ফিঙ্গারপ্রিন্ট কিংবা ফেস লক অতীত! এবার আপনার নিঃশ্বাসেই খুলে যাবে মুঠোয় বন্দী মোবাইলের লক? হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন, শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি! কিন্তু কীভাবে? জানুন অভিনব এই ব্রিদ লকের ম্যাজিক।
সময়ের সাথে সাথে প্রযুক্তির হাত ধরে এখন আমুল পরিবর্তনে এসেছে মানুষের দৈনন্দিন জীবনেও। সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত নানাভাবেই আমরা প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। যার মধ্যে প্রথমেই আসে মুঠোয় বন্দি স্মার্ট ফোন। তাই মোবাইল ছাড়া এখন দিন শুরু হয় না কারও। আর প্রযুক্তির সাথেই হাত ধরাধরি চলে আসে নানান প্রতারণার ফাঁদ ।
তাই প্রতারণা কমাতেই স্মার্টফোনের নিউমারিক প্যাটার্ন,ফিঙ্গারপ্রিন্ট, কিংবা ফেস লকের মতো বায়োমেট্রিক দারুন প্রচলিত। তবে এখন শুধু স্মার্টফোনের মত ডিভাইসেই নয়, এই ধরনের বায়োমেট্রিক ব্যবহার করা হয় ব্যাংক থেকে শুরু করে আধার কার্ডের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও।
এতদিন আঙুলের ছাপ কিংবা ফেস লক ছাড়া অন্য কোনো কিছু দিয়েই মোবাইল লক খোলা যেত না। কিন্তু এবার আইআইটি মাদ্রাজের একদল গবেষক এমন এক প্রযুক্তি এনেছেন যার ফলে এখন ফিঙ্গারপ্রিন্ট কিংবা ফেস লক অতীত! শুধু নিঃশ্বাসেই আনলক হয়ে যাবে আপনার হাতের মুঠোফোন। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি।
তবে শুধু স্মার্টফোনই নয়, অন্যান্য ডিভাইসেও এই প্রযুক্তির হাত ধরেই আসতে চলেছে এই বৈপ্লবিক পরিবর্তন। যদিও শুরুটা হয়েছিল নিছক কৌতূহল বশেই। আসলে এয়ার প্রেশার সেন্সর দিয়ে রেকর্ড করার ডাটা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছিলেন চেন্নাইয়ের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি মাদ্রাজের গবেষক মহেশ পঞ্চাগনুলা ও তার টিম।
তবে এর নেপথ্য নায়ক কিন্তু আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। মূলত ওষুধ নিয়ে গবেষণার কারণেই প্রাথমিক পর্যায়ে বিজ্ঞানীরা একটি এআই মডেল বানিয়েছিলেন। যার কাজ ছিল প্রত্যেক ব্যক্তির শ্বাসযন্ত্র জনিত সমস্যা গুলিকে চিহ্নিত করা। কিন্তু এই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়েই বিজ্ঞানীদের হাতে আসে এক বিরাট তথ্য।
একটি রিপোর্টে জানা গিয়েছে আইআইটি মাদ্রাজের এই গবেষক দল মোট ৯৪ জনের প্রায় ১০ টি করে নিঃশ্বাস প্রশ্বাস রেকর্ড করেন এয়ার প্রেশার সেন্সরের মাধ্যমে। যা এক সেকেন্ডের প্রায় ১০ হাজারটি রিডিং নিতে সক্ষম ছিল। গবেষকরা দেখেন ওই এআই মডেলটি ডেটা বিশ্লেষণের পর নির্ভুলভাবে যে কোনও শ্বাস শনাক্ত করতে সফল হচ্ছে। অর্থাৎ ওই এআই মডেলের সাহায্যে যে কোন ব্যক্তির ব্রিদ ডেটা ৯৭ শতাংশ ক্ষেত্রেই নির্ভুলভাবে শনাক্ত করা যাবে।এই নতুন শ্বাস যে ব্যক্তির থেকে আসছে তা যাচাই করা যাবে।
বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যেই ওই আই মডেলটির বেশ কয়েকটি ট্রায়াল-ও দিয়ে ফেলেছেন। এই মডেলটি প্রত্যেক ব্যক্তির শরীরের এক্সট্রাথোরাসিক অঞ্চলের যে আলাদা আলাদা শরীরবৃত্তীয় গড়ন যা আদতে মানুষের নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের টারবিউল্যান্সের জন্য দায়ী, সেটিকে আলাদা করে শনাক্ত করতে পারে। ফলে সহজেই আলাদা ব্যক্তির নিঃশ্বাসকে চিহ্নিত করা যায়।
তবে আগামীদিনে সত্যিই যদি নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসকে বায়োমেট্রিক হিসাবে ব্যবহার করা যায় তাহলে তা নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী পরিবর্তন হতে চলেছে। কারণ হামেশাই দেখা যায় মৃত ব্যক্তির ফিঙ্গারপ্রিন্ট কিংবা ফেসলক দিয়ে খুব সহজেই তাঁর মোবাইল লক খুলে ফেলেন প্রতারকরা। কিন্তু এই ব্রিদ লকের প্রযুক্তি চালু হলে তা আনলক করা জালিয়াতিদের পক্ষে একপ্রকার অসম্ভব হয়ে পড়বে।
Leave a Reply