বৃদ্ধা মৌন ব্রত

রামমন্দির প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত একটাও কথা নয়! তিন দশক ধরে কুলুপ এঁটেছিলেন মুখে! ৩২ বছর পর মৌন ব্রত ভাঙবেন ঝাড়খণ্ডের বৃদ্ধা! রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠার দিনেই নীরবতা ভাঙছেন রাম ভক্ত এই বৃদ্ধা! কারণ জানলে তাজ্জব বোনে যাবেন আপনিও !

রাম মন্দিরের উদ্বোধন ঘিরে গোটা দেশ জুড়ে এখন সাজো সাজো রব! এই মুহূর্তে গোটা দেশ তাকিয়ে রয়েছে আগামী ২২ জানুয়ারির দিকে। যা নিয়ে এখন থেকেই রীতিমতো উত্তেজনায় ফুটছে গোটা দেশবাসী। ভগবান শ্রী রামচন্দ্রের পবিত্র জন্মভূমিতে শেষ পর্যন্ত রামলালার মূর্তি বসছে। তাই  এই দিনটি নিঃসন্দেহে ভারতীয়দের কাছে ঐতিহাসিক হয়ে থাকবে। হিন্দুদের কাছে শ্রী রামচন্দ্র গুরুত্ব অপরিসীম। তাই দেশ জুড়ে রাম ভক্তদের অভাব নেই ঠিকই, কিন্তু আজ আপনাদের জনাব এমন এক রামভক্ত বৃদ্ধার কথা যা শুনলে অবাক হবেন সবাই।

ভগবান শ্রী রামচন্দ্রের প্রতি নিষ্ঠা রেখে গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে মৌনব্রত পালন করে শিরোনামে উঠে এসেছেন ঝাড়খণ্ডের ধানবাদের কারমাতান্ড গ্রামের বাসিন্দা সরস্বতী দেবী।  ৮৫ বছর বয়সী এই অশীতিপর বৃদ্ধা খুব ছোট থেকেই ভগবান রামের ভক্ত। ১৯৯২ সালে যেদিন বাবরি মসজিদ ধ্বংস হয়েছিল, সেদিন থেকেই মুখে কুলুপ এঁটে তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যতদিন না ওই জায়গায় রামমন্দির তৈরী করে রামলালার মূর্তি প্রতিষ্টা করা হবে ততদিন তিনি মৌন ব্রত ভাঙবেন না।

সেই প্রতিজ্ঞা তিনি রেখেছেন। অবশেষে আগামী ২২ জানুয়ারি দীর্ঘ ৩২ বছর পর  নীরবতা ভেঙে কথা বলবেন তিনি। মোট চার মেয়ে সহ ৮ সন্তানের জননী সরস্বতী দেবী এলাকায় মৌনিমাতা নামেই পরিচিত। সরস্বতী দেবী বর্তমানে তার মেজো ছেলের নন্দলাল আগারওয়ালের সঙ্গেই থাকেন। স্বামী দেবকীনন্দন আগরওয়ালের মৃত্যুর পর ভগবান রামের নামে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন তিনি।  ১৯৯২ সালের বাবরি মসজিদ ধ্বংস হওয়ার পর তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন রাম জন্মভূমিতে রাম মন্দির প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত  কথা বলবেন না।

প্রায় তিন দশক ধরে মৌনব্রত থাকা অবস্থাতেই তিনি ভ্রমণ করে ফেলেছেন অযোধ্যা,কাশি,মথুরা, তিরুপতি বালাজি এবং বাবা বৈদ্যনাথ ধাম।  তবে নিজের প্রতিজ্ঞা রেখে বিগত তিন দশক ধরে অক্ষরে অক্ষরে সরস্বতী দেবী পালন করেছিলেন মৌনব্রত। পরবর্তীতে যখন অযোধ্যার রাম মন্দির প্রতিষ্ঠা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায় বার হয় সেদিন চোখে জল এসে গিয়েছিল ঝাড়খণ্ডের  মৌনি মাতার।  তবে ২০২০ সাল পর্যন্ত তিনি প্রতিদিন দুপুরে এক ঘন্টার জন্য কথা বলতেন।

কিন্তু যেদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন সেদিন থেকেই  তিনি গত তিন বছর ধরে সম্পূর্ণরূপে মৌনব্রত পালন করে চলেছেন। এই তিন বছরে তিনি একটিও শব্দ উচ্চারণ করেননি। তবে খুব তাড়াতাড়ি নীরবতা ভাঙবেন এই বৃদ্ধা।  অবশেষে রাম মন্দির উদ্বোধনের দিনেই সরস্বতী দেবীরর পরিবারের সদস্যদের অপেক্ষার অবসান ঘটতে চলেছে। আবার তাঁর কণ্ঠস্বর   শুনতে পাওয়ার আশায় দারুন উৎসাহী সকলে।

প্রসঙ্গত এতদিন পর্যন্ত সরস্বতী দেবী নিজের মনের কথা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহার করেছেন কাগজ কলম। সেখানেই লিখে তিনি জানিয়েছেন তাঁর তপস্যা  ও ধ্যান সফল হয়েছে শেষমেষ। সেই সাথে  রাম মন্দির উদ্বোধনের দিনই রাম নাম করতে করতেই তিনি মৌন ব্রত ভাঙবেন বলে জানিয়েছেন।

রাম মন্দির কর্তৃপক্ষের তরফে আগামী ২২ জানুয়ারি সরস্বতী দেবী এবং তার পুরো পরিবারকে অযোধ্যার মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য বিশেষ আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। রাম মন্দিরের এই ডাক পাওয়াকে বৃদ্ধা ভগবান রামের ডাক বলেই মনে করছেন। ২০০১ সালে মধ্যপ্রদেশের চিত্রকুট পাহাড়ে সাত মাসের তপস্যা করেছিলেন সরস্বতী দেবী। মনে করা হয় এই চিত্রকুট পাহাড় সংলগ্ন এলাকাতেই বনবাস কাটিয়েছিলেন শ্রী রামচন্দ্র।

২২ জানুয়ারি রাম মন্দিরের উদ্বোধন হলেও জনসাধারণের জন্য মন্দিরের দ্বার  খুলে দেওয়া হবে ২৪ জানুয়ারি থেকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইতিমধ্যেই বারবার সাধারণ মানুষকে অনুরোধ করেছেন উদ্বোধনের দিনেই যেন সকলে রাম মন্দিরে ভিড় না জমান। তবে এই অনুরোধ কতটা সবাই মেনে চলেন এখন সেটাই দেখার। অনুমান করা হচ্ছে রাম মন্দির উদ্বোধনের দিন মন্দিরে  লক্ষ লক্ষ জন সমাগম হবে।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *