এই অবস্থায় বড়দের প্রণাম করলে হবে হিতে বিপরীত! কোন অবস্থায় গুরুজনের প্রণাম করা অশুভ জানেন? বড়দের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করা হয় কেন? এটা কি শুধুই কি প্রাচীন প্রথা? নাকি রয়েছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও? ধর্মীয় এই প্রথার কি কি উপকারিতা আছে জানেন? কি বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
বাবা-মা,শিক্ষা গুরু কিংবা বয়সে বড় যে কোনো গুরুজনদেরই পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে হয়। এই শিক্ষা ছোট থেকেই দেওয়া বাড়ির বাচ্চাদের। এটাই ভারতীয় সংস্কৃতি। বয়সে বড় গুরুজনদের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলে তাঁরাও আশীর্বাদ দিয়ে থাকেন। তাই ভারতীয় সংস্কৃতিতে বড়দের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করা, এক ধরনের সম্মানসূচক অভিবাদন। তবে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলে হয় না, প্রণাম করারও নির্দিষ্ট স্থান এবং সময় রয়েছে।
সনাতন ধর্মে বড়দের পা ছোঁয়ার প্রথা বহু শতাব্দী প্রাচীন। যা আজও অনুসরণ করে চলেছেন ছোট বড় সকলেই। তেমনি রয়েছে এর বেশ কিছু উপকারিতা এবং বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও। তবে হিন্দু শাস্ত্রে এমন কিছু পরিস্থিতির কথা বলা হয়েছে যেখানে বড়রা সামনে এলেও তাঁদের পা ছুঁয়ে প্রণাম করা উচিত নয়। বড়দের পা ছুঁয়ে প্রণাম করারও বেশ কিছু অবস্থাএবং পরিস্থিতি রয়েছে। তাই যেখানে সেখানে বড়দের পা স্পর্শ করা যায় না। কারণ এক্ষেত্রে তা হিতে বিপরীত হতে পারে।
কোন কোন অবস্থায় ভুলেও পা ছোঁবেন না বড়দের?
মন্দির: ঈশ্বরের থেকে বড় কেউ নেই। তাই ঈশ্বরের পবিত্র আবাসস্থল মন্দিরে যদি কোনও প্রবীণ ব্যক্তিও থাকেন, তাহলে সেই সময়ে তাদের পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ নেওয়া উচিত নয়। কারণ এতে ভগবানের অপমান হয়।
শ্মশান: শ্মশান থেকে ফিরে আসা ব্যক্তিকে অপবিত্র বলে গণ্য করা হয়। তাই বয়সে যতই বড় হোক না কেন শ্মশান ফেরত ব্যক্তির পা স্পর্শ করা উচিত নয়। কারণ হিন্দুশাস্ত্র মতে শ্মশান ফেরত ব্যক্তির পা স্পর্শ করা অশুভ। স্নান করে শুদ্ধ ও পবিত্র হলে তবেই তার পা স্পর্শ করা উচিত।
পুজো করছেন এমন অবস্থা: ঠাকুর ঘরে বসে পুজো করছেন এমন কোনও ব্যক্তির পা-ও স্পর্শ করা যায় না। পুজো করার সময় অন্য কাওকে প্রণাম করলে ভগবানের আরাধনা ব্যাহত হয়। এতে তিনি রুষ্ট হতে পারেন। তাই ঠাকুরঘরে কখনও প্রণাম করা উচিত নয়। প্রয়োজনে পুজা শেষ হওয়া জন্য অপেক্ষা করা যেতে পারে।
ঘুমন্ত ব্যক্তি: বিছানায় শুয়ে থাকা ঘুমন্ত ব্যক্তির পা ছুঁয়ে ভুলেও কখনও প্রণাম করবেন না। বিশ্রামরত বা ঘুমন্ত ব্যক্তির পা স্পর্শ করা খুবই অশুভ। কারণ এইভাবে শুধুমাত্র মৃত ব্যক্তির পা স্পর্শ করা হয়। তাই হিন্দু শাস্ত্রমতে এতে ওই ব্যক্তির আয়ু কমে যায়। তবে কোন অসুস্থ মানুষ যদি বিছানা থেকে উঠতে না পারেন তাহলে দূর থেকেই তাঁকে হাত জোড় করে প্রণাম করা যায়।
অপবিত্র অবস্থায়: কোনও নারী বা পুরুষ যদি অপবিত্র অবস্থায় থাকেন, তাহলে তাঁর পা স্পর্শ করা উচিত নয়। এতে দুজনেরই ক্ষতি হয়।
কীভাবে প্রণাম করার রীতি?
প্রাচীন কালে মুনি ঋষিরা বড়দের পা ছুঁয়ে প্রণাম করার রীতির প্রচলন করেছিলেন। অতীতে গুরুজনের সামনে ষষ্টাঙ্গে শুয়ে তাঁর পায়ের পাতায় হাত এবং মাথা ছুঁয়ে প্রণাম করার রীতি ছিল। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রণামের রীতি বদলে গিয়েছে। এখনকার দিনে শরীর ঝোঁকালেও পায়ের পাতা পর্যন্ত স্পর্শ করেন না অনেকে। গুরুজনের হাঁটু স্পর্শ করেই সেই হাত মাথায় ঠেকান।
এটি কি শুধু প্রথা? নাকি আছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও?
এনার্জির দেওয়া নেওয়া: পায়ের পাতা স্পর্শ করার মধ্যে দিয়ে গুরুজনের থেকে ছোটদের মধ্যে শক্তির দেওয়া নেওয়া হয়।
ইগো কমায়: বড়দের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলে অহংকার কমে, যা ভালো কাজে উৎসাহ দেয়।
রক্তসঞ্চালন বাড়ায়: সামনে ঝুঁকে বড়দের প্রণাম করার সময়ে রক্তসঞ্চালন বাড়ে।
শরীরচর্চা: এসবের পাশাপাশি এটি এক ধরনের শরীরচর্চাও বটে। তাই সামনে ঝুঁকে প্রণাম করলে পেশিরও ব্যায়াম হয়।
Leave a Reply