মন্দিরের প্রসাদ বই

ফল,মিষ্টি কিংবা লাড্ডু নয়! ভারতের এই মন্দিরে নৈবেদ্য-প্রসাদ সবই বই! ঈশ্বর তুষ্ট হন জ্ঞানে! তাই জ্ঞানই হল আসল প্রসাদ! জানেন ভারতের এই বিখ্যাত মন্দিরটি ভারতের কোথায় অবস্থিত? এই মন্দিরের আরাধ্য দেবতা কে জানেন? জ্ঞান-বুদ্ধি বাড়াতে সন্তানদের নিয়ে মা-বাবারা-ও   ভিড় করেনএই মন্দিরে! জানুন ভারতের এই আজব মন্দিরের অজানা কাহিনী !

মন্দিরে গেলেই প্রসাদ হিসাবে হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় ফুল,ফল কিংবা মিষ্টি। কোথাও কোথাও আবার ভোগ হিসাবে খাওয়ানো হয় খিচুড়ি প্রসাদ। এটাই আমাদের সকলেরই চির চেনা ছবি। কিন্তু জানলে অবাক হবেন ভারতবর্ষে এমনও একটি মন্দির রয়েছে যেখানে প্রসাদ হিসাবে বিতরণ করা হয় জ্ঞান। হ্যাঁ ঠিকই শুনছেন, কেরলের ত্রিশূর জেলায় অবস্থিত দেবাধিদেব মহাদেবের এই বিখ্যাত মন্দিরে প্রসাদ হিসাবে ভক্তদের হাতে তুলে দেওয়া হয় বই।

বলা হয় বিদ্যা এমনই একটি জিনিস যা বিতরণ করলে বাড়ে বই কমেনা। বিদ্যা দানের সেই ধর্ম মেনেই ভারতের এই শিব মন্দিরটিতে প্রচলিত রয়েছে এক সুন্দর রীতি। তবে শুধু প্রসাদ হিসেবেই হয় না এই শিব মন্দিরে  ভক্তরাও দেবতার উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য হিসেবে নিয়ে আসেন বই কিংবা পড়াশোনার সাথে সম্পর্ক যুক্ত জিনিসপত্র। স্থানীয়দের বিশ্বাস এই মন্দিরের দেবতা কোন ফল-ফুল কিংবা মিষ্টিতে নয় তুষ্ট হন জ্ঞানে।

মন্দিরের পুরোহিতরা মন্দিরে জমতে থাকা পড়াশোনার সমস্ত সামগ্রী পুজোর পর বিলিয়ে দেন ভক্তদের মধ্যেই। তাই মহাদেবের এই মন্দিরে আসা ভক্তদের কেউ পান পাঠ্যবই তো কেউ পেয়ে যান লেখার সামগ্রী। এমনকি কারও কারও হাতে আসে জ্ঞানসমৃদ্ধ বিভিন্ন ব্রোশিওর কিম্বা সিডি এবং ডিভিডি-ও।

বলা হয় একমাত্র শিক্ষা আর জ্ঞানের আলোই পারে সমস্ত অন্ধকার ঘুচিয়ে দিতে। তাই দেশের বেশিরভাগ মন্দিরেই  যখন ধর্মের  আড়ালে অন্ধবিশ্বাস এবং কুসংস্কারকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়, তখন ত্রিশূরের এই গ্রামীণ মন্দিরটি নিঃসন্দেহে এক নতুন দিশা দেখাচ্ছে গোটা দেশবাসীকে। এই মন্দিরের কোণায় কোণায় শিক্ষার ছোঁয়া। মন্দিরের দেওয়ালেও খোদাই করা রয়েছে শিক্ষাজগতের বহু বিখ্যাতমানুষের ছবি। এই তালিকায় রয়েছেন আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, সিভি রমন, এপিজে আবদুল কালাম, গণিতবিদ শ্রীনিবাস রামানুজন-সহ আরও অনেকে।

প্রচলিত রীতি মেনে শিশুদের যখন অক্ষরজ্ঞান শুরু হয়, তখন প্রত্যেক বছর বিজয়া দশমীতে মা-বাবারা সন্তানদের নিয়ে মন্দিরে যান। তাঁদের বিশ্বাস, এতে ছেলেমেয়েরা পড়াশোনায় ভাল হবে। স্থানীয়দের বিশ্বাস এরফলে শিশুরা পড়াশোনায় মনযোগী হন। ইদানিং এই মন্দিরে বাড়ছে বিদেশী পর্যটকদের ভিড়। ন্যাশনাল হেরিটেজ সেন্টারের ক্যাম্পাসের মধ্যেই রয়েছে এই মন্দির। যার রক্ষণাবেক্ষণের ভার রয়েছে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সাইন্টিফিক হেরিটেজ-এর উপর।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *