রাম মন্দিরের নকশা, ৩৪ বছর আগেই তৈরি হয়েছিল! যা তৈরি করেছিলেন চন্দ্রনাথ সোমপুরা!

জানেন? রাম মন্দিরের নকশা, ৩৪ বছর আগেই তৈরি হয়েছিল! যা তৈরি করেছিলেন চন্দ্রনাথ সোমপুরা! কিন্তু কে এই চন্দ্রনাথ সোমপুরা?

জানেন? রাম মন্দিরের নকশা,
৩৪ বছর আগেই তৈরি হয়েছিল!

যা তৈরি করেছিলেন
চন্দ্রনাথ সোমপুরা!

কিন্তু কে এই
চন্দ্রনাথ সোমপুরা?

কিভাবে তিনি এত আগে
রাম মন্দিরের নকশা এঁকেছিলেন?

গোটা দেশজুড়ে রামমন্দির নিয়ে আলোচনার বন্যা বইছে। আর কটা দিন বাদেই রাম মন্দিরের দরজা খুলে যাবে। তবে যে রাম মন্দির নিয়ে এত আলোচনা, এত হৈ চৈ, সেই রাম মন্দিরের নকশাটি কে নির্মাণ করেছেন সেই মানুষটির নাম অনেকেই জানেন না। সেই মানুষটির নাম চন্দ্রনাথ সোমপুরা! যিনি না থাকলে আজ যে নজরকাড়া রাম মন্দিরের নকশা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, সেটি হয়ত দেখতেই পেতেন না। আজ থেকে গুনে গুনে ঠিক ৩৪ বছর আগে, চন্দ্রনাথ সোমপুরা রাম মন্দিরের নকশা এঁকেছিলেন। এই মানুষটিই হলেন অযোধ্যার রাম মন্দিরের আসল নায়ক।

অনেক লড়াই ও অন্ধকার পেরিয়ে আজ তিনি জনপ্রিয় স্থাপত্য শিল্পী হয়েছেন। ছোটবেলায় বাবাকে দেখে দেখেই তার মধ্যে নকশা আঁকার নেশা তৈরি হয়। আজ সেই নেশার জেরেই তিনি জগৎ বিখ্যাত! খোদ বিদেশ থেকে স্থাপত্যের নকশা নির্মাণের অনুরোধ আসে তার ঘরে। অযোধ্যার রাম মন্দির থেকে শুরু করে লন্ডনের সুবিখ্যাত স্বামীনারায়ণ মন্দির পর্যন্ত ছড়িয়েছে সোমপুরার হাতের জাদু। এমনকি গুজরাটের রাজধানী গান্ধীনগরের অক্ষরধাম মন্দিরটিও তিনিই তৈরি করেছেন। সোমপুরার হাতের নকশা দেখলে আপনি শুধু অবাক হতে থাকবেন! কিভাবে বড় বড় কঠিন কঠিন স্থাপত্য নির্মাণ কাঠামো কত সহজে তিনি এঁকে ফেলতে পারেন। যা সত্যিই বিস্ময়কর। দেশ থেকে শুরু করে বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাজ করেছেন এই মানুষটি। চন্দ্রনাথ বাবুর নকশার আলাদাই কিছু মাহাত্ম্য রয়েছে। আপনি দেখলে বুঝতে পারবেন কোন কোন নকশাগুলো চন্দ্রনাথ বাবুর হাতের তৈরি। তার হাতের তৈরি নকশাগুলো এতটাই বৈচিত্র্যপূর্ন যে আপনি তার মতন নকশা অন্য কোথাও আর দেখতে পাবেন না। ছোটবেলায় যখন অন্য ছেলে পুলেরা দুপুরে খেলতে যেত, তখন চন্দ্রনাথ বাবু তার বাবার নকশাগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। অবাক লাগলেও, খুবই সত্যি কথা যে, চন্দ্রনাথ বাবু স্থাপত্যের নকশা আঁকার জন্য কোনরকম প্রশিক্ষণ নেননি। তিনি তার বাবার কাছ থেকেই নকশা আঁকার হাতেখড়ি করে নিয়েছিলেন। চন্দ্রনাথ বাবুর বাবার নাম প্রভাশংকর সোমপুরা। যার হাতে তৈরি হয়েছিল গুজরাটের সোমনাথ মন্দির। তিনি পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন।

চন্দ্রনাথ বাবু, আজ থেকে চোদ্দ বছর আগে ১৯৮৯ সালে প্রথমবার রাম মন্দিরের নকশা তৈরি করেছিলেন। সেই সময় অযোধ্যার রাম মন্দির তৈরির কাজও শুরু হওয়ার কথা ছিল।। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় সেই সময় রাম মন্দির তৈরিকে কেন্দ্র করে বিস্তর ঝামেলা তৈরি হয়েছিল। যে কারণে নকশা চূড়ান্ত হলেও রাম মন্দিরের কাজ আর এগোয়নি। রাম মন্দিরের জন্য চন্দ্রকান্ত বাবু ২৩ টি নকশা তৈরি করেছিলেন। তার মধ্য থেকে একটি চূড়ান্ত হয়েছিল। সেই নকশাটি মেনেই বর্তমানে অযোধ্যার রাম মন্দিরটি তৈরি করা হচ্ছে। চন্দ্রনাথ বাবু রাম মন্দিরের সম্পূর্ণ নকশাটি সহজ ভাবে বর্ণনা করেছেন। অযোধ্যার রাম মন্দিরটি হবে অষ্টকোন আকৃতির। যা মন্দির শিল্পে একেবারেই বিরল। এই আকৃতির মন্দির কেবল একটি রয়েছে ভারতে। আর সেটি হল রাজস্থানের রনকপুরের সূর্য মন্দির। অযোধ্যার রাম মন্দিরটিতে দুটি তল থাকবে। প্রথম তলটিতে থাকবে রামলালার গর্ভ গৃহ এবং ওপরে থাকবে রামের দরবার, যেখানে রাম, সীতা, লক্ষণ এবং হনুমানের মূর্তি থাকবে। রাম মন্দিরটিতে মোট ২১২টি স্তম্ভ থাকবে। প্রতিটি স্তম্ভে ১৬টি করে মূর্তি খোদাই করা থাকবে। গর্ভগৃহে যে রামের মূর্তিটি থাকবে সেটি মার্বেল দিয়ে তৈরি হবে। এছাড়াও সমগ্র মন্দিরটির প্রতিটি কোনায় কোনায় থাকবে আভিজাত্য ও বৈচিত্র্যের ছাপ।

চন্দ্রনাথ সোমপুরা কিভাবে রাম মন্দিরের নকশা নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছিলেন জানেন?

আসলে চন্দ্রনাথ বাবু অনেক বছর ধরেই বিড়লাদের বিভিন্ন মন্দির নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেখান থেকেই তার কাজ দেখে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট তাকে অযোধ্যার রাম মন্দিরের নকশা নির্মাণের দায়িত্ব দেন। এভাবেই অযোধ্যার রাম মন্দিরের নকশা ফুটে ওঠে চন্দ্রনাথ বাবুর হাতের টানে। সেই সময় তিনি সম্পূর্ণ পেন্সিল দিয়ে অযোধ্যার রাম মন্দিরের স্কেচটি সম্পন্ন করেছিলেন। তবে ৭৭ বয়সী এই মানুষটির হাতের কাজ বর্তমানে অনেকটাই কমে এসেছে। সকলের মুখে মুখে রাম মন্দিরের এত আলোচনার মাঝে হয়ত চন্দ্রনাথ বাবুর নামটা অনেকেই ভুলেই যাচ্ছেন! এই মানুষটিকে কি সত্যিই ভুলে যাওয়া যায়? যায় না! কারণ ইনি না থাকলে হয়ত অযোধ্যার রাম মন্দিরের ইতিহাস হয়ত আজ অন্য রকম হত। যতবারই অযোধ্যার রাম মন্দিরের কথা হবে ততবারই উঠে আসবে অযোধ্যার রাম মন্দিরের নকশা নির্মাতা চন্দ্রনাথ সোমপুরার নাম।।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *