রামলালার জন্য উপহার

উপহারে ভরে গিয়েছে রামলালার ঝুলি! কি উপহার এল রামের মামারবাড়ি থেকে? সুদূর শ্রীলঙ্কা থেকে কি উপহার এল রাম জন্মভূমিতে? গুজরাত থেকে মথুরা,কাশ্মীর থেকে তেলঙ্গানা কোন রাজ্য থেকে এল কী কী উপহার? দেশের পাশাপাশি বিদেশ থেকে কি কি উপহার এল রামলালার জন্য?

দেশের বিভিন্ন রাজ্যের পাশাপাশি, বিদেশ থেকেও রামলালার জন্য এসেছে উপহারের ডালি। ঘি কিংবা লাড্ডুর মতো খাদ্য সাগগ্রী তো বটেই এসেছে মিহি রেশমের বস্ত্র, ফুল কিংবা মূল্যবান অলংকারের পাশাপাশি এসেছে সোনা-রুপোর পাদুকা, ঘন্টা, ধুপ, কম্বল বাদ যায়নি কিছুই।

রামলালার জন্য রাম মন্দিরে কোন কোন রাজ্য থেকে কী কী উপহার এসেছে জানেন? আসুন দেখে নেওয়া যাক এক নজরে। মন্দির কর্তৃপক্ষ এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের দেওয়া তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের জন্মভূমি মথুরা থেকে এসেছে ২০০ কেজির লাড্ডু। মহারাষ্ট্রের নাগপুরের শেফ বিষ্ণু মনোহর সাত হাজার কেজি রাম হালুয়া রান্না করে পাঠিয়েছিলেন রামমন্দিরের ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’র অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের জন্য।

এছাড়াও হায়দ্রাবাদ থেকে রামের জন্য পাঠানো হয়েছে ১২৬৫ কেজি ওজনের লাড্ডু। টানা তিন ধরে ২৫ জন কারিগর দেশি ঘি দিয়ে এই লাড্ডু তৈরি করেছিলেন। রামলালার জন্য বিহার থেকে এসেছে পাগড়ি, পান এবং মাখনা। প্রসাদ হিসাবে বিতরণের জন্য রাজস্থান থেকে পাঠানো হয়েছে দেড় লক্ষ লাড্ডুর বাক্স। এসেছে রামের জন্য কম্বল। তাছাড়া ভক্তদের জন্যও আরও ৭০০০ কম্বল পাঠানো হয়েছে অযোধ্যায়। যোধপুর থেকেও পাঠানো হয়েছে ৬০০ কেজি দেশি ঘি।

উত্তরপ্রদেশের আগ্রা থেকে এসেছে ৫৬ রকমের বিশেষ মিঠাই। সঙ্গে এসেছে রত্নখচিত রামের পোশাক, রুপোর রেকাবি। পাঠানো হয়েছে আগ্রার বিশেষ সুগন্ধী আতর শামামা। যা গায়ে দিলেই নাকি কাছে ঘেঁষতেই পারে না শীত। ফিরোজাবাদ থেকে এসেছে রাম-সীতা এবং হনুমানের ছবি খোদাই করা ১০ হাজার চুড়ি।

 

অন্যদিকে উত্তরপ্রদেশের এটার বাসিন্দারা পাঠিয়েছেন অষ্টধাতু দিয়ে তৈরী ২৪০০ কেজি ওজনের একটি ঘণ্টা। রাম মন্দিরের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় তালা চাবি তৈরি করেছেন আলিগড়ের এক তালা শিল্পী। দু’জন মানুষের সমান উচ্চতার ৪০০ কেজি ওজনের ওই তালা তিনি মন্দির ট্রাস্টকে দিয়েছেন প্রতীকী ভাবে ব্যবহার করার জন্য। এছাড়াও লখনউয়ের এক সব্জি বিক্রেতা অযোধ্যার রাম মন্দিরের জন্য তৈরী করেছেন একটি বিশেষ ঘড়ি। ওই ঘড়িতে ভারত সহ এক সঙ্গে মোট ৮টি দেশের সময় দেখা যায়।

সোমবার রামলালার  বিগ্রহে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর রাজ্য গুজরাট থেকেও এসেছে হরেক রকম উপহারের ডালি। তার মধ্যে অন্যতম গুজরাতের বরোদা থেকে আসা  ১০৮ ফুট দীর্ঘ ধূপকাঠি। ছ’মাস ধরে তৈরী ওই ধূপকাঠি জ্বলবে টানা দেড় মাস। এছাড়াও  গুজরাত থেকে এসেছে বড় ঢাকের মতো দেখতে  ৫৬ ইঞ্চি ব্যাস বিশিষ্ট সোনার তবকে মোড়া একটি নাগাড়ু। যা বাজানো হবে মন্দিরের বিশেষ অনুষ্ঠানে

এ ছাড়াও  ৫০০০ আমেরিকান ডায়মন্ড এবং দু’কেজি রুপো দিয়ে তৈরি একটি হার পাঠিয়েছেন সুরতের এক গহনা শিল্পী। এই হারের লকেট যেন অবিকল রামমন্দির। আর হারের মালায় খোদাই করা হয়েছে রামায়ণের চরিত্র। এছাড়াও সুরাতের টেক্সটাইল হাব থেকে রামের ছবি দেওয়া একটি বিশেষ শাড়ি তৈরি করা হয়েছে সীতার জন্য।

বরোদার এক কৃষক পঞ্চ ধাতু অর্থাৎ সোনা, রুপো, তামা, লোহা এবং দস্তা দিয়ে তৈরী ১১০০ কেজি ওজনের একটি প্রদীপ পাঠিয়েছেন। ওই প্রদীপে ৮৫১ কেজি ঘি ধরবে। মধ্যপ্রদেশ থেকে আসা ১০ হাজার বোগেনভেলিয়া ফুল দিয়েই সাজানো হয়েছিল রাম মন্দির চত্বর। এ ছাড়াও মধ্যপ্রদেশের ছিন্দওয়াড়া থেকে এসেছে  পাঁচ লক্ষ লাড্ডু এবং চার কোটি ৩১ লক্ষ বার রাম নাম লেখা একটি কাগজ।

 

আর রামের ‘মামারবাড়ি’ ছত্তীসগঢ় থেকে আগেই এসেছে ৩০০ টন সুগন্ধি চাল। এছাড়াও  দু’টি ট্রাক ভর্তি সব্জিও পাঠানো হয়েছে অযোধ্যায়। নেপালের জনকপুরের কন্যা ছিলেন মাতা সীতা। সেই সুদূর নেপাল থেকে এসেছে অন্তত ৩০০০ উপহার। তার মধ্যে আছে রূপোর জুতো,গয়না, মূল্যবান কাপড়ে তৈরি বস্ত্রও। মোট ৩০টি গাড়িতে এই সমস্ত উপহার এসেছে  অযোধ্যার রামমন্দিরে।

 

বাবার স্বপ্ন পূরণ করতেই ৬৪ বছরের বৃদ্ধ ছল্লা শ্রীনিবাস শাস্ত্রী তেলঙ্গানা থেকে রামের জন্য এনেছেন সোনার পাতে মোড়া পাদুকা।  ৮০০০ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে এসে তিনি ওই পাদুকা তুলে দিয়েছেন রামমন্দির কর্তৃপক্ষের হাতে। কেরলের পদ্মনাভস্বামী মন্দির থেকে রামের জন্য এসেছে  ওনাভিল্লু ধনুক। আর তামিলনাড়ু থেকে রামমন্দিরের জন্য এসেছে খাঁটি রেশমের বিছানার চাদর। এ ছাড়াও  কলার খোসার আঁশ থেকে তৈরি ২০ ফুট দীর্ঘ এবং চার ফুট বহরের শাড়িও পাঠানো হয়েছে অযোধ্যায়।

 

এখানেই শেষ নয় কাশ্মীর থেকেও  মুসলিম ভাই বোনেরা পাঠিয়েছেন ২ কেজি কেশর। এ ছাড়া দেশের বাইরে থেকেও এসেছে ভুরি ভুরি উপহার। শ্রীলঙ্কা সরকারের তরফে পাঠানো হয়েছে অশোক বটিকার বিশেষ পাথর। এই  অশোক বনেই  সীতাকে বন্দি বানিয়ে রেখেছিলেন রাবণ। সুদূর আফগানিস্তান থেকেও কাবুল নদীর জল এসে পৌঁছেছে রামমন্দিরে।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *