এই গ্রামে ঘরে অতিথি এলে তাঁর সঙ্গেই রাত কাটান বাড়ির স্ত্রী! কোথায় এই গ্রাম জানেন?
পৃথিবীতে এমন অনেক উপজাতির মানুষ রয়েছেন যারা তাদের অনন্য রীতির জন্য বিশ্ব বিখ্যাত। আফ্রিকাতেই বসবাসকারী এমনই এক প্রাচীন উপজাতি হল হিম্বা। হাজার হাজার বছরের পুরনো সভ্যতা ও রীতিনীতি অনুসরণের জন্যই তারা আজও বিখ্যাত গোটা পৃথিবীতে। বিশ্বের সবচেয়ে অনন্য এই উপজাতির বাস আফ্রিকার উত্তর-পূর্ব নামিবিয়ার কুনাইন প্রদেশে। এই হিম্বা প্রজাতির মহিলাদের আফ্রিকার সবচেয়ে সুন্দর নারী বলে মনে করা হয়। বর্তমানে এই উপজাতির আওতায় রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ।
জানলে অবাক হবেন এই হিম্বা প্রজাতির মেয়েদের স্নান করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তারা জীবনে শুধু একবারই স্নান করতে পারেন। শুধুমাত্র বিয়ের দিনেই জীবনে একবার স্নান করার অনুমতি রয়েছে হিম্বা নারীদের। আসলে হিম্বারা এমনই এক যাযাবর প্রজাতির মানুষ যারা বাস করেন এমন এক মরুভূমিতে যা বিশ্বের শুষ্কতম অঞ্চল গুলির মধ্যে অন্যতম। তাই এখানে জলের বিরাট অভাব। এই জলের অভাবের কথা মাথায় রেখেই এই উপজাতির মানুষদের মধ্যে বিভিন্ন রীতিনীতি প্রচলিত রয়েছে।
তাই জলের অভাবের জন্যই হিম্বা উপজাতির মেয়েরা জীবনে শুধুমাত্র বিয়ের দিনেই স্নান করতে পারেন। হিম্বা মহিলাদের হাত ধোয়া কিংবা কাপড় কাচাও নিষেধ। কিন্তু জল ব্যবহার না করলেও অদ্ভুতভাবে এদের গা থেকে কোন রকম দুর্গন্ধ বের হয় না। তার পিছনেও রয়েছে একটি বিশেষ কারণ।
আসলে এরা একটি বিশেষ ধরনের পেস্ট ব্যবহার করেন, যা তাদের ত্বককে রোদ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এই লোশনটি পশুর চর্বি এবং হেমাটাইট (যা লোহার মতো একটি খনিজ উপাদান ) থেকে তৈরি করা হয়। হেমাটাইটের ধুলোর কারণে এদের গায়ের রং লাল হয়ে যায়। এই লোশনটি এই হিম্বা মহিলাদের বিভিন্ন পোকামাকড়ের হাত থেকেও রক্ষা করে। এই কারণে এখানকার মহিলারা ‘লাল পুরুষ’ নামেও পরিচিত। হিম্বা মহিলারা লুঙ্গির মতো পোশাক পরেন তবে এদের দেহের ওপরের অংশ অনাবৃত থাকে।
হিম্বা কারা?
এরা এক ধরনের যাযাবর জাতি। মরুভূমির কঠোর জলবায়ুতেই বসবাস করতে অভ্যস্ত এই উপজাতি বাইরের সভ্য জগত থেকে নিজেদের সারাক্ষণ বিচ্ছিন্ন রাখে। এরা বেশিরভাগই সকাল-বিকাল এবং সন্ধ্যায় ভুট্টা-বাজরার আটার পোরিজ খান। হিম্বারা বাজরাকে মাহঙ্গু বলে থাকেন। তবে বিয়ে বা অন্যান্য বিশেষ অনুষ্ঠানে এরা মাংস খেতে পছন্দ করে।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হিম্বা সন্তানদের পরিচয় হিসেবে ভোটার কার্ড কিংবা আই কার্ড নয় তৈরি হয় একটি বিশেষ গান। আমাদের দেশে ভোটার কার্ড-পাসপোর্ট যেমন আমাদের পরিচয় পত্র তেমনি হিম্বাদের পরিচয় তাদের সঙ্গীত-জীবন গান। এখানকার প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে মহিলারা একটি গাছের নিচে বসে সন্তানের জন্ম দেওয়ার জন্য গানটির কথা ভাবেন এবং গানটি যখন তার মনে আসে তখন তিনি তার স্বামীকে সেটি শোনান তারপর দুজন সঙ্গমে লিপ্ত হন এবং মহিলা গর্ভবতী হন। পরে ওই গানটি অন্য লোকদেরও শেখানো হয়, যাতে সবাই তা মনে রাখে। তারপর শিশুর জন্মের পর সেই গানই হয় তার পরিচয়, অর্থাৎ গান দিয়েই সেই মানুষকে চেনা যায়।
এখানকার নিয়ম হল মহিলারা নয় পুরুষরাই বিয়ের চিহ্ন পরিধান করেন। তাই আমাদের দেশে যেমন মহিলারা সিঁদুর,টিপ,চুড়ি কিংবা মঙ্গলসূত্র পরে বিবাহিত স্ত্রীর চিহ্ন বহন করেন তেমনি এখানকার বিবাহিত পুরুষরা তাদের মাথায় পাগড়ি পরেন এবং বিয়ের পর এরা কখনই মাথা থেকে এই পাগড়ি নামান না। আর অবিবাহিত পুরুষরা মাথায় একটি মাত্র বিনুনি রাখেন তাও শিং আকৃতির।
আজও এই জনজাতির মহিলাদের বিয়ে ঠিক করেন তাঁর বাবা। তিনি ওই জনজাতিরই যে পুরুষের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেবেন মেয়েকে তার সাথেই বিয়ে করতে হবে। এখানকার মানুষরা তাঁদের আতিথেয়তার জন্য পরিচিত। এই জনজাতির এক অদ্ভুত প্রাচীন রীতি হল বাড়িতে আগত অতিথিদের তাদের স্ত্রীদের সাথে যৌন মিলনের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে ওই মহিলা যদি আগত অতিথির সঙ্গে মিলনে রাজি নাও হন সেক্ষেত্রেও তাঁকে অতিথির সাথেই রাত কাটাতে হবে। এই সময় মহিলার স্বামী হয় অন্য ঘরে নয়তো বাইরে ঘুমায়। তবে হিম্বা উপজাতিতে পুরুষদের যেমন একাধিক নারীর সাথে সম্পর্ক রাখার স্বাধীনতা রয়েছে, তেমনি নারীরাও অন্য পুরুষের সাথে শারীরিক সম্পর্ক রাখতে পারেন। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এটাই হিম্বা জনজাতির প্রাচীন সংস্কৃতির অংশ।
Leave a Reply