প্রোটিনের ‘পাওয়ার হাউস’ ডিম! ডিম খেতে তো ভালোবাসেন সকলেই! কিন্তু জানেন ডিম উপকারিতা আর অপকারিতাই বা কি? শীতে রোজ ডিম খেলে কি হতে পারে জানেন? বেশি ডিম খেলে কি সমস্যা হতে পারে জানেন?
ডিমকে প্রোটিনের ‘পাওয়ার হাউস’ বলা হয়ে থাকে। আট থেকে আশি সকলেই ব্রেকফাস্ট কিংবা দিনের যেকোনো সময় ডিম খেয়ে থাকেন হামেশাই। এক কথায় প্রোটিনের সবথেকে ভালো এবং সস্তার একটি উৎস ডিম।দিনে মাত্র দুটি ডিম খেলেই লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ডিম ওজন কমাতেও সাহায্য করে। তাই একাধিক পুষ্টিগুণে ভরপুর ডিমকে খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরাও।
তাই চিকিৎসকদের মতে সুসম খাবারের তালিকার একেবারে প্রথমেই রয়েছে ডিম। ডিমের সাদা অংশে থাকে বিশুদ্ধ প্রোটিন। তাই শিশুর শারীরের সম্পূর্ণ বিকাশে, কিংবা রোগমুক্ত হওয়ার পর শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে ডিমের জুড়ি মেলা ভার!
ডিম খাওয়ার উপকারিতা কি কি?
ডিমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি, বায়োটিন, থিয়ামিনসহ আরও অনেক উপকারী উপাদান থাকে। যা ত্বক, চুল এবং নখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
প্রতিদিন দুটো করে ডিম খেলে বাড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ।
ডিমে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্টস। যা, দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে।
প্রতিদিন দু’টো করে ডিম খেলে তা স্মৃতিশক্তি উন্নত করে।
ডিমে থাকা উপকারী উপাদান পেশি গঠনে সাহায্য করে।
তবে বেশি ডিম খাওয়াও ভালো নয়। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই, ডিম সবসময় স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।
কাদের ক্ষেত্রে ডিম খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে?
পুষ্টিবিদদের মতে যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টরল, হার্টের সমস্যা কিংবা হাই ইউরিক অ্যাসিডের মতো সমস্যা রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে ডিমের কুসুম এড়িয়ে চলাই ভাল। এছাড়া যাঁদের কার্ডিওভাসকুলার অথবা অত্যাধিক স্থুলতার সমস্যা রয়েছে, তাঁদের ডিম এড়িয়ে চলাই ভাল। তবে ডিমের কুসুম বাদ দিয়ে সাদা অংশটি খেতে পারেন।
ডিম খাওয়ার অপকারিতা কি?
বেশি ডিম খেলে অনেকের পাচনতন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলে। যা পেট ব্যথার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। বেশি ডিম খেলে গ্যাস, বমি বমি ভাব, অতিরিক্ত চর্বি, কোলেস্টেরল ছাড়াও আরও অনেক রোগের ঝুঁকি বাড়ে। দেখা দিতে পারে পেটে গ্যাস বা ফোলাভাবের মতো সমস্যাও ।
ডায়াবিটিস বা প্রিডায়াবিটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা ডিম খেলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। ডিমের কুসুমে এক ধরনের উপাদান রয়েছে , যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। যা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
একটা ডিম থেকে ১৮৬ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল সরবরাহ হয়। তাই বেশি ডিম খেলে খারাপ কোলেস্টেরল বেড়ে যায়। যার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকিও বেড়ে যেতে পারে।
কোন ডিমে কতটা কোলেস্টরল আছে?
পুষ্টিবিদরা জানাচ্ছেন, ১০০ গ্রাম ওজনের মুরগির ডিমে মোট ২৫৫ মিলিগ্রাম আর ১০০ গ্রাম ওজনের হাঁসের ডিমে মোটামুটি ৩৫৫ মিলিগ্রাম কোলেস্টরল থাকে। পুষ্টিবিদদের মতে, দিনে দু-একটা ডিম খেলে তা রক্তের কোলেস্টরলের মাত্রাকে খুব একটা প্রভাবিত করে না।
শীতকালে ডিম খেলে কি হয়?
বিশেষজ্ঞদের মতে, শীতকালে ঠাণ্ডায় শরীর আর বাইরের তাপমাত্রার তারতম্যের জন্য অনেকেরই হজমের সমস্যা বাড়ে। তাই ডিমের মতো উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাদ্য উপাদান হজম করতে সমস্যা হতে পারে। ‘ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন’-এর তরফে জানানো হয়েছে, শীত-গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা বছরের কোনও সময়েই দিনে ৩টের বেশি কুসুম সহ ডিম খাওয়া উচিত নয়। কারণ ডিমের মতো উচ্চ কোলেস্টেরল, এবং প্রোটিন যুক্ত খাবার ভবিষ্যতে কার্ডিওভাসকুলারের মতো সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।
তবে যাঁদের উচ্চ কোলেস্টরল, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের সমস্যা বা ইউরিক অ্যাসিডের মতো সমস্যা নেই, তাঁদের কিন্তু শীতকালে ডিম খাওয়া খুবই উপকারী! শীতকালে প্রতিদিন ২টি ডিম খেলে সাধারণ মরশুমি সর্দি-কাশির ঝুঁকিও কমায়। তবে শিশু ছাড়াও গর্ভবতী মহিলাদের জন্যও ডিম অত্যন্ত উপকারী! যা ভ্রূণের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সাহায্য করে। তাই চিকিৎসকরাও গর্ভাবস্থায় মহিলাদের ডিম খাওয়ার পরামর্শ দেন। তাই নিজের শরীর বুঝে ডিম খেতে পারেন সারাবছর। তবে কায়িক পরিশ্রম না করে নিয়মিত ডিম খাওয়া উচিত নয় একেবারেই।
Leave a Reply