কানে তালা লাগার কারণ কি? প্লেনে বা পাহাড়ে উঠলেই কেন কান বন্ধ হয়ে যায় জানেন? জানুন আসল কারণ? কতটা উচ্চতায় উঠলে কানে তালা লাগতে পারে জানেন? ২৪ ঘন্টা পরেও সমস্যা না কমলে হতে পারে বড় ক্ষতি! ফেলে না রেখে দ্রুত নিন চিকিৎসকের পরামর্শ!
শীতকাল মানেই ভ্রমণপিপাসু বাঙালি ব্যাগ পত্র গুছিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন। বিশেষ করে পাহাড় মানেই সবারই সব ক্লান্তি ধুয়ে মুছে সাফ করার জায়গা। আবার অনেকেই প্লেনে চেপেও ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন দেশ বিদেশে। তবে প্লেন হোক কিংবা পাহাড় উঁচুতে উঠলে অনেকেরই কানে তালা লেগে যায়। অনেকের আবার কানে ব্যথাও হয়। তাই প্লেন উঁচুতে ওঠার সময় অনেক শিশুই কেঁদে ওঠে। এটি সম্পূর্ণ শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া হলেও পুরোপুরি অবহেলা করা ঠিক নয়। তাই ২৪ ঘণ্টা পরেও কানের তালা না খুললে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কানে তালা লাগার কারণ কি?
কানের ভিতরের একটি অংশকে ‘মধ্যকর্ণ’ বলা হয়। নাক ও মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার সময় মধ্যকর্ণের ভেতরে থাকা বাতাস নিয়ন্ত্রিত হয়। মধ্যকর্ণ থেকে গলবিল পর্যন্ত যে ইউসটেকিয়ান টিউব থাকে তার মাধ্যমে বাতাস মধ্যকর্ণে প্রবেশ করে। এই বাতাস ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হলে আমাদের কানে তালা পড়ে না। তাই তখন আমাদের শুনতেও কোন অসুবিধা হয় না। কিন্তু হঠাৎ করেই সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেকটা উঁচুতে উঠলে কিংবা নিচে নামলে এই বাতাসের ভারসাম্যের তারতম্য ঘটে। মূলত তখনই কান বন্ধ হয়ে যায়।
তবে উচ্চতা নয় একেক জন মানুষের উপরেই বিষয়টি নির্ভরশীল। তাই অনেকের আট কিংবা দশতলার ওপর গেলেই কানে তালা লেগে যায়। আবার অনেকের মাটির নিচে গেলেও একই সমস্যা হয়। আসলে খুব উঁচুতে বা মাটি থেকে খুব নিচে নামলে বায়ুর চাপের ব্যাপক পরিবর্তন হয়। যার ফলে কানে তালা লাগার সাথে সাথেই কানে প্রচন্ড যন্ত্রণা শুরু হয়। অনেক সময় কান থেকে জলের সঙ্গে রক্তও বেরোয়। এক্ষত্রে দ্রুত ডাক্তার দেখতে হবে। তা না হলে কানের ভেতরে জল জমে কানের পর্দা ফুটা হয়ে যাওয়ার যেতে পারে। ফলে কানের পর্দার বিরাট ক্ষতি হয়ে যায় কমে যেতে পারে শ্রবণশক্তিও।
তবে বড়রা নিজেদের কষ্টের কথা মুখে বলতে পারলেও শিশুরা তা পারে না। তাই সমস্যা হয় সেই শিশুদের যারা কথা বলতে শেখেনি। তাই তারা কান্নাকাটি করলে বাবা-মায়েরা ভাবেন হয়তো বাচ্চার খিদে পেয়েছে কিংবা অন্য কোনো সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু আসলে হয়তো তার কান বন্ধ হয়ে গিয়ে ব্যথায় অস্বস্তি হচ্ছে।
সাধারণ কয়েকটি নিয়ম মেনে চললেই এ সমস্যার সমাধান করতে পারবেন আপনি নিজেই। তাই জেনে নিন কী করবেন এই পরিস্থিতে?
প্লেনে ওঠার ঘণ্টা খানেক আগে জাইলোমেটাজোলিন–জাতীয় ওষুধ দুই নাকে চার ফোঁটা করে দিয়ে দিন। বিমানে ওঠার পরেও অসুবিধা হলে আবার দুই নাকে চার ফোঁটা করে দিয়ে দিতে হবে।
চুইংগাম চিবোলে কিংবা লজেন্স মুখে রেখে ক্রমাগত চুষতে থাকলে নাকের টিউবটি খোলে আর বন্ধ হয়। এটি কানে তালা লাগা বন্ধ করার খুব দ্রুত এবং সহজতম উপায়।
প্লেনে উঠেই কানে কিছুটা নরম তুলো গুঁজে রাখুন।
এছাড়াও মাঝেমধ্যে নাক ও মুখ বন্ধ করে হালকা করে ঢোক গিলেও এই সমস্যার সমাধান করা যায়। তবে কখনওই খুব জোরে ঢোক গিলতে যাবেন না।
শিশুদের জন্য প্লেনে চড়ার আগে নাক, কান ও গলাবিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নাকের ড্রপার অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে। দরকার হলে প্লেনে ওঠার আগেই দুই ফোঁটা করে শিশুর নাকে দিয়ে দিতে হবে ।
কিন্তু প্লেনের সফর শেষ হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পরেও যদি কারও এই সমস্যা থেকে যায় তাহলে দেরি না করে অবিলম্বে নাক–কান–গলা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হবে ।
Leave a Reply