রহস্যময় মন্দির

রহস্যময় এই মন্দিরে দেবী দিনে তিনবার রূপ বদলান! দেবীর মাথা ও ধড়ের পুজো হয় আলাদা মন্দিরে। মূর্তি সরানোয় নেমে এসেছে ভয়াবহ বিপর্যয়! উত্তরাখণ্ডের রক্ষাকর্ত্রী এই দেবী অত্যন্ত জাগ্রত! মা দুর্গার এই রহস্যময় মন্দিরের কাহিনি শুনলে চমকে উঠবেন আপনিও! জানুন ভারতের এই বিখ্যাত মন্দিরের অলৌকিক কাহিনী।

ভারতবর্ষের মানেই মন্দিরের দেশ! কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী আমাদের দেশের নানান প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য হিন্দু দেবদেবীর মন্দির। হিন্দু পুরাণ মতে ভারতে প্রতিদিন প্রায় ৩৩ কোটি দেব-দেবীদের পুজো হয়। তাঁদের মধ্যে অনেক দেবদেবীকে ঘিরে  রয়েছে নিজস্ব পৌরাণিক কাহিনি। আমাদের দেশে এমন অনেক মন্দির রয়েছে যেগুলির দৈবিক কাহিনিও বেশ অবাক করে । তবে এই মন্দির গুলির সাথে জড়িয়ে রয়েছে নানান জনশ্রুতি আর অজানা রহস্য। যার সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে বিভিন্ন ধরনের পৌরাণিক কাহিনীও। যা শুনলে চোখ কপালে উঠে যায় অনেকের।

হিন্দু দেব-দেবীদের পীঠস্থান এই ভারতবর্ষের বুকেই রয়েছে এমনই এক রহস্যময়ী মন্দির।  যেখানে দিনে তিনবার রূপ বদলান স্বয়ং দেবী। হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন। ভারতের পবিত্র উত্তরাখণ্ডের শ্রীনগর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরেই রয়েছে এই মন্দির। শ্রীনগর এবং রুদ্রপ্রয়াগের মাঝামাঝি কাল্যাসৌরের ধারি বা ধারো গ্রামে অলকানন্দা নদীর তীরে হ্রদের ঠিক মাঝখানে অবস্থিত এই মন্দির।স্থানীয় বাসিন্দারা জায়গাটিকে বলেন ডাং চৌরা।

এই মন্দিরের  বিশেষত্ব হল এখানে প্রতিদিনই কোন না কোন অলৌকিক ঘটনা ঘটনার সাক্ষী থাকেন ভক্তরা। প্রতিদিন এই মন্দিরের দেবী প্রতিমার আশ্চর্য রূপ পরিবর্তন দেখে অবাক হয়ে যান ভক্তরা। বিখ্যাত এই মন্দিরটি ভক্তদের কাছে ধারি দেবীর মন্দির নামে পরিচিত। এই ধরি দেবী আসলে মা দুর্গারই আরেক রূপ। এই মন্দিরে কেবলমাত্র দেবীর উপরের দেহের পূজা করা হয়। এবং নীচের অংশটি অন্যত্র স্থাপন করা হয়েছে। এই মন্দিরে কেবলমাত্র দেবীর মাথার পূজা করা হয়। দেবীর ধড়টি পাওয়া যায় রুদ্রপ্রয়াগের কালীমঠে। ওই মঠে দেবীকে ‘মৈঠানা’ রূপে পুজো করা হয়।

এই দেবীকে অত্যন্ত জাগ্রত বলে মনে করেন উত্তরাখণ্ডবাসী। সবচেয়ে আশ্চর্য্যের বিষয় হল দেবীর মূর্তিটি সকালে দেখতে এক্কেবারে মেয়ের মতো, অথচ  বিকেলেই তিনি এক সুন্দরী যুবতী। আর সন্ধ্যায় তিনি এক বৃদ্ধ মহিলার রূপ ধারণ করেন। স্থানীয়দের বিশ্বাস, ধরি মা উত্তরাখণ্ডের চার ধামকে সুরক্ষা প্রদান করেন। তাই উত্তরাখণ্ড বাসীদের কাছে কেদার-বদ্রী বা চারধাম নয়, ‘ধারি দেবী’কেই উত্তরাখণ্ডের রক্ষাকর্ত্রী বলে মনে করেন তাঁরা।

ধারি মায়ের মন্দির ঘিরে রয়েছে একাধিক জনশ্রুতি। কথিত আছে অনেককাল আগে এক ভয়ানক বন্যা হয়েছিল উত্তরাখণ্ডে। সেই বন্যাতেই ভেসে গিয়েছিল এক মন্দির। তখনই মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত দেবী প্রতিমাও ভেসে উঠেছিল এবং আশেপাশের কোন এক পাথরের সাথে ধাক্কা খেয়ে থেমে গিয়েছিল।

কথিত আছে যে, সেইসময় নাকি ওই  দেবী প্রতিমা থেকে এক দৈব কণ্ঠস্বর ভেসে এসেছিল। সেই দৈব বাণীতে দেবী  নির্দেশ দিয়েছিলেন,  যথাস্থানে মন্দির বানিয়ে তাঁর প্রতিমাটি যেন প্রতিষ্ঠাকরা হয়। এরপরে, সব গ্রামবাসীরা মিলে মন্দির নির্মাণ করে দেবী প্রতিমাটি স্থাপন করেছিলেন।

স্থানীয় পুরোহিতদের বিশ্বাস, দ্বাপর যুগের পর থেকেই স্থাপন করা হয়েছে মায়ের মন্দির। স্থানীয়রা বলেন, ২০১৩ সালে ধারি মায়ের মন্দিরটি ভেঙে দেবী প্রতিমা আসল জায়গা থেকে সরিয়ে অন্য জায়গায় বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যার ফলে সেই বছরই এক ভয়ানক  বন্যা হয়েছিল উত্তরাখণ্ডে। স্থানীয়রা  দাবি করেন দেবী প্রতিমা ২০১৩ সালের ১৬ই জুন সন্ধ্যা নাগাদ সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। তাতেই দেবী রুষ্ট হওয়ায় মুহূর্তের মধ্যেই  নেমে আসে এক ভয়ানক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। তাই পরে আবার আগের জায়গায় তৈরি করা হয় মন্দির।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *