ল্যাংচা

মিষ্টির নাম ল্যাংচা কেন? কালো কিংবা বাদামি রঙের এই মিষ্টির নাম ল্যাংচা হল কিভাবে? রসে টইটম্বুর বাংলার ঐতিহ্যশালী এই মিষ্টির ইতিহাস জানা নেই অনেকেরই! ৯৯% মানুষই জানেন না ল্যাংচা  নামকরণের ইতিহাস!

বাঙালি মানেই ভোজন রসিক এবং অবশ্যই মিষ্টি প্রেমী! বিশেষ করে খাওয়ার শেষ পাতে মিষ্টি কিন্তু চাই-ই  চাই! বাঙালির রসনা তৃপ্তিতে মিষ্টির তুলনা মিষ্টি নিজেই। রসগোল্লা,জলভরা সন্দেশ,কালাকাঁদ,সরভাজা থেকে শুরু করে হালের চকলেট মিষ্টি, সব মিলিয়ে মিষ্টি প্রেমী বাঙালিরবা ভাঁড়ারে মিষ্টির কমতি নেই!  ভুললে চলবে না কালো বা বাদামী রঙের ল্যাংচা কেও।

ল্যাংচা মানেই  উঠে আসে শক্তি গড়ের কথা। কমবেশি সকলেই জানেন রসে টই টুম্বুর ল্যাংচা তৈরি করতে প্রধান উপকরণ হিসেবে লাগে ময়দা, খোয়া ক্ষীর,চিনি। তবে অনেকেই জানেন না অত্যন্ত সুস্বাদু মিষ্টি ল্যাংচা নামের অজানা কাহিনী! আসুন জানা যাক এই ল্যাংচা নামের পেছনে থাকা এক লম্বা ইতিহাস।

শক্তিগড়ের ল্যাংচার  নামকরণ নিয়ে নানা মুনির নানা মত! তবে বিশিষ্ট সাহিত্যিক নারায়ণ সান্যালের রূপমঞ্জরী উপন্যাসে, এই মিষ্টির নামকরণের যে কাহিনী রয়েছে তার সাথে জড়িয়ে রয়েছে কৃষ্ণনগরের রাজকন্যার নাম। তাঁর দৌলতেই বর্ধমানের এক ময়রার সাথেই জড়িত রয়েছে এই মিষ্টির নামকরণের ইতিহাস।

কাহিনী অনুসারে, কৃষ্ণনগরের রাজা তিলকচাঁদের কন্যার  সাথে বিয়ে হয়েছিল  বর্ধমানের রাজার পুত্রের। বিয়ের পর গর্ভবতী হন রাজকন্যা। পোয়াতি মেয়েকে নিজের বাড়ি নিয়ে আসেন  কৃষ্ণনগরের রাজা তিলকচাঁদ। আর তাতেই হয় গন্ডগোল। বাপের বাড়িতে এসে  কোনো খাবারেই স্বাদ পাচ্ছিলেন না রাজকুমারী। এরফলে মহা ভাবনায় পড়েন রাজামশাই।

কিন্তু এই ভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকলেও তো চলবে না! উপায় তো একটা বার করতেই হবে! শেষ পর্যন্ত মুশকিল আসন করলেন রাজকুমারী নিজেই। তিনি জানান, বর্ধমানে তার শশুরবাড়ির কাছেই নাকি এক ময়রা রয়েছেন। তাঁর  হাতের তৈরি কালো রঙের ভাজা মিষ্টি রসে ডুবিয়ে খেলেই নাকি তার মুখের স্বাদ ফিরে আসবে।

কিন্তু এখানেও বিপত্তি! কারণ, দুর্ভাগ্যবশত রাজকুমারী সেই ময়রার নাম মনে করতে পারছিলেন না কিছুতেই। তবে হঠাৎ তাঁর মনে পড়ে  ওই ময়রার এক পা খোঁড়া। একথা শোনা মাত্রই  মেয়ের মুখের রুচি ফেরাতে বর্ধমানের ওই ময়রাকে রাজ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এরপর রাজার আদেশেই কৃষ্ণনগরেই তৈরী করা হয়  সেই মিষ্টি। আর সেই মিষ্টি খাইয়েই রাজকুমারীর মুখের স্বাদ ফেরান রাজা তিলকচাঁদ। শুধু তাই নয়, স্বয়ং রাজাও নাকি প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন এই মিষ্টির। তাই প্রচলিত জনশ্রুতি অনুযায়ী এই মিষ্টি যে ময়রা তৈরি করেছিলেন তিনি খোঁড়া ছিলেন, তাই  লেংচে হাঁটতেন । সেই থেকেই এই মিষ্টির নামও হয়ে যায়  ল্যাংচা।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *