গয়ায় পিণ্ডদান

গয়াতেই কেন পিণ্ডদান করা হয় জানেন? মৃত্যুর পর গয়ায় পিন্ডদানের এই রীতির আসল কারণ জানেন? গয়াকেই কেন ভারতের একমাত্র পারলৌকিক ক্রিয়াভূমি বলা হয় জানেন? পিণ্ডদানের জন্য গয়া কেন প্রসিদ্ধ জানেন? জেনে নিন গয়ায় পিন্ডদানের এই পৌরাণিক কাহিনী।

হিন্দুদের পবিত্র তীর্থস্থানক্ষেত্র গুলির মধ্যে অন্যতম গয়া। বিশেষত পিত-মাতার ঋণ শোধের জন্য পিতৃপুরুষের কিংবা পরলোকগত আত্মার শান্তি কামনার জন্য গয়াতে পিন্ডদান করতে যান হিন্দুরা। পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তি কামনার জন্য পিণ্ডদান করতে গয়ায় যান হিন্দুরা। মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তি কামনা করে গয়ায় পিণ্ডদান করলে পরিবারের সকলের মঙ্গল হয়।  যুগ যুগ ধরে এমনটাই বিশ্বাস করেন সনাতন হিন্দু-ধর্মাবলম্বীরা। তাই গয়াকেই মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করার সেরা জায়গা বলে বিবেচনা করা হয়। তাই মৃত্যু স্বাভাবিকভাবেই হোক কিংবা অস্বাভাবিকভাবে আত্মার মুক্তি দিতে গয়ায় পিণ্ডদান করা মহৎ কর্ম।

হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী পিণ্ডদান করলে আত্মা নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবে এবং আর জন্ম নিতে হবে না, অর্থাত্‍ কারোর নামে পিণ্ডদান করা হলে জন্ম ও মৃত্যুর এই চক্র থেকে সেই আত্মা চিরকালের  মুক্তি লাভ করবে। হিন্দুপুরাণ মতে, জীবিত ব্যক্তির তিন পূর্ব পুরুষ পর্যন্ত পিতৃলোক তথা পরলোকে বসবাস করেন। স্বর্গ ও মর্ত্যের ঠিক মাঝখানে বিরাজমান এই পরলোক। আর এই স্থানের দেবতা হলেন যমরাজ। মৃত্যুর পর মর্ত্য থেকে তিনি আসেন পিতৃলোকে। এইভাবে পরবর্তী প্রজন্মের একজনের মৃত্যু হলে পূর্ববর্তী প্রজন্মের একজন পিতৃলোক ছেড়ে স্বর্গে যাওয়ার সুযোগ পান। পরমাত্মায় বিলীন হয়ে যায় আত্মা। হিন্দু ধর্মের মানুষের বিশ্বাস শ্রাদ্ধ বা তর্পণের মাধ্যমে এই গোটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার শ্রেষ্ঠ সময় পিতৃপক্ষ।

গয়া’র নামকরণের ইতিহাস:

বহু হিন্দু শাস্ত্র ও পুরাণে তর্পণ ও পিণ্ডদানের উল্লেখ রয়েছে। রামায়ণ ও মহাভারতের মতো বিভিন্ন প্রাচীন ধর্মগ্রন্থেও উল্লেখ রয়েছে গয়ায় পিণ্ড দানের ঘটন। মহাভারতে গয়াকে গয়াপুরী নামে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে অধিকাংশ মানুষই জানেন না উত্তরপ্রদেশের পারলৌকিক ক্রিয়াভূমি গয়াপুরী বা গয়া’র নামকরণের ইতিহাস।

পৌরাণিক কাহিনী বায়ুপুরাণ মতে এই গয়া নামের সাথে জড়িয়ে আছে গয়াসুর নামের এক পরাক্রমশালী ও বলশালী অসুরের আত্মত্যাগের কাহিনি। কিন্তু অসুর হলেও তিনি ছিলেন ভগবান বিষ্ণুর পরম ভক্ত। শুধু তাই নয় স্বয়ং ব্রহ্মার বেড়েই সৃষ্টি হয়েছিল তাঁর।  এই কারণেই গয়াসুরের কোনও অসুরাচিত আচরণ ছিল না। তাঁর কোনও জাগতিক মা-বাবাও ছিল না। একবার বিষ্ণুর কাছে তিনি প্রার্থনা  করেছিলেন যাতে তাঁর  শরীর স্পর্শ করা মাত্র মানুষ, অসুর , কীটপতঙ্গ, পাপী, ঋষি, মুনি, ভূত প্রেত পিশাচ সবাই মুক্তিলাভ করে। তখন গয়াসুরের সেই প্রার্থনায়  সাড়া দিয়ে শ্রীবিষ্ণু  বলেছিলেন গয়ায় গিয়ে পিণ্ডদান করলে প্রত্যেক আত্মাই মুক্তি পাবে। তাই গয়ায় আজও পিণ্ডদানের রীতি প্রচলিত রয়েছে।

 

গয়া মানে চিরকাঙ্খিত ‘শ্রীবিষ্ণুপাদপদ্ম’। তাই গয়াকে বিষ্ণুক্ষেত্রও বলা হয়। এছাড়াও রামায়ণ অনুযায়ী, সীতা কুণ্ড নামক একটি স্থানে পিণ্ডদান করেছিলেন মা জানকী। হাত বাড়িয়ে সেই পিণ্ড গ্রহণ করেছিলেন রাজা দশরথ। সেই সময় সাক্ষী ছিল অক্ষয়বট, বহমান ফল্গুনদী, গোমাতা, পুরোহিত তথা ব্রাহ্মণ এবং তুলসী।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *