কর কী?

কর কি? নাগরিকদের দেওয়া করই কেন সরকারের আয়ের প্রধান  উৎস? প্রত্যেক ভারতীয় নাগরিকের কর দেওয়া কেন বাধ্যত্যমূলক জানেন? কর না দেওয়া কেন আইন বিরুদ্ধ জানেন?  করের প্রকারভেদ গুলি কি কি জানেন? অবাক করবে কর সম্পৰ্কে এই অজানা তথ্য!

কর কী?

ভারতের সব নাগরিকদেরই বাধ্যতামূলকভাবে সরকারকে কিছু পরিমাণ অর্থ দিতে হয়। নাগরিকদের থেকে আদায় করা এই কর দিয়েই দেশের উন্নতির কর্মযজ্ঞ। মূলত এটি একটি আর্থিক দায় যা নাগরিকদের থেকে পাওয়া সরকারি আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। আইন অনুযায়ী কর প্রদান করা বাধ্যতামূলক। তাই কর ফাঁকি দিলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে। এবং তার  জন্য কঠোর শাস্তি হতে পারে।

দেশের রাস্তা, বিদ্যুৎ,জল, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপত্তা, এবং প্রতিরক্ষার মতো বিভিন্ন পরিষেবার ক্ষেত্রে সরকারের অর্থের প্রয়োজন, যা কর ব্যবস্থার মাধ্যমেই নাগরিকদের থেকে সংগ্রহ করে সরকার।

করের প্রকারভেদ

সরকার জনগণের কাছ থেকে দু’ভাবে কর আদায় করে। একটি হল প্রত্যক্ষ কর এবং অন্যটি হল পরোক্ষ কর।

প্রত্যক্ষ কর

ব্যক্তি এবং কর্পোরেশনের আয় বা সম্পদের উপরেই মূলত প্রত্যক্ষ কর ধার্য করা হয়।

আয়কর:  ব্যক্তি এবং কর্পোরেশনের আয়ের উপরেই একটি আর্থিক বছরে এই কর ধার্য করা হয়। আয়করের হার আয়ের স্তর এবং করদাতার প্রকারের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়।এক্ষেত্রে বিভিন্ন ছাড়ও রয়েছে। যা আয়কর আইন ১৯৬১ এবং সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস দ্বারা পরিচালিত হয়।

ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স : মূলধন সম্পদ যেমন শেয়ার, সম্পত্তি, বন্ড ইত্যাদি স্থানান্তর থেকে উদ্ভূত লাভ বা ক্ষতির উপর এই কর ধার্য করা হয়। মূলধন লাভ করের হার সম্পদের ধরনের উপর নির্ভর করে। কর দায় কমানোর জন্য বিভিন্ন ছাড় রয়েছে। মূলধন লাভ কর,আয়কর আইন, ১৯৬১ দ্বারা পরিচালিত হয় এবং CBDT দ্বারা পরিচালিত হয়।

কর্পোরেট ট্যাক্স: এটি একটি আর্থিক বছরে কোম্পানি দ্বারা অর্জিত লাভের উপর ধার্য করা হয়। কর্পোরেট ট্যাক্স হার কোম্পানির ধরন এবং আকারের উপর নির্ভর করে। নির্দিষ্ট কিছু খাতে এক্ষত্রে ছাড় পাওয়া যায়। কর্পোরেট ট্যাক্স আয়কর আইন, ১৯৬১ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং CBDT দ্বারা পরিচালিত হয়।

সম্পত্তি কর: কারও সম্পত্তির মূল্য ৩০ লক্ষ টাকার বেশি হলে, অতিরিক্ত অংশের ১% কর হিসাবে প্রদান করতে হয়। ২০১৫ সালের  বাজেটে এই কর ব্যবস্থার অবসান হয়েছে। এখন এটি প্রতি বছর ১ কোটি টাকার বেশি আয় করা ব্যক্তিদের ১২% কর দিতে হয়। এছাড়া যেসব সংস্থা প্রতি বছর ১০ কোটির বেশি আয় করে তাদের জন্যও এই নিয়ম প্রযোজ্য।

উপহার কর : ১৯৫৮ সালের উপহার কর আইনে শেয়ার, গয়না এবং সম্পত্তি ইত্যাদি উপহারের উপর ৩০ শতাংশ কর ধার্য করা হতো। ১৯৯৮ সালে এই কর বাতিল করা হয়। বর্তমানে, পরিবারের সদস্যদের এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাওয়া উপহারগুলি করমুক্ত। তবে অন্যদের  থেকে পাওয়া ৫০,০০০ টাকার বেশি উপহার করযোগ্য।

সিকিউরিটিজ ট্রানজেকশন ট্যাক্স: এটি ভারতে স্বীকৃত স্টক এক্সচেঞ্জগুলিতে স্টক, মিউচুয়াল ফান্ড এবং ডেরিভেটিভগুলির মতো সিকিউরিটি ক্রয়-বিক্রয়ের উপর আরোপিত একটি কর। ট্রেড করা সিকিউরিটির ধরনের উপর STT এর হার নির্ভর করে।

পরোক্ষ কর

যে কোনো  পণ্য বা পরিষেবায়  এই কর থাকে। যা ভোক্তারা ক্রয়ের সময় পরিশোধ করে।

কাস্টমস ডিউটি: জাতীয় সীমানা জুড়ে পণ্য আমদানি ও রপ্তানির উপর এই কর ধার্য হয়। পণ্যের ধরন, মূল্য এবং উৎপত্তি, এবং গন্তব্যের  দেশের উপর শুল্কের হার নির্ভর করে। এই কর, ১৯৬২ অ্যাক্ট  এবং সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস দ্বারা পরিচালিত হয়।

এক্সাইজ ডিউটি: ভারতে উৎপাদিত পণ্যের উপর এই কর আরোপ করা হয়। কেন্দ্রীয় এক্সাইজ বিধি অনুযায়ী, নির্দিষ্ট পণ্যের উপর এই কর দেওয়া  বাধ্যতামূলক। এই কর না দিয়ে তা উৎপাদন স্থান থেকে সরানো যায় না। এটি কেন্দ্রীয় মূল্য সংযোজন কর নামেও পরিচিত।

পণ্য ও পরিষেবা কর: এই কর বিক্রয় কর, পরিষেবা কর, মূল্য সংযোজন কর, ইত্যাদিকে  প্রতিস্থাপন করেছে। জিএসটি একটি ব্যাপক কর যা পণ্য ও পরিষেবা সরবরাহের ওপর ধার্য  করা হয়। GST হল একটি গন্তব্য-ভিত্তিক কর।  GST আইন, ২০২৭ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং GST কাউন্সিল দ্বারা পরিচালিত হয়।

বিক্রয় কর :  পণ্য ও সেবা বিক্রির উপর আরোপিত হয় এই কর। যা সাধারণত কেনা পণ্যের খুচরা মূল্যের একটি শতাংশ হিসাবে নির্ধারিত হয়। বিক্রেতারা এই কর সংগ্রহ করে সরকারের কাছে জমা দেয়।

পরিষেবা কর: এই কর ১৫% হারে ধার্য করা হয়। বিভিন্ন কোম্পানির পরিষেবায় এই কর প্রযোজ্য।  অস্পষ্টতা এড়াতে রেস্তোরাঁগুলি মোট বিলের ৪০% এর উপর পরিষেবা কর আরোপ  করে।

মূল্য সংযোজন কর:   ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স  সব ক্ষেত্রেই ধার্য করা হয়। শুধুমাত্র খাদ্য এবং প্রয়োজনীয় ওষুধের মতো জিরো -রেটেড আইটেম বাদে। প্রত্যেক রাজ্য নিজের  রাজ্যের মধ্যে বিক্রি হওয়া পণ্যের উপর নিজস্ব করের হার নির্ধারণ করে।

করের গুরুত্ব

নাগরিকদের দেওয়া কর দিয়েই সরকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে।  যার ফলে উন্নত দেশের অর্থনীতি। তাই কর ব্যবস্থা না থাকলে জনসাধারণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিষেবা দেওয়ার টাকা থাকবে না সরকারের কাছে। তাই সরকারকে কর দেওয়া প্রত্যেক  নাগরিকের কর্তব্য।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *