ভয়ঙ্কর পুতুল রবার্ট

‘সরি রবার্ট’! সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল এই ভুতুড়ে পুতুলকে সরি বলছেন সবাই! কিন্তু কে রবার্ট? কেন অ্যানাবেল-এর থেকেও ভয়ানক এই ভুতুড়ে ছেলে পুতুল? কেন সবাই সরি বলছেন তাঁকে? কেন পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর পুতুল রবার্ট? অভিশপ্ত এই পুতুলের কাহিনী শুলনে ভয়ে কাঁপবে হাঁটু? রবার্টের চোখের দিকে তাকিয়েই সবাই শিউরে ওঠেন কেন? শুনলেই গায়ে কাঁটা দেবে গায়ে!

পুতুল মানেই বাচ্চাদের অত্যন্ত প্রিয় একটি খেলনা। যা নিয়েই সকাল থেকে রাত কাটিয়ে দিতে পারে বাচ্চারা। অনেকে আবার রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময়ও পাশে পুতুল নিয়ে ঘুমায়। কিন্তু সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল একটি ভুতুড়ে পুতুল রাতের ঘুম উড়িয়েছে বহু মানুষের। কিছু না জেনেই সবাই সরি বলছেন তাকে। তাই গত কয়েকদিন ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিং-য়ে রয়েছে ‘সরি রবার্ট’। ‘Robert- Most Haunted Doll in the world’। একটি ভয়ঙ্কর ভূতুড়ে পুতুলের ছবির সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়াচ্ছে এই ক্যাপশন।অনেকেই জানেন না এই ভূতুড়ে পুতুলের কথা।

তাই  আজ আপনাদের শোনাব এই অলৌকিক পুতুলের অজানা কাহিনী । যা দেখতে নিতান্ত সাধারণ একটি পুতুলের মত হলেও তার কর্মকাণ্ড একেবারেই স্বাভাবিক নয়। বিশ্ব বিখ্যাত এই ভুতুড়ে পুতুলের কাহিনী শুনলে ভয়ে হাড় হিম হয়ে আসে! ফ্লরিডার ফোর্ট ইস্ট মার্টেলো মিউজিয়ামের এই অভিশপ্ত ভুতুড়ে পুতুলটি রবার্ট নামে পরিচিত। নাবিকের পোশাক পরা রবার্টের চোখমুখে স্পষ্ট উদাসীনতার ছাপ। রবার্টের মাথায় টুপি, হাতে একটি ছোট্ট কুকুর। কাঠের চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকা এই ছোট্ট ছেলে পুতুলটি ১৯৯৪ সাল থেকে জায়গা পেয়েছে মিউজিয়ামে। তার আগে অবশ্য এই ভুতুড়ে পুতুলটির বাসস্থান ছিল ফ্লরিডার কি ওয়েস্ট শহরের ওটো পরিবার।

কিন্তু প্রশ্ন হল এই পুতুলটিকে দেখে সবাই কেন ভয় পাচ্ছে? কেনই বা  সবাই ‘সরি’ বলছে তাকে? ‘ভূতুড়ে পুতুল’ রবার্টের চোখের দিকে তাকিয়েই সবাই শিউরে ওঠেন কেন? এর উত্তর পেতে গেলে প্রথমেই জানতে হবে ১১৯ বছরের পুরনো ইতিহাস।

একসময় কি ওয়েস্টের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী, তথা লেখক ছিলেন রবার্ট ইউজিন ওটো। তাঁর দাদু ছোট বেলায় তাঁকে জার্মানি থেকে একটি পুতুল এনে দিয়েছিলেন। পরে রবার্ট ওটোর নামেই সেই পুতুলের নাম রাখা হয় রবার্ট। ওটোর সর্বক্ষণের সঙ্গী ছিল এই পুতুল রবার্ট। প্রচলিত জনশ্রুতি অনুযায়ী  রবার্ট নাকি ওই পুতুলের সঙ্গে নিয়মিত কথাও বলতেন! এমনকি ছোটবেলা থেকেই রবার্ট নিজের সমস্ত অন্যায় কাজের দায় চাপিয়ে দিতেন এই পুতুলের উপর।

কেউ কেউ বলে থাকেন, ওটোর বাড়ির জানলার উপরে বসিয়ে রাখা পুতুলটি নাকি মাঝে মধ্যেই সেখান থেকে ‘গায়েব’ হয়ে যেত। শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও এই পুতুল নিয়ে প্রচলিত রয়েছে আরও বেশ কিছু ভৌতিক জনশ্রুতি। তাই অনেকেই নাকি ভুতের ভয়ে এই বাড়ির আশপাশেও পা মাড়াতেন না।

১৯৭৪ ওটোর মৃত্যুর পর তাঁদের বাড়ি বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু তখনও  ওই বাড়িতেই ছিল ভুতুড়ে পুতুল রবার্ট। অনেকে দাবি করেন ওই বাড়ির ছাদে হাঁটাচলার-ও শব্দ শুনতে পাওয়া গিয়েছে। কেউ কেউ আবার  বলেন ওই বাড়ির ছাদ থেকে অট্টহাসিরও শব্দ শোনা গিয়েছে। এমনকি বাড়ির মালিক বদলে গেলেও ওই বাড়িতে ‘রাজত্ব’ করতো ওই ‘ভূতুড়ে পুতুল’ রবার্ট! পরবর্তীতে মিউজিয়ামে আনার পর থেকেই ‘ভূতুড়ে পুতুল’ রবার্টকে নিয়ে মানুষের মধ্যে কৌতুহল আরও বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে মানুষের ভীড়-ও।

সবচেয়ে আশ্চর্য্যের বিষয় হল মিউজিয়ামে রবার্টকে দেখতে যাওয়া দর্শকদের অনেকেই দাবি করেছেন তাঁরা যখনই পুতুলটির ছবি তোলার চেষ্টা করেছেন, তখনই নাকি তাঁদের ক্যামেরা কাজ করেনি। কিন্তু অদ্ভুতভাবে মিউজিয়ামের বাইরে বেরতেই ওই একই ক্যামেরায় তারা চুটিয়ে ছবি তুলেছেন।

পরবর্তীতে রবার্টের কাহিনি নিয়ে তৈরী হয়েছে একাধিক সিনেমা, আর  টিভি শো। যা দেখে  রবার্টকে দেখার জন্য মিউজিয়ামে ভীড় বেড়েছে  আরও অনেকের। যদি এই প্রচলিত জনশ্রুতিকে অনেকেই  অন্ধবিশ্বাস বা কুসংস্কার বলে উড়িয়ে দিয়েছে। অনেকের দাবি, এই কাহিনি প্রচার করার পিছনে অসাধু ব্যক্তিদের অন্য কোনো উদ্দেশ্যও থাকতে পারে।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *