রীল নাকি রিয়েল? সিনেমার ‘কিং কং’ ছিল বাস্তবেও? সত্যিই কি এমন প্রাণীর অস্তিত্ব ছিল পৃথিবীতে? সিনেমার মতোই কি বিশালাকার ছিল ‘কিং কং’? কিভাবে বিলুপ্ত হয়ে গেল এই প্রাণী? ‘কিং কং’-নিয়ে আজও রয়েছে বহু রহস্য? ডাইনোসরের যুগেও অস্তিত্ব ছিল ‘কিং কং’-এর? কি বলছেন বিজ্ঞানীরা?
সিনেমা প্রেমীদের কাছে আজও প্রাসঙ্গিক পিটার জাকশন পরিচালিত ২০০৫ সালের সিনেমা কিংকং। তাই এই হলিউড সিনেমার জনপ্রিয়তা নিয়ে নতুন করে আর কিছুই বলার নেই। একসময় এই কিংকং সিনেমাটি দেখার পর বহু মানুষের মনে প্রশ্ন জেগেছিল সিনেমার কল্পনা জগতের এই কিংকং-এর অস্তিত্ব কি বাস্তবেও ছিল?
তা জানতেই ইতিমধ্যে বহু গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু এতদিন পর্যন্ত কিংকং-এর মত কোন প্রাণীরই জীবাশ্ম খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু সম্প্রতি এক নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। একদল চীনা এবং অস্ট্রেলিয়ান গবেষক দাবি করেছেন বহু শতাব্দী আগে সত্যিই পৃথিবীর বুকে অস্তিত্ব ছিল বানরের মতো বিশাল আকারের প্রাণী কিংকং এর।
বাস্তবে এই কিংকং আকারে কত বড় ছিল জানেন? বিজ্ঞানীদের দাবি, বাস্তবে এই কিংকং-এর বিচরণ ছিল দক্ষিণ চীনে। গবেষণা থেকেই জানা যাচ্ছে, বিশাল আকারের এই প্রাণীটি প্রায় ১০ ফুট লম্বা এবং গরিলার চেয়ে দ্বিগুণ ভারী। বিশালাকার এই প্রাণীর বিলুপ্তির কারণ হিসাবে দাবি করা হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনকে। তবে বিজ্ঞানীরা এই কিংকং-এর অস্তিত্ব সম্পর্কে জানার বহু চেষ্টা করলেও তাদের সম্পর্কে এখনও এমন বহু তথ্য রয়েছে, যা আজও অমীমাংসিত অবস্থায় থেকে গিয়েছে রহস্যের ঘেরাটোপেই।
গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা যে প্রাণীটির জীবাশ্ম খুঁজে পেয়েছেন তার নাম গিগান্টোপিথেকাস ব্ল্যাকি। যা আবিষ্কার করেছিলেন জার্মান-ডাচ প্যালিওন্টোলজিস্ট জিএইচআর ভন কোয়েনিগসওয়াল্ড। দক্ষিণ চীনের বহু পুরনো গুহায় তিনি এই অদ্ভুত বিলুপ্ত প্রজাতির প্রাণীটির দাঁত ও চারটি চোয়ালের চোয়ালের জীবাশ্ম খুঁজে পেয়েছেন। বয়সের হিসাবে প্রায় ২ মিলিয়ন বছরের পুরনো গুহায় শতাধিক দাঁত পাওয়া গেলেও ওই প্রাণীর বিলুপ্তির সময়কালের আশপাশের তুলনামূলক কম পুরোনো গুহাগুলোয় মাত্র তিন-চারটি দাঁত পাওয়া গিয়েছে।
বিজ্ঞানীদের দাবি এই গিগান্টোপিথেকাসরা ভিয়েতনামের সীমান্তবর্তী দক্ষিণ চীনের গুয়াংজি অঞ্চলে বাস করত। এই অঞ্চলের ২২টি গুহাতেই তাদের জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছে। এই জীবাশ্মগুলোর সঠিক সময় পেতে বেশ কয়েকটি কৌশলের মাধ্যমে এই বানর প্রজাতির জীবনকাল, হারিয়ে যাওয়ার সময় এবং মৃত্যুর একটি সময়রেখা তৈরি করা হয়েছে।
কীভাবে বিলুপ্ত হল এরা?
গবেষণা থেকে বিজ্ঞানীদের দাবি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রাণীদের খাদ্যের পরিবর্তন, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সম্মুখীন হতে হয়েছে। নেচার জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে গবেষকরা জানিয়েছেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে বাস্তবের বিশালাকায় এই কিংকং ২ লক্ষ ৯৫ হাজার বছর থেকে ২ লক্ষ ১৫ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।
প্রায় ২ মিলিয়ন বছর আগে এই গিগান্টোপিথেকাস প্রজাতির প্রাণীরা বনে বাস করত এবং ফলমূল খেত। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন বর্তমানে তাদের আকার এবং গঠন সম্পর্কে কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে একথা নিশ্চিত এরা আকারে কিং কং সিনেমার মতো বড় ছিল না এবং ডাইনোসরের যুগে তাদের কোনো অস্তিত্বও ছিল না।
Leave a Reply