রাম মন্দির

লোহা-সিমেন্ট কিছুই তো নেই! তাহলে কি দিয়ে তৈরী হল রামমন্দির?  লোহার রড কিংবা সিমেন্ট ছাড়া বড় বড় বিল্ডিং তৈরী করার কথা ভাবাই যায় না! তাহলে এসব ছাড়াই  রাম মন্দির তৈরী করা হল কিভাবে জানেন? কেন একুশ শতকেও শুধুই পাথরে নির্মাণ করা হল এই মন্দির? কি বলছে বিজ্ঞান?

লোহা কিংবা সিমেন্ট ব্যবহার করা না হলেও আড়াই হাজার বছরেও কিচ্ছু হবে না মন্দিরের। বন্যা, ভূমিকম্প সহ যে কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়-ও টলাতে পারবে না এই মন্দিরকে। কিন্তু কিভাবে? রাম মন্দিরের গর্ভগৃহের কাজ শেষ হতেই সোমবার ২২ জানুয়ারি প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে রামলালার বিগ্রহে। তবে এখনও পর্যন্ত সম্পন্ন হয়নি মন্দির নির্মাণের কাজ।

মন্দির নির্মাণের কাজে শুধুমাত্র পাথরের ব্যবহার করা হয়েছে।  প্রতিটি পাথরের ব্লকে খাঁজ কেটে সেখানে বসানো হয়েছে অন্য পাথর। এই পাথর গুলির মাঝে কোনো সিমেন্ট-ও দেওয়া হয়নি। এটাই উত্তর ভারতের বিখ্যাত নাগারা শিল্প রীতি। তবে এই প্রথম নয় প্রাচীন ভারতের বহু মন্দিরই পাথর দিয়ে তৈরী করা হয়েছে। এই শিল্প শৈলীতেই খাজুরাহ মন্দির,সোমনাথ মন্দির কিংবা কোনারকের সূর্য মন্দিরের মতো আরও একাধিক মন্দির নির্মিত হয়েছে। এবার এই তালিকায় যোগ হল অযোধ্যার রামমন্দিরের নাম।

 

তবে সেগুলি তৈরী হয়েছিল শত শত বছর আগে। কিন্তু এই একুশ শতকে এসেও অত্যাধুনিক নির্মাণ প্রযুক্তি ছেড়ে কেন রামমন্দির নির্মাণে শুধুমাত্র পাথর ব্যবহার করা হয়েছে জানেন? জানলে অবাক হবেন এর পিছনে রয়েছে বিজ্ঞান। রামমন্দির নির্মাণে কেন শুধুমাত্র পাথর ব্যবহার করা হল? আসুন জানা যাক বিস্তারিত। রাম মন্দিরের নির্মাণে রয়েছে বিশেষত্ব। তিনতলার রামমন্দিরের মোট অযতন ২.৭ একর। এই মন্দির ৫৭ হাজার বর্গফুট এলাকা জুড়ে তৈরী। রাম মন্দিরের উচ্চতা হবে ১৬১ ফুট। রাম মন্দির নির্মাণের জন্য সবচেয়ে ভালো মানের গ্রানাইট, বেলেপাথর ও মার্বেল ব্যবহার করা হয়েছে। এতে সিমেন্ট ও চুন ব্যবহার করা হয়নি। আসলে রামমন্দির হল বিজ্ঞান এবং প্রাচীন ভারতীয় ঐতিহ্যের মেলবন্ধন।

তবে এই মন্দির এমন  ভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যাতে ২৫০০ বছরেও এর কোনও ক্ষতি হবে না। মন্দির নির্মাণের শুরুতেই চিন্তায় পড়েছিলেন রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট। ভীত তৈরী করার আগে মাটি পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছিল মন্দিরের নিচে মাটির পরিবর্তে রয়েছে আলগা বালি। এই অবস্থায় মন্দির তৈরি করলে তা বেশিদিন স্থায়ী হতো না, তৈরী হয়েছিল মন্দির ধসে যাওয়ার আশঙ্কা।

তাই সমস্যার সমাধান করতেই আলোচনায় বসেছিলেন বিজ্ঞানীরা। সেখানে ছিলেন সিবিআরআই ন্যাশনাল জিওফিজিকাল সার্ভার বিশেষজ্ঞরা। ছিলেন রাম মন্দির নির্মাণের দায়িত্বে থাকা লারসেন অ্যান্ড টুবরো সংস্থার বিশেষজ্ঞরাও। সকলের পরামর্শে মন্দিরের নিচে থাকা সমস্ত বালি তুলে ফেলা হয়। এরপর দক্ষিণ ভারত থেকে আনা ৬.৩ মিটার পুরু শক্ত গ্রানাইট পাথর দিয়ে মন্দিরের ভীত আরও বেশি মজবুত করা হয়। মন্দিরটিকে ভূমিকম্প প্রতিরোধী করে তুলতেই লোহা এবং সিমেন্টের পরিবর্তে শুধুই পাথর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এই মন্দির। তাছাড়া পাথরের আয়ু অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রীর থেকে অনেক বেশি হয়। তাছাড়া লোহায় মরছে ধরে। তাই সাবধানতা বশতই  এই মন্দির নির্মাণে লোহা বা ইস্পাত ব্যবহার করা হয়নি।  একটি নমনীয় ধরনের পাথর ব্যবহার করা হয়েছে রামমন্দির নির্মাণে। এগুলি আনা হচ্ছে রাজস্থানের ভরতপুরের বংশী পাহাড়পুর থেকে। এই গোলাপি পাথর গুলি যেমন টেকসই তেমন শক্তিশালী।

 


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *