বাংলার মুখ্যমন্ত্রী

দেশজুড়ে রাজনৈতিক দলগুলির পাখির চোখ এখন ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি বিরোধী মেগা জোট ইন্ডিয়া-র  প্রধানমন্ত্রী পদে মুখ দাবিদার কে? যা নিয়ে এই মুহূর্তে জল্পনা তুঙ্গে! তবে এই তালিকায় অনেকেই এগিয়ে রাখছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নাম। কিন্তু সেই সাথে প্রশ্ন উঠছে সত্যিই যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগামী দিনে দেশের প্রধানমন্ত্রী হন তাহলে পরবর্তীতে বাংলার মনসদে বসবেন কে? কে হবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী? আসুন দেখা যাক বাংলার সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রীর তালিকায় নাম রয়েছে কার কার?

কল্যাণ ব্যানার্জী

এই তালিকায় প্রথমেই নাম রয়েছে কল্যাণ ব্যানার্জীর। তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই দলের সাথে রয়েছেন তিনি। তাই অভিজ্ঞ নেতা হিসাবে তিনি দলের ভালো ও খারাপ উভয় দিনেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি একজন সুদক্ষ আইনজীবী। কল্যাণ ব্যানার্জী এমন একজন নেতা যিনি মনে করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া তার আর কোনো নেতা বা নেত্রী নেই। যা নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে তার মনোমালিন্যও নজর এড়ায়নি কারও। তাই তাঁর মতো নির্ভীক,দলের প্রতি আনুগত তৃণমূল নেতাকে রাজ্যের সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী ভাবা যেতেই পারে

ফিরহাদ হাকিম :

মমতা বন্দোপাধ্যায়ের পর বাংলার সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রীর তালিকায় যার নাম না নিলেই নয় তিনি হলেন পুরমন্ত্রী ফিরদ হাকিম। তবে তিনি নিজে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। আর বিরোধী দল  বিজেপি একপ্রকার ধর্মের রাজনীতিতে বিশ্বাসী।তাই সেদিক দিয়ে  বিচার করলে  ফিরোদ হাকিমকে মুখ্যমন্ত্রী করা রলে হিন্দু ভাবাবেগ আঘাত পেতে পারে। তাই তাঁর মুখ্যমন্ত্রী হওয়া নিয়ে ঝুলছে প্রশ্ন চিন্হ।

বিশ্বজিৎ দাস :

নামের পাশে ‘দলবদলু’র তকমা জুড়লেও পরবর্তীতে বিশ্বজিৎ দাসকেও অন্যতম মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার হিসেবে মনে করা হচ্ছে। মতুয়াগড় বনগাঁর দায়িত্ব রয়েছে তাঁর ওপর। বর্তমানে বনগাঁ সাংগঠনিক সভাপতি ও বিভিন্ন চেয়ারম্যান পদের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তিনি। অত্যন্ত প্রভাবশালী এই বিশ্বজিৎ দাস একসময় জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ঘনিষ্ঠ স্থানীয় নেতাদের উপর রাগ করে  চলে গিয়েছিলেন বিজেপি। বিধানসভা ভোটে জিতে তিনি আবার ফিরে আসেন তৃণমূলে। বর্তমানে তাঁর ভাবমূর্তি আরো পরিষ্কার হয়েছে বঙ্গ রাজনীতিতে। তাই  প্রাসঙ্গিকতার জন্যই তাকে মুখ্যমন্ত্রী পদের অন্যতম দাবিদার মনে করা হচ্ছে।

অরূপ বিশ্বাস :

তালিকায় রয়েছন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছায়াসঙ্গী অরুপ বিশ্বাস।  তৃণমূলের শুরুর থেকেই সঙ্গে  রয়েছেন তিনি। দক্ষিণ কলকাতায় বরাবরই  অরূপ বিশ্বাসের বিরাট দাপট। আজও দলের মধ্যে তিনি নিজের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি বজায় রেখেছেন। এই মন্ত্রী নিজের গোটা জীবনটাই মানুষের সেবায় এবং দলের জন্য আত্মত্যাগ করেছেন।  দলের প্রতি তাঁর আনুগত্য আর মানুষের সেবা করার দায়বদ্ধতাই তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী পদের সুযোগ্য দাবিদার করে তুলেছে।

মহুয়া মৈত্র

বাংলার সম্ভাব্য মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর তালিকায় প্রথমেই নাম রয়েছে মহুয়া মৈত্রর। তাঁর প্রখর বুদ্ধি, বিচক্ষণতা, রাজনৈতিক দূরদর্শিতাই তাঁকে সবার থেকে আলাদা করে তুলেছে। মমতা ব্যানার্জির পর এই রাজ্যের সবচেয়ে চর্চিত নারী রাজনীতিবিদ তিনি। কোথাও কোনো অন্যায় হলেও রেয়াত করেন না তিনি। পাশাপাশি অসহায় মানুষদের প্রতিও যত্নশীল তিনি। তাঁর রুচিশীল মার্জিত ব্যবহার, শিক্ষা দীক্ষা শোঃ সেবাপরায়ন মনোভাবই তাঁকে রাজ্যের মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর তালিকায়  এগিয়ে রেখেছে তাঁকে।

কাকলি ঘোষ দস্তিদার

মহুয়া মিত্রের পরেই মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর যোগ্য দাবিদার হিসাবে নাম রয়েছে  কাকলি ঘোষ দস্তিদারের। বাংলার অসংখ্য মানুষের কাছে তাঁর ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতাই তাকে এই পদের দাবিদার করে তুলেছে। দলের তরফে যখনই তাঁকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তা সুনিপুন ভাবে পালন করেছেন তিনি।

বাবুল সুপ্রিয়

নাম রয়েছে গায়ক বাবুল সুপ্রিয়েরও। তৃনমূলের তরুন প্রজন্মের মুখ তিনি। বিজেপি ছেড়ে অনেকদিন আগেই তিনি নাম লিখিয়েছেন  তৃণমূলে। তাই সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে বিজেপির অন্দরের স্ট্রাটেজি অনেকটাই জানা রয়েছে তাঁর। সেলিব্রেটি গায়ক হিসাবে এমনিতেই তাঁর ব্যাপক ফ্যান ফলোয়িং রয়েছে। যা নিঃসন্দেহে তাঁর জন্য বাড়তি পাওনা।

সৌরভ গাঙ্গুলী :

এরপরেই রয়েছেন বাংলার আইকন সৌরভ গাঙ্গুলী। যদিও সৌরভ বরাবরই  সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরত্ব বজায় রাখতেই ভালোবাসেন। তবে  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে বরাবরই  সুসম্পর্ক রয়েছে তাঁর। তাই সেই দিদি ভাইয়ের সম্পর্কের সূত্রেই মুখ্যমন্ত্রী সৌরভ গাঙ্গুলীকে এই প্রস্তাব দিতেই পারেন। আর মহারাজ বাংলার সিংহাসনে দেখতে পারলে খুশিই হবেন বঙ্গবাসী।

 

দীপক অধিকারী

বাংলার সুপারস্টার দেবকেও সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ভাবা যেতে পারে। অভিনয়ের পাশাপাশি এত বছরের রাজনৈতিক জীবনে আজ পর্যন্ত কোন বিরোধী পক্ষ দেবকে নিয়ে কোনো  কু’মন্তব্য করতে পারেনি। এই ভাব মূর্তির জন্য দেবকেও বাংলার সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী বলে মনে করা হচ্ছে।

 

বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়

এছাড়াও নাম উঠে এসেছে  বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যাযয়েরও। তিনি খুব ভালো করেই জানেন কোন লবী কিভাবে সামলাতে হবে কিংবা  কিভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সামলাতে হবে। তাই মুখ্যমন্ত্রী পদের যোগ্য দাবিদার তিনি হতেই পারেন।

মলয় ঘটক:

এছাড়াও তৃণমূল মন্ত্রী মলয় ঘটককেও  রাজ্যের পরবর্তী  মুখ্যমন্ত্রী ভাবা যেতে পারে। দলীয় কার্যকলাপ আর মন্ত্রিত্ব সামলানোর সুবাদে তিনিও যথেষ্ট যোগ্য মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার।

 

চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য :

এছাড়াও রাজ্যের পরবর্তী মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে উল্লেখ করা যায় চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের নাম। একটা সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা ছিলেন তিনি আর বর্তমানে রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর  দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তিনি। একই সাথে যুক্ত রয়েছেন বিভিন্ন মহিলা সংগঠনের কর্মকান্ডের সাথে।

মালা রায়

তালিকায় রয়েছেন মালা রায়ও। রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে যথেষ্ট সুযোগ্য দাবিদার তিনি। কাউন্সিলর থেকে এমপি হয়েছেন তিনি।

মিমি চক্রবর্তী

এছাড়াও তরুণ প্রজন্মের কাছে মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে যথেষ্ট জনপ্রিয় মিমি চক্রবর্তী। রাজনীতিতেও যথেষ্ট সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন তিনি।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

এছাড়া অব্যশই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বন্দোপ্যায়ের পর রাজ্যের সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রীর তালিকায় নিঃসন্দেহে তিনিই সুযোগ্য দাবিদার। তবে যদি তাঁর  পরিবর্তে অন্য কাউকে ভাবতে হয় একমাত্র সেক্ষেত্রেই বাদবাকিদের কথা ভাবা যেতেই পারে।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *