনেই শৌচাগারে যাওয়ার প্রয়োজন হয়ে থাকে কমবেশি সকল যাত্রীদেরই।
কিন্তু ইঞ্জিনে তো কোনও শৌচাগার থাকে না। তাহলে লোকো পাইলটরা শৌচকর্ম সারতে কোথায় যান? কখনও কি ভেবে দেখেছেন একথা? এই পরিস্থিতিতে ট্রেন চালক বা লোকো পাইলটরা কী করেন? আসুন জানা যাক এই সমস্ত  প্রশ্নের উত্তর।

ভারতীয় রেল আমাদের দেশের লাইফ লাইন। এই মুহূর্তে দেশের প্রতিটি কোণায় কোণায়  শিরা ধমনীর মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ভারতীয় রেল নেটওয়ার্ক। পরাধীন ভারতে ইংরেজদের হাত ধরেই প্রথম সফর শুরু হয়েছিল ভারতীয় রেলের।  যদিও বিগত কয়েক দশকে আমুল বদলে গিয়েছে ভারতীয় রেলের খোলনলচে। তাই এখন শুধু লোকাল কিংবা দূরপাল্লার ট্রেনই নয় যোগ হয়েছে বুলেট ট্রেনের মত অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন রেল পরিষেবাও।

যাত্রীদের সফরকে আরও বেশি আরামদায়ক এবং নিরাপদ করে তুলতে প্রতি নিয়ত উন্নত মানের নিত্য নতুন পরিষেবা আনছে ভারতীয় রেল। তবে প্রতিটি  ট্রেনের সফর কিন্তু নির্ভর করে ট্রেনের চালক অর্থাৎ লোকো পাইলটদের উপর। তবে লোক পাইলট হওয়া কিন্তু একেবারেই মুখের কথা নয়। বিভিন্ন পেশাগত প্রশিক্ষণ নেওয়ার পাশাপাশিই তাদের যেতে হয় বহু কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে  দিয়ে। এক্ষেত্রে খুবই ছোট্ট একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে।

প্রসঙ্গত দূরপাল্লার ট্রেনে বেশিরভাগ সময়েই সফর  লম্বা হয়ে থাকে যাত্রীদের। তাই দীর্ঘক্ষণের এই সফরে যাত্রীরা মাঝে মধ্যেই ট্রেনের মধ্যে থাকা শৌচাগারই  ব্যবহার করে থাকেন।  কিন্তু কেউ কি  কখনও ভেবে দেখেছেন ট্রেন চালাতে চালাতে হঠাৎ করেই যদি কোনো  চালকের  শৌচালয় যাওয়ার  প্রয়োজন হয়? তাহলে তারা কি করেন? ট্রেন তো চাইলেই মাঝপথে থামানো যায় না! তাছাড়া  ইঞ্জিনের কাছেও  কোন বাথরুম থাকে না! তাহলে  এই পরিস্থিতি  থেকে নিস্তার পেতে কি করেন লোকো পাইলটরা?

আসলে যখনই কোনো ট্রেন স্টেশন থেকে রওনা দেয়, তখনই লোকো পাইলটরা আগে থেকে শৌচকর্ম সেরে নেন। যার ফলে ২-৩ ঘণ্টার জন্য তাঁদের আর শৌচাগার ব্যবহার করার দরকার হয় না। আগে থেকে লোকো পাইলটদের কাছেও এই নির্দেশ চলে যায়। যার ফলে ট্রেন চলাচলেও আর কোনও সমস্যা হয় না।

তাছাড়া অনেক সময় লোকো পাইলটরা স্টেশনেই শৌচকর্ম সেরে নেন। কিন্তু ট্রেন চালানোর সময়ই যদি শৌচাগার যাওয়ার প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টা কন্ট্রোল রুমে জানাতে হয়। সেখান থেকেই পরবর্তী স্টেশনে ট্রেন থামানোর অনুমতি পাওয়া যায়। এইভাবে অনুমতি পাওয়ার পর পরবর্তী স্টেশনে নেমে শৌচাগার ব্যবহার করেন লোকো পাইলট।

তবে একথাও ঠিক যে, এমন পরিস্থিতি সচরাচর আসে না। তাছাড়া এমনিতেই ১-২ ঘণ্টা অন্তর অন্তর এক-একটা স্টেশন চলে আসে। তাই স্টেশনে নেমে শৌচকর্ম সারতেও চালকের কোনো অসুবিধা হয় না। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হল রাজধানী কিংবা গরিব রথের মতো ট্রেনগুলি। এই ট্রেনগুলি দীর্ঘ সময় ধরে চলাচল করে।

এই ধরনের দীর্ঘ পথ অতিক্রমকারী ট্রেন গুলিতে সত্যিই সমস্যা হয়ে থাকে। তাছাড়া রাজধানী, গরিব রথ অথবা দুরন্ত-র মতো ট্রেনগুলি ছুটে চলে রাতভর। সেক্ষেত্রে লোকো পাইলটরা কন্ট্রোল রুমে খবর পাঠান। এরপর কন্ট্রোল রুম থেকে অনুমতি মিলতেই ট্র্যাকে কয়েক সেকেন্ডের জন্য ট্রেন দাঁড় করিয়ে শৌচকর্ম সেরে নেন লোকো পাইলটরা। তবে কন্ট্রোল রুম থেকে অনুমতি না আসা পর্যন্ত কিন্তু ট্রেন থামানো যায় না। শুধু মাত্র গ্রিন সিগন্যাল পাওয়ার পরেই ট্রেন থামানো যায়।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *