জানেন কিভাবে মন্দির ভেঙ্গে বাবরি মসজিদ তৈরি হয়েছিল? আবার কিভাবে সেই বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে, রাম মন্দির তৈরি হল? ১০০ জনের মধ্যে ৯০ জনই জানেন না

জানেন কিভাবে মন্দির ভেঙ্গে বাবরি মসজিদ তৈরি হয়েছিল? আবার কিভাবে সেই বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে, রাম মন্দির তৈরি হল? ১০০ জনের মধ্যে ৯০ জনই জানেন না

জানেন কিভাবে মন্দির ভেঙ্গে
বাবরি মসজিদ তৈরি হয়েছিল?

আবার কিভাবে সেই বাবরি মসজিদ
ভেঙ্গে, রাম মন্দির তৈরি হল?

১০০ জনের মধ্যে
৯০ জনই জানেন না!

আসল ঘটনা জানলে
শিউরে উঠবেন!

এই মুহূর্তে গোটা দেশ রাম মন্দির উদ্বোধনকে ঘিরে আনন্দে আত্মহারা। কিন্তু বন্ধুরা আজকে যে মন্দিরকে ঘিরে এত উন্মাদনা, এত উত্তেজনা,, সেই রাম মন্দিরের জন্মস্থানে রয়েছে বিস্তর কলঙ্কের দাগ ও রক্তের ছাপ। একেবারে মসৃণ ও সহজ ছিল না রাম মন্দিরের জন্ম। এই রাম মন্দিরের সঙ্গে জুড়ে আছে বাবরি মসজিদের ক্ষতবিক্ষত চিহ্ন। যা ভারতের ইতিহাস কখনো, কোনদিন ভুলতে পারবে না। বাবরি মসজিদ ও রাম মন্দিরকে নিয়ে সংঘাত ঘটেছে বার বার। নোংরাভাবে হাতাহাতি দিয়ে জড়িয়েছে হিন্দু ও মুসলিম ভাইয়েরা। এই বিতর্ক ও ঝামেলা এখনো থামেনি। কিন্তু আপনারা কি জানেন কেন এত বিতর্ক এই বাবরি মসজিদ ও রাম মন্দিরকে ঘিরে?

এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন আজকের ভিডিওতে। সম্পূর্ণ ভিডিওটি ধাপে ধাপে দেখলে আপনারা বুঝতে পারবেন ঠিক কি ঘটেছিল।

ঘটনার সূত্রপাত ১৫২৮ সাল থেকে। সে সময় হিন্দু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একাংশ দাবি তোলেন, হিন্দুদের পরম আরাধ্য দেবতা রাম,,, যেখানে জন্মগ্রহণ করেছেন,,, সেখানে একটি মসজিদ তোলা হয়েছে। সেই সমস্ত হিন্দুরা আরো দাবী করেছিলেন এই মসজিদটি সম্রাট বাবরের আদেশে তৈরি করা হয়েছিল। সে মসজিদটি পরবর্তীতে জনমুখে বাবরি মসজিদ নামে পরিচিত লাভ করে। হিন্দুরা আরও দাবি করেছিলেন সেখানে মসজিদ গড়ার আগে একটি মন্দির ছিল। যা মুসলিমরা ভেঙ্গে ফেলেছিলেন। এই নিয়ে কিছুটা ঝামেলা তৈরি হলো পরবর্তীতে সেটি চাপা পড়ে যায়।

কিন্তু ১৯৫৩ সালে আচমকা পরিস্থিতি ভয়ংকর হয়ে ওঠে। সেই বছর প্রথমবার হিন্দু ও মুসলিমরা সাংঘাতিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। ধর্মকে কেন্দ্র করে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে নোংরামো শুরু হয় বলে জানা যায়। সে সময় হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই ওই বাবরি মসজিদকে ঘিরে টানাটানি শুরু করে দেয়। কেউ এক চুল জমি ছাড়তে নারাজ ছিল না। দুজনের মুখেই সোনা গিয়েছিল বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সুচাগ্র মেদিনী। দুই সম্প্রদায়কে ঠান্ডা করার জন্য,,, সেই সময় তৎকালীন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকার ওই বাবরি মসজিদের মাঝখানে বেড়াজাল দিয়ে,,, দুই গোষ্ঠীর জন্য উপাসনালয় তৈরি করে দেন। একপাশে মুসলিমদের জন্য মসজিদ করে দেওয়া হয়,, অন্যপাশে হিন্দুদের জন্য মন্দির করে দেওয়া হয়। মূলত বাবরি মসজিদের ভেতরের দিকটিতে মুসলিমদের জন্য রাখা হয় এবং বাইরের দিকটা হিন্দুদের দেওয়া হয়। এরপর বেশ কিছু বছর পরিস্থিতি কিছুটা ঠান্ডা ছিল।

কিন্তু আচমকা ১৯৪৯ সালে ১ দিন সংশ্লিষ্ট বাবরি মসজিদ ভিতরে একটি বস্তু দেখা যায়। যেটি ছিল হিন্দুদের ভগবান শ্রী রামচন্দ্রের মূর্তি। যা দেখতে পাওয়া মাত্রই ক্ষেপে লাল হয়ে যান মুসলিম ধর্মাবলম্বীর মানুষেরা। সেই সময় হিন্দু মৌলবাদীরা হিন্দুদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তোলেন। মুসলমানদের দাবি ছিল, হিন্দুরা ইচ্ছাকৃত ভাবে মসজিদের ভিতরে ঈশ্বর শ্রী রামচন্দ্রের মূর্তি রেখেছে। মুসলমানদের ভাবাঘাতে আঘাত করার জন্য হিন্দুরা এই চক্রান্ত করেছিল বলে গুঞ্জন রটে। এদিকে মুসলমানদের এই সমস্ত হিন্দুরা দাবি অগ্রাহ্য করে। তারা বলতে থাকে এমন কোনো কাজ তারা করেননি। এভাবেই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছে। দুপক্ষের মানুষেরাই, প্রতিবাদে সামিল হন এবং দেওয়ানি মামলা দায়ের করেন। সেই সময় সরকার কোনভাবেই এই দুপক্ষকে ঠান্ডা করতে পারছিলেন না। বাধ্য হয়ে সরকার ওই গোটা এলাকাটিকে বিতর্কিত স্থান বলে ঘোষনা করে দেয়। একই সঙ্গে রাম মন্দিরের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এরপর আসি ১৯৮৪ সালের কথায়। এই বছর থেকে ধীরে ধীরে হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে আবার হাতাহাতি শুরু হতে থাকে। এই বছরটিতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ কতৃপক্ষ নড়েচড়ে বসেন। তারা ভগবান শ্রী রামচন্দ্রের জন্মস্থান উদ্ধার এবং তার সম্মান রক্ষার্থে একটি কমিটি এবং আন্দোলন গড়ে তোলেন। ওই সময় হিন্দুরা দাবি তোলেন ওই বিতর্কিত স্থানে তারা একটি মন্দির গড়ে তুলবেন। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের এই দাবিটিকে সেই সময় প্রশ্রয় দিয়েছিলেন, ভারতের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লাল কৃষ্ণ আডবাণী।

এরপর চলে আসি ১৯৮৬ সালের কথায়। ওই বছর অযোধ্যার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদেশ দেন, বাবরি মসজিদের দরজা খুলে হিন্দুদের সেখানে প্রার্থনা করার সুযোগ দেওয়া হোক। মুসলিমরা সেই সময় জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের এই আদেশ মেনে নিতে পারেননি। তারা অত্যন্ত ক্ষেপে যান। এরপর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে মুসলমানরা বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটি গঠন করেন। এরপর পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হতে শুরু করে। হিন্দু ও মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের কেউই দমার পাত্র ছিল না। মুসলিমদের অ্যাকশনে হিন্দুরা বড় পদক্ষেপ নিয়ে ফেলে। ওই একই বছরেই,,, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তরফে বিতর্কিত স্থানটিতে রাম মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর নির্মাণ করে নতুন করে প্রচারণা শুরু করা হয়। সেই সঙ্গে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্যরা বিতর্কিত বাবরি মসজিদের আংশিক ক্ষতি সাধন করে। সে প্রধান ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ছিলে চন্দ্র শেখর। তিনি বহুবার,,, বহু রকম ভাবে হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে ঝামেলা থামানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয়নি।

এরপর আসি ১৯৯১ সালের কথায়। সেই বছর উত্তরপ্রদেশে বিজেপি ক্ষমতায় আসে। বিজেপি ক্ষমতায় আসতে না আসতেই পরিস্থিতি অনেকটা বদলে যেতে থাকে। বাবরি মসজিদের দখল ধীরে ধীরে হিন্দুদের হাতে আসতে থাকে। ১৯৯২ সালে বিজেপি এবং শিবসেনা মিলে, বিতর্কিত বাবরি মসজিদটিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে ফেলে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়ানক হয়ে উঠে যে, যা নিয়ন্ত্রণে আনা একেবারেই সহজ ছিল না। দুপক্ষের হাতাহাতির জেরে দুই হাজার জনেরও বেশি মানুষ মারা যায়।

এরপর আসি ১৯৯৮ সালের কথায়। ওই বছর বিজেপি অটল বিহারী বাজপেয়ীর অধীনে জোট সরকার গঠন করেন। এরপর পরিস্থিতি দ্রুত জটিল হতে পারে। ২০০২ সালেও দু পক্ষের ঝামেলা বাঁধে। এরপর ২০০২ সালে, ওঠে আসল প্রশ্ন! ধর্মীয় ভাবে পবিত্র ও বিতর্কিত জায়গাটির মালিক কারা হিন্দুরা নাকি মুসলিমরা? এই নিয়ে শুরু হয় তর্ক বিতর্ক। এরপর শুরু হয় পরীক্ষা নিরীক্ষা। বিতর্কিত স্থানটিতে হিন্দু নাকি মুসলিম কাদের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে তার তদন্ত শুরু হয়। এরপর ২০০২ সালের আগস্ট মাসে নৃতত্ত্ববিদরা অর্থাৎ ভূবিজ্ঞানীরা প্রমাণ পান, বিতর্কিত মসজিদটির নিচে মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। এরপর হিন্দু মুসলিমদের মধ্যে বিস্তর ঝড় ওঠে। অবশেষে আইন ও আদালতের ন্যায্য বিচারের মাধ্যমে ২০১৯ সালের নভেম্বরে বিতর্কিত স্থানটিতে হিন্দুদের রাম মন্দির গড়ার পক্ষে রায় দেয় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *