জানেন মূত্রের রঙ কেন হলুদ হয়? মূত্রের কোন রঙ, কোন রোগের ইঙ্গিত দেয় জানেন? প্রস্রাবের রঙ দেখেই চিনে নিন রোগ! জানেন মূত্রের রঙ রোগ চেনার পদ্ধতি? শরীর সুস্থ আছে তো? প্রস্রাবের রঙ দেখে জানুন নিজেই।
আমাদের শরীরে অনেক সময় এমন অনেক রোগ এসে বাসা বাঁধে যা ধরা পড়তে অনেক দেরি হয়ে যায়। তবে চিকিৎসকরা জানান প্রস্রাবের রঙে পরিবর্তন দেখেও অনেক সহজে রোগ নির্ণয় করা যায়। সাধারণত আমাদের শরীরের অনেক বর্জ্য পদার্থ মুত্রের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। তাই কোন কারনে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রস্রাব নির্গত না হয় কিংবা রংয়ের পরিবর্তন হয়, তাহলে তা দেখেও বোঝা যায় শরীরে কোন ধরনের রোগ বাষা বেঁধেছে।
মানুষের প্রস্রাবের রং এবং গন্ধ নির্দেশ করে বিভিন্ন রোগকে। তাই স্বাভাবিক সময়ে জলের মতো সাদা প্রস্রাব হলেও অসুস্থ অবস্থায় পাল্টে যেতে পারে প্রস্রাবের রং। কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থায় মুত্রের রঙ সব সময় হলুদ থাকে। কিন্তু মুত্রের রং কেন হলুদ হয় জানেন? এ প্রসঙ্গে বিজ্ঞানীদের দাবি মুত্রের রঙ হলুদ হওয়ার জন্য দায়ী একটি এনজাইম। বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয়, মানুষের প্রস্রাবের রঙ হলুদ হওয়ার পেছনে দায়ী বিলিরুবিন ও তার অবশিষ্টাংশ ইউরোবিলিরুবিন। এই কারণেই স্বাভাবিক অবস্থায় অর্থাৎ কোন সুস্থ মানুষের প্রস্রাবের রঙ হলুদ হয়ে থাকে।
কেউ বেশি জল খেলে মূত্রে থাকা ইউরোবিলিরুবিন দ্রবীভূত হয়ে যায়। তখন মূত্রের রঙ হয়ে যায় সাদাটে। কিন্তু কম জল খেলে প্রস্রাব হলুদ হয়। চিকিৎসকেরা বলছেন অন্ত্র, পিত্তরোগ কিংবা লিভার জাতীয় যেকোনো রোগে মূত্রের রঙ গাঢ় হলুদ হয়ে যেতে পারে। এছাড়া অন্য কোনও সংক্রমণঘটিত রোগ হলেও তা বলে দেবেমূত্রের রঙ। আসুন জানা যাক প্রস্রাবের কোন রঙ কোন রোগের ইঙ্গিত দেয়।
ফ্যাকাশে হলুদ
বিজ্ঞানসম্মত ভাবে বলতে গেলে শরীরে উৎপন্ন ইউরোবিলিন পিগমেন্টের কারণে প্রস্রাবের রং ফ্যাকাশে হয়। কেউ যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে জল না খায় তাহলে শরীর জলশূন্য হয়ে পড়ে। তখন কিডনি প্রস্রাব থেকে জল শোষণ করে। এর ফলে প্রস্রাবের স্বাভাবিক রং ঘনীভূত হয়ে হলুদ হয়ে যায়। তাই নিয়মিত বেশি করে জল খাওয়া দরকার।
ঘোলাটে প্রস্রাব
মাঝেমধ্যে ঘোলাটে প্রস্রাব হলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। খাবারে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি হলেই এমনটা হয়ে থাকে। কিন্তু প্রতি দিন ঘোলাটে প্রস্রাব হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। মূলত কিডনির সমস্যা বা ইউটিআই হলেই প্রস্রাবের রং ঘোলাটে হয়ে যায়।
গাঢ় হলুদ
প্রস্রাবের রং গাঢ় হলুদ হলে বুঝতে হবে জন্ডিসের সম্ভাবনা রয়েছে। বিষয়টি হেলাফেলা না করে এক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তবে এই সময় ভিটামিন বি কমপ্লেক্স কিংবা মূত্রনালির সংক্রমণ দূর করার অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যেতে পারে। তাহলে প্রস্রাবের রং হালকা হয়ে কমলা বা হালকা হলুদ হতে পারে।
কমলা প্রস্রাব
কমলা রঙের প্রস্রাবের বেশ কিছু অর্থ আছে। চিন্তার বিষয় না হলেও কিছু ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হিসাবেও প্রস্রাবের রঙ কমলা হতে পারে। তবে যদি কমলা প্রস্রাবের সঙ্গে হালকা রঙের মলও হয়, তা কিন্তু চিন্তার বিষয়। অনেকসময় লিভারের সমস্যা থাকলে এমনটা হয়। তবে দীর্ঘদিন ধরে এমন সমস্যা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
গোলাপি প্রস্রাব
অনেক সময় প্রস্রাবে রক্ত চলে এলে প্রস্রাবের রঙ গোলাপি হয়। তাই গোলাপি প্রস্রাব দেখলেই অনেকে ভয় পেয়ে যান। কিন্তু এখানে বলে রাখি মূলত চারটি কারণে গোলাপি প্রস্রাব হতে পারে। প্রস্রাবে রক্ত আসা ছাড়াও অনেকসময় কোনও বিশেষ ওষুধ বা টক্সিনের কারণেও এমনটা হতে পারে। এছাড়া টক্সিন, লেড বা পারদের কারণেও গোলাপি প্রস্রাব হতে পারে। কিন্তু যদি রক্তের কারণেই গোলাপি প্রস্রাব হয় তাহলে ইউটিআই, টিউমর, প্রস্টেটের সমস্যা, কিংবা কিডনিতে স্টোন হয়ে থাকতে পারে।
Leave a Reply