প্রতিদিন মদ খেলে কী হবে?

প্রতিদিন মদ খেলে কী হবে জানেন? সুরাপ্রেমীরা কি জানেন কতটা মদ খাওয়া সুরক্ষিত? ছেলে এবং মেয়েদের জন্য এই পরিমাণের পার্থক্য কত হওয়া উচিত জানেন? এই দাবির পিছনে রয়েছে কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা? প্রতিদিন মদ খেলে লিভারের ওপর কি কি প্রভাব পড়ছে জানেন? মদ্যপান লিভার ছাড়ার শরীরের আর কি ক্ষতি করে জানেন? ২ ঘন্টায় শেষ ৫ পেগ মদ! জানেন পরিণাম কি হতে পারে? অ্যালকোহল সেবন নিয়ে কি বলছে WHO অর্থাৎ World Health Organisation?

মদের নেশা সাংঘাতিক। কিন্তু ক্ষতির কথা জেনেও এই নেশা ছাড়ানো যায় না সহজে। তাছাড়া মদ্যপান নিয়ে এখন আমাদের বাঙালি সমাজও ঝেড়ে ফেলেছে পুরনো ট্যাবু। তাই শুধু শীতের মরসুমেই নয় প্রায় সারা বছর ধরেই বাড়ছে কথায় কথায় মদ্যপান করার প্রবণতা। তাই কেউ রোজ খান, কেউ আবার উৎসবে-অনুষ্ঠানে, কেউ আবার সুখে-দুঃখে বুঁদ হয়ে থাকেন এই মদের নেশায়। বিশেষ করে কমবয়সি ছেলেমেয়েরাও এখন আড্ডা হোক কিংবা রাতের পার্টি আসর জমাতে আকণ্ঠ মদ্য পান করেন। সমীক্ষা বলছে, বিশ্ব জুড়ে প্রতিদিন এই স্বাদে আসক্ত প্রায় এক লাখ কোটি মানুষ।

 

চিকিৎসকরা বলছেন এই কারণেই এখন কমবয়সী দের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা বাড়ছে। তাছাড়া এখন প্রায় ঘরে ঘরে ফ্যাটি লিভারের সমস্যা। অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনে লিভার সিরোসিস, অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার এমনকী অ্যাকিউট অ্যালকোহলিক হেপাটাইটিস রোগে আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েছে।

যদিও অনেক সুরাপ্রেমীদেরই বিশ্বাস এক বা দু পেগ মদ খেলে কোনও সমস্যা হয় না। কারও ক্ষেত্রে আবার পেগের কাউন্ট একটু বেশি। অনেকেই আবার রোজের বদলে সপ্তাহে এক বা দুদিন ৩ থেকে চার পেগ মদ খাওয়া স্বাভাবিক মনে করেন। যদিও এই দাবির কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখা নেই। তাই কতটা মদ খাওয়া সুরক্ষিত? তা নিয়ে রয়েছে বিরাট তর্ক বিতর্ক। সম্প্রতি এই নিয়ে একটি রিপোর্ট পেশ করেছে WHO অর্থাৎ World Health Organisation।

সেই রিপোর্টে উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের দাবি অ্যালকোহল স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক। ল্যানসেট পাবলিক হেলথ জার্নালে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, অ্যালকোহলের কোনও সুরক্ষা মাত্রা নেই। অর্থাৎ, পরিমাণ যাই হোক অ্যালকোহল মোটেই সুরক্ষিত নয়। এককথায় অ্যালকোহলই মানেই তা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক।

ড্রিঙ্কওয়্যার অনুযায়ী, প্রতিদিন ৪০ গ্রামের বেশি বা চার ইউনিটের বেশি অ্যালকোহল সেবন করা হলে ৯০ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রেই এআরএলডি বা অ্যালকোহলজনিত ফ্যাটি লিভার ডিজিজ হতে পারে। ওই সংগঠনের মতে, এই পরিমাণটা হল দুটি মাঝারি (১৭৫ মিলিলিটার) গ্লাসের ১২ শতাংশ এবিভি (অ্যালকোহল বাই ভলিউম) ওয়াইন অথবা রেগুলার স্ট্রেংথ বিয়ার (৪ শতাংশ এবিভি)-এর ২ পয়েন্ট কম।

প্রতিদিন মদ খেলে কী হবে জানেন?

প্রতিদিন মদ খেলে শরীরের ওপর তার যে প্রভাব পড়বে তা দেখে আঁতকে উঠেছেন চিকিৎসক-বিজ্ঞানীরা। ‘ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন’ মেডিক্যাল জার্নালে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট অ্যান্ড সার্জিকাল গ্যাসট্রোএন্টেরোলজি বিভাগের এক ডাক্তার জানিয়েছেন প্রতিদিন মদ খেলে ফ্যাটি লিভার থেকে লিভার সিরোসিস, বদহজম, পেটে ব্যথা, ঘন ঘন পেটের সমস্যা, প্যানক্রিয়াটাইটিস এমনকী বাড়ে মারণ রোগ ক্যানসারের ঝুঁকিও।

দু’ঘণ্টায় পাঁচ পেগ! এই অনুপাতে মদ খেলে মৃত্যুঘণ্টা বাজতে পারে যে কারও। মেয়েদের ক্ষেত্রে অনুপাতটা আরও কম, দু’ঘণ্টায় চার পেগ। রোজ প্রচুর পরিমাণে মদ্যপান করলে হার্টের পেশি দুর্বল হয়ে যায়। এছাড়াও বেড়ে যায় রক্তচাপ। বাড়ে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকিও।কেউ কেউ আবার বলেন, সীমিত পরিমাণে মদ খেলে নাকি রক্তে ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে, যা হার্টের পক্ষে ভাল। তবে এই মত বিতর্কিত।

গ্যাসট্রোএন্টেরোলজিস্টরা বলছেন, অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে, লিভারে মেদ জমতে থাকে। যা রোগের প্রাথমিক পর্যায়। ক্রমশ এই রোগ বিরাট আকার ধারণ করে। যার অন্তিম পরিণতি লিভার সিরোসিস।Alcohol Related Liver Disease বা এআরএলডি-র আরও একটা পর্যায় হল অ্যাকিউট অ্যালকোহলিক হেপাটাইটিস। জ্বালাপোড়ার মতো যন্ত্রণা হয় শরীরে। অনেক সময় হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমা বা লিভার ক্যানসারও দেখা দেয়।

লিভার মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়া পর্যন্ত এআরএলডি-র কোনও লক্ষণ প্রকাশ পায় না। আর এই কারণেই রোজকার স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট বা সিবিসি (CBC)-সহ প্রাথমিক সমস্ত স্ক্রিনিং টেস্ট করানো উচিত। এ-ছাড়াও লিভারে সমস্যা আছে কি না, তা দেখার জন্য লিভার এনজাইম টেস্ট-সহ লিভার ফাংশন টেস্ট, অ্যাবডমিনাল কম্পিউটেড টোমোগ্রাফি বা সিটি (CT) স্ক্যান, অ্যাবডমিনাল আল্ট্রাসাউন্ড এবং লিভার বায়োপ্সি করানো উচিত।

এআরএলডি-র উপসর্গগুলির মধ্যে অন্যতম হল অবসন্ন ভাব, ওজন কমে যাওয়া, খিদের অভাব, গা-বমি ভাব, বমি হওয়া ইত্যাদি। আবার অনেক সময় চোখ এবং ত্বকের রঙে হলদেটে ভাব, এমনকী গোড়ালি ফুলে যাওয়ার মতো লক্ষণও দেখা যায়। এ-ছাড়াও লিভার পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিভ্রান্তি, তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব এবং বমি ও মলের সঙ্গে রক্ত পড়ার মতো উপসর্গও দেখা যায়।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *