নাগা সাধু

রহস্যে মোর নাগা সাধুদের জীবন! জানেন নাগা শব্দের অর্থ? কনকনে  শীতেও কিভাবে বস্ত্রহীন থাকেন নাগা সন্ন্যাসীরা? সারা বছর দেখা না গেলেও কুম্ভের মেলায় হঠাৎ কোথা থেকে হাজির হন এই নাগা সন্ন্যাসীরা? কিংবা  কুম্ভমেলা শেষ হতেই কোথায় হারিয়ে যান নাগা সাধুরা?  মহাকুম্ভের রাতের অন্ধকারে গোপনে কোথায় চলে যান তাঁরা? ৯৯% মানুষই জানেন না নাগা সন্ন্যাসীদের জীবনের এত বড় রহস্য!

রহস্যে মোড়া নাগা সন্ন্যাসীদের জীবন! সারা বছর লোক চক্ষুর আড়ালেই থাকেন এই নাগা সন্ন্যাসীরা। তাই তাদের সম্পর্কে জানার কৌতূহলটাও বরাবরই একটু বেশিই থাকে। নাগা সন্ন্যাসী মানেই চোখের সামনে ভাসে বস্ত্রহীন  সারা গায়ে ছাই-ভস্ম মাখা আর মাথায় জটা।সাধারণত গঙ্গাসাগর মেলা বা কুম্ভ মেলা, তখনই সাধারণ মানুষ দর্শন পান নাগা সন্ন্যাসীদের। নগ্ন থেকে এসেছে নাগা শব্দটি। এই সন্ন্যাসীরা আজীবন নগ্ন অবস্থায় থাকেন। তাই নাগা সন্ন্যাসীদের নিয়ে একটি কমন প্রশ্ন হল, কেন এঁরা পোশাক পরেন না? কিংবা হাড় কাঁপানো  শীতেও এরা পোশাকহীন থাকেন কিভাবে?

এখানে বিলোলে রাখি শুধু শীত নয়, সারা বছরই নাগা সাধুরা বস্ত্রহীন থাকেন। বিজ্ঞান বলে, মানবদেহ তৈরিই হয় এমনভাবে যে, যে পরিবেশে শরীরকে ছাঁচে ফেলবেন, সেই অনুযায়ী শরীরও গঠন হবে। এর পিছনে কোনো রকেট সাইন্স নেই,আছে  একটাই  জিনিস তা হল অনুশীলন। শুধু অনুশীলনের মাধ্যমেই নাগা সাধুরা শরীরকে কঠিন করে গড়ে তুলেছেন। তাছাড়া নাগা  সাধুরা তিন ধরনের যোগব্যায়াম করেন। যার ফলে তীব্র ঠান্ডাতেও তাঁদের শরীর থাকে ফিট ও সুস্থ। এছাড়াও  রয়েছে চিন্তা ও খাবারের প্রতি সংযম।

গোটা বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় অনুষ্ঠান হল ভারতের মহাকুম্ভ মেলা। সাধু-সন্ন্যাসীদের এই পবিত্র মেলা প্রতি ৪ বছর অন্তর পালন করা হলেও প্রতি ১২ বছর অন্তর প্রয়াগ, হরিদ্বার, উজ্জয়িনী ও নাসিকে পালিত হয় মহাকুম্ভ বা পূর্ণকুম্ভ। এছাড়া প্রতি ৬ বছর অন্তর হরিদ্বার ও প্রয়াগরাজে পালিত হয় অর্ধকুম্ভ।

শেষবার মহাকুম্ভের আয়োজন করা হয়েছিল ২০১৩ সালে। হিন্দুধর্মের পাশাপাশি এই মহাকুম্ভের সঙ্গে মিশে রয়েছে জ্যোতিষশাস্ত্র, ধর্মীয় বিশ্বাস ও ভারতীয় সংস্কৃতি। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে আগামী  ২০২৫ সালে এই পূর্ণকুম্ভের আয়োজন করা হবে। ওই বছরের ২৯ জানুয়ারি থেকে ৮ মার্চ পর্যন্ত চলবে এই মহামেলা। ক্যালেন্ডার অনুসারে শেষ শাহি স্নান পালন করা হবে ৮ মার্চ।

মহাকুম্ভের মত পবিত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নাগাসাধুদের ভিড় হয় চোখে পড়ার মত। কুম্ভ সহ বছরে মোট ১৩টি আখড়ায় যান তাঁরা। তবে এই নাগা সাধুদের বসবাসের কোনও নির্দিষ্ট জায়গা নেই। কুঁড়েঘর বানিয়ে তাদের জীবন কাটে। এরা শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা ১২ মাস কোনো বিছানা নয়,খালি মাটিতেই  শুয়ে থাকেন। ২৪ ঘণ্টায় মাত্র একবার এরা খাদ্য গ্রহণ করেন এঁরা। ভিক্ষে করেই নিজেদের খাদ্যসংগ্রহ করেন নাগা সন্ন্যাসীরা। কিন্তু একদিনে মাত্র সাতটি বাড়িতে এরা ভিক্ষে করতে  পারেন তাঁরা। কিন্তু এই সাতটি বাড়িতে কিছু পাওয়া না গেলে সেদিন অভুক্ত থাকতে হয় এঁদের।

অনেকের বিশ্বাস তাঁরা হিমালয় থেকে কুম্ভে আসেন। তবে এই ধারণা মোটেও সত্যি নয়। তবে নাগা সন্ন্যাসী হওয়া মুখের কথা নয় একেবারেই। নাগা সাধু হতে গেলে ১২ বছর ধরে সাধনা করতে হয়। নাগা সন্ন্যাসী হওয়ার সাধনার মধ্যে যখন তাঁরা থাকেন, সেই সময় শুধু লেঙ্গোট ধারণ করে থাকেন। কুম্ভমেলায় ব্রত নেওয়ার পর সেই সামান্য কাপড়ও ত্যাগ করেন তাঁরা। তারপর থেকে সারা জীবন নগ্ন থাকেন নাগা সাধুরা।

নাগা সন্ন্যাসী হওয়ার প্রথম শিক্ষা হচ্ছে ব্রহ্মচর্য পালন। এই পরীক্ষায় সফল হওয়ার পর মহাপুরুষ দীক্ষা দেওয়া হয়। এরপর নিজের যজ্ঞোপবীত বা পৈতে বিসর্জন দিতে হয়। আর তারপর নিজের পরিবার  এবং  নিজের পিণ্ডদান করতে হয়। যা বিজওয়ান নামে পরিচিত। কারণ নাগা সন্ন্যাসী হওয়ার পর এঁদের কাছে পরিবারের মৃত্যু হয় এবং পরিবার ও সমাজের কাছে এঁদের মৃত্যু হয়। এই কারণেই নাগা সাধুদের কাছে পার্থিব পরিবার নয়, গুরুত্বপূর্ণ  গোটা সম্প্রদায়। আমাদের দেশে নাগা সন্ন্যাসীদের ইতিহাস অনেক প্রাচীন। মহেঞ্জোদারোর মুদ্রাতেও নাগা সন্ন্যাসীদের ছবি পাওয়া যায়। সেখানে পশুপতিনাথ-রূপী মহাদেবের উপাসনা করতে দেখা যায় তাঁদের।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *