ভগবান রামের মৃত্যু কিভাবে হয়েছিল জানেন? শ্রী রাম কিভাবে বৈকুন্ঠ পাড়ি দিয়েছিলেন জানেন ? রামচন্দ্রের মৃত্যু নিয়ে রয়েছে কোন রহস্য? ঋষি বাল্মীকির রামায়ণে কেন শ্রীরামের মৃত্যুর কথা উল্লেখ নেই?
যুগে যুগে পৃথিবীতে অধর্মের বিনাশ করে ধর্ম প্রতিষ্ঠা করতেই মানব রূপে জন্ম নিয়েছেন ভগবান শ্রী বিষ্ণু। অযোধ্যার সূর্যবংশীয় রাজা দশরথ ও রানি কৌশল্যার ছেলে রাম। পৌরাণিক মতে, ত্রেতা যুগে চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের নবমী তিথিতে পবিত্র অযোধ্যা ভূমিতে রাণী কৌশল্যার গর্ভ থেকে মানবরূপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। তাঁকেই ভগবান শ্রী বিষ্ণুর সপ্তম অবতার বলে মনে করা হয়।
ভগবান রাম তাঁর জীবদ্দশায় বহু মানুষকে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে তাদের দোষ ও পাপ দূর করে তাদের মুক্তির পথ প্রশস্ত করেছেন। দশরথ পুত্র রামকে হিন্দু ধর্মে ভগবান রূপে পুজো করা হয়। ভক্তদের বিশ্বাস পুরুষোত্তম রামই হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ বীর যোদ্ধা।
মহর্ষি বাল্মীকি রচিত ‘রামায়ণ’ থেকে জানা যায় কৈকেয়ী ও মন্থরার ষড়যন্ত্রে ১৪ বছরের বনবাস কাটিয়ে অযোধ্যায় ফিরে এসে সিংহাসনে বসেন রাম। নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলে রাজ ভার। প্রজাদের মন রাখতেই সীতাকে বনবাসে পাঠিয়েছিলেন রাম। এরপর দুই ছেলে লব ও কুশকে নিয়ে আশ্রমেই দিন কাটে দেবী সীতার। পরে আবার দেবী সীতাকে অগ্নিপরীক্ষা দিতে বলা হলে পৃথিবীর বুকেই আশ্রয় নেন তিনি। রামায়ণের এই কাহিনী কমবেশি সকলেই জানেন কিন্তু তারপর কী হল ভগবান রামের? কিভাবে বৈকুন্ঠ পাড়ি দিয়েছিলেন শ্রী রাম?
দেবী সীতা পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করার পর নাকি টানা ১১ হাজার বছর ধরে অযোধ্যা শাসন করেছিলেন রাম। সীতার মৃত্যুর পর শোকাহত হয়ে পড়েছিলেন রাম। বাল্মীকির রচিত রামায়ণকেই মূল বলে মনে করা হয়। এই রামায়ণ অনুযায়ী রাবণকে পরাস্ত করার পর ভগবান রামের বিজয়ের সাথেই শেষ হয়েছিল রামায়ণ। সেখানে রামের অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তনের পর ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলির কোনও ইঙ্গিত নেই। এমনকি বাল্মীকির রামায়ণে রামের মৃত্যুর কোন তথ্যও পাওয়া যায় না।
মৃত্যুই জীবনের পরম সত্য। তাই এই যে পৃথিবীতে জন্ম নিলে মৃত্যু নিশ্চিত। তা সে মানুষ, হোক পশু কিংবা দেবতা। ব্যতিক্রম ছিলেন না ভগবান বিষ্ণুর সপ্তম অবতার শ্রী রাম-ও। ভগবান শ্রী রাম তাঁর জন্ম থেকে বৈকুণ্ঠ লোকে প্রস্থান পর্যন্ত যাত্রার জন্য বেছে নিয়েছিলেন পবিত্র অযোধ্যা ভূমিকেই।
মুনি-ঋষিরা বলেন,পৃথিবীর বুকে যে তাঁর সময় ফুরিয়ে এসেছে, সেকথা ভগবান রামকে মনে করিয়ে দিতেই একদিন সময়ের দেবতা কাল এসে বলেছিলেন তোমার সময় এসেছে, তাই তুমি এখন যাও। এরপর দেহত্যাগের সময় এলে রাম অযোধ্যার গুপ্তার ঘাটে যান। তখন তাঁর সাথেই অযোধ্যার সমস্ত মানুষ এবং তাদের লীলায় জড়িত পশুরাও আসেন এই গুপ্তার ঘাটে। আসলে তাঁরা ছিলেন ৩৩ ধরণের দেব-দেবী যারা তাঁর লীলায় অংশ নিতেই পৃথিবীতে অবতরণ করেছিলেন।
এরপর জুতো খুলে গুপ্তার ঘাটের গিয়ে সরায়ু নদীতে প্রবেশ করতেই ভগবান রাম মানব রূপ ত্যাগ করেন। সরযূ নদীর জলে নামার সাথে সাথে তিনি তাঁর বিষ্ণু রূপে আবির্ভূত হন। এর পরে, ভগবান ব্রহ্মা তাঁকে প্রণাম করেন। হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, একই সময়ে ব্রহ্মা একটি বাহন নিয়ে আসেন এবং তাতে চড়েই ভগবান বিষ্ণু বৈকুন্ঠ ধামে যান।
গল্প কি বলে?
সময়ের দেবতা কাল ঋষির ছদ্মবেশে রামের সাথে দেখা করতে এসে বলেছিলেন তিনি একান্তে তার সাথে কথা বলতে চান। তখন রাম তার ছোট ভাই লক্ষ্মণকে পাহাড়ায় রেখে আদেশ দিয়েছিলেন কেউ যেন ভিতরে প্রবেশ করতে না করে। আর কেউ এই আদেশ অমান্য করলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। আর ঠিক কিছুক্ষণ পরেই সেখানে এসে হাজির হয় ঋষি দূর্বাশা।
লক্ষণ বারণ করা সত্ত্বেও তিনি প্রচন্ড ক্রোধান্বিত হয়ে পড়েন। আর ঋষি দূর্বাশা ক্রোধের বশেই অগ্নিশর্মা হয়ে রাম এবং অযোধ্যাকে অভিশাপ দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। তখন নিজে সেই অভিশাপের ভার নিতেই বাধ্য হয়েই লক্ষণ তাকে ভগবান রামের কাছে যাওয়ার অনুমতি দেন। এর পর ভগবান রাম লক্ষ্মণকে মৃত্যুদণ্ড দিতে না পেরে নির্বাসন দেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু লক্ষণের পক্ষে রামকে ছাড়া এক মুহূর্ত ছিল মৃত্যুর সমান। তাই তিনি নিজেই সরায়ুতে মিশে যান। এরপর শ্রী রাম ভাইয়ের মৃত্যু সম্পর্কে জানতে পেরে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁর অবতার শেষ করার সময় হয়ে এসেছে। তাই তিনি তার পুত্রদের কাছে সব দায়িত্ব তুলে দিয়ে সরয়ু নদীর গভীরে মিলিয়ে যান।
Leave a Reply