আবার চোখ রাঙাচ্ছে করোনা! কোভিডকে সাধারণ সর্দিকাশি ভেবে অনীহা করছেন? হতে পারে হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোক! জানেন কোভিড-১৯ ভাইরাসের নতুন উপরূপ জেএন.১ কি? এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ গুলিই বা কি? এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে টিকা কাজ করবে? এখন থেকেই কি মাস্ক পরার অভ্যাস করতে হবে?
বর্ষ বরণের আগেই নতুন করে কামড় বসাচ্ছে করোনা ভাইরাস। ভাইরাল জ্বর-সর্দি-কাশির আড়ালে ধীরে ধীরে থাবা বসাচ্ছে করোনাভাইরাস। আমাদের দেশে ইতিমধ্যেই ঢুকে পড়েছে করোনার নতুন উপপ্রজাতি জেএন.১। দক্ষিণ ভারতে ছাড়াও দেশের নানা প্রান্তে ঊর্ধ্বমুখী করনার গ্রাফ। যা দেখার পর থেকেই নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
সতর্ক করতে ইতিমধ্যেই দেশের অন্যান্য রাজ্যগুলিকে নির্দেশিকাও পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী শনিবার সকালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৭৫২ জন। সেইসঙ্গে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে ৩৪২০ তে। গত ২৪ ঘন্টায় সারা দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে মোট চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
তার মধ্যে দুজন কেরলের বাসিন্দা এবং একজন রাজস্থান এবং একজন কর্নাটকের বাসিন্দা। সবমিলিয়ে এই মুহূর্তে করোনার নতুন উপরূপ জেএন.১ নিয়ে চিন্তিত গোটা দেশ। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের সতর্কবার্তা পাওয়ার পর রাজ্যগুলিতেও শুরু হয়েছে করোনা ঠেকানোর তোড়জোড়।
কলকাতাতেও নতুন করে মাথা ছাড়া দিয়েছে করোনা। শুক্রবার পর্যন্ত মোট আটজনের দেহে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। তাদের মধ্যে একজন ছিল ছয় মাসের শিশু।তবে কলকাতায় আক্রান্তদের মধ্যে এই জেএন.১ রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে। গত সেপ্টেম্বর মাসেই আমেরিকায় প্রথম এই জেএন.১ এর উপরূপের সন্ধান মিলেছিল। তারপর থেকেই একে একে দেশে অনেক দেশেই করোনার এই নতুন উপরূপ ডালপালা মেলছে।
জেএন.১ করোনা ভাইরাসের বিএ.২.৮৬ ওমিক্রন প্রজাতির একটি উপপ্রজাতি। যা সম্পর্কে দেশবাসীর মধ্যে এখনও কোনও স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হয়নি। আমেরিকার ‘ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)’ জানিয়েছে, ওমিক্রন এবং ওমিক্রনের বংশধর জেএন.১ রূপ দু’টি প্রায় অভিন্ন। শুধুমাত্র সামান্য পার্থক্য রয়েছে ওমিক্রনের স্পাইক প্রোটিনের সঙ্গে। তাই এটিও এক শরীর থেকে অন্য শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সিডিসির তথ্য অনুযায়ী, করোনা সংক্রমণের যে লক্ষণগুলি দেখা যায়, অর্থাৎ, ক্লান্তি, মাথাব্যথা, কাশি, জ্বর, জেএন.১-এর সংক্রমণেও মোটামুটি একই লক্ষণ দেখা যায়।
জেএন.১-এর উপসর্গ কী?
জ্বর, কাশি হতে পারে সংক্রামিতদের।
গন্ধ, স্বাদ না-ও পেতে পারেন। এ
এছাড়া জেএন.১-এ আক্রান্ত হলে জ্বরের পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট, খেতে অনীহা, কিংবা বমি হতে পারে।
কোভিডের উপরূপ জেএন.১ অনেক উন্নততর। তাই করোনার এই নতুন উপরুপ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন ‘‘জেএন.১ হল ওমিক্রনের একটি উপরূপ। তাই এটিও, ওমিক্রনের মতোই কাজ করবে, যা অতটা ভয়ঙ্কর না হলেও প্রত্যেক নতুন উপরূপই আরও বেশি ছোঁয়াচে। এছাড়া আমাদের শরীরে যে অ্যান্টিবডি রয়েছে, তাকে আক্রমণ করার বা এড়িয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে করোনার এই নতুন রূপটি।’’
হুঁশিয়ারি, সাধারণ সর্দিকাশির থেকে অনেকটাই আলাদা কোভিডের এই নতুন রূপ। তিনি বলেন, ‘‘গোটা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমাদের কাছে যথেষ্ট পরিসংখ্যান রয়েছে। সেই পরিসংখ্যান দেখে আমরা বলতে পারি যে, কোভিডে যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন বা একাধিক বার সংক্রামিত হয়েছেন, তাঁদের হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ডায়বেটিস, ডিমেনশিয়া, অবসাদ, মানসিক সমস্যা, পেশীতে ব্যথা, ক্নান্তি হতে পারে অনেক বেশি। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে তাঁদের সমস্যা হতে পারে।’’
করোনা পরিস্থিতিরর দিকে নজর রাখছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা WHO-ও। তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ কোভিডকে হালকা ভাবে নেওয়া ঠিক নয়। তাই নাগরিকদের সচেতন হওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিশেষ করে বয়স্কদের এবং যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাঁদের মাস্ক পরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
করোনার টিকা এই উপরূপের ক্ষেত্রে কতটা কার্যকর, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নন বিশেষজ্ঞরা। তবে বিজ্ঞানীদের মত, জেএন.১-কে দুর্বল করতে সক্ষম করোনার টিকা।তাই সতর্কতা অবলম্বন করে এখন থেকেই মাস্ক পরা অভ্যাস করা উচিত।
Leave a Reply