ভারতবর্ষ মানেই মন্দিরের দেশ! আমাদের দেশের প্রতি কোণায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য মন্দির। যা ধর্মীয় পীঠস্থান তো বটেই একইসাথে ভারতের পুরোনো ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। ভারতে এমন কিছু মন্দিরও রয়েছে যা ঘিরে রয়েছে বহু অজানা রহস্য। অনেক মন্দিরের দেব দেবীর পুজো কিংবা উৎসব ঘিরেও রয়েছে নানান রহস্য। আসুন জানা যাক বিস্তারিত।
১.আসামের কামাখ্যা দেবী মন্দির
আসামের কামাখ্যা দেবীর মন্দিরটি, ভারতের ৫১টি শক্তিপীঠের মধ্যে অন্যতম। এই মন্দিরে দেবীর কোনও মূর্তি নেই। গর্ভগৃহে লাল কাপড়ে ঢাকা দেবীর যোনী এখানে পূজিত হয়। অম্বুবাচির উৎসবে দেবীর রজঃস্বলার সময় তিনদিন এই মন্দির বন্ধ থাকে। কথিত আছে এই সময় মাটির নিচের থেকে লাল বর্ণের জল নিঃসৃত হয়। তাই ভক্তদের উৎসর্গ করা লাল কাপড় দিয়েই দেবীকে আবৃত করা হয়।
২.পুষ্করের ব্রহ্ম মন্দির
মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব ভারতের প্রায় সব হিন্দু মন্দির ধ্বংস করে দিলেও অবিশ্বাস্য ভাবে থেকে গিয়েছিল পুষ্করের এই ব্রহ্ম মন্দির। অশুভ শক্তি থেকে রক্ষা পেতে আজও এই মন্দিরে ভগবান ব্রহ্মর পুজো করা হয়। জানলে অবাক হবেন বর্তমানে সারা পৃথিবীতে এই একটাই ব্রহ্ম মন্দির রয়েছে।
৩. মধ্য প্রদেশের দেবজী মহারাজ মন্দির
প্রতি মাসের পূর্ণিমা তিথিতে ভূত বা অশুভ শক্তির হাত থেকে রেহাই পেতে দেবজী মহারাজ মন্দিরে পুজো করা হয়। শরীরে থাকা প্রেতকে তাড়ানোর জন্য হাতে কর্পূর জ্বালিয়ে ভক্তরা দেবতার উপাসনা করেন। এছাড়াও এখানে ঝাড়ু পেটা করে ভূত তাড়ানোরও রীতি আছে। তবে সবচেয়ে অদ্ভুত হলো এখানকার ভূত মেলা। অশুভ শক্তি বিনাশের জন্য প্রতি বছর এই মেলার আয়োজন করা হয় ।
৪. বারানসীর কাল ভৈরব মন্দির
বরানসীতে অবস্থিত কাল ভৈরব মন্দিরের ভগবান শিব খুবই জাগ্রত। সব মন্দিরে ফুল-মিষ্টি দিয়ে পুজো হলেও এই মন্দিরের দেবতার মুখগহ্বরে সুরা ঢেলে পুজো করা হয়। দেওয়া হয় হুইস্কি বা ওয়াইন জাতীয় সুরা।
৫. বৃন্দাবনের নিধিবন
শ্রীকৃষ্ণ ভক্তদের কাছে বৃন্দাবনের এই নিধিবনের মাহাত্ম ব্যাপক। মানুষের বিশ্বাস বৃন্দাবনের এই ঘন জঙ্গলের গাছগুলি আসলে কৃষ্ণর গোপিনী। আপাতদৃষ্টিতে এই গাছগুলি দেখলে মনে হয় এরা একে অপরের সঙ্গে যুক্ত, কিন্তু তা নয়। কথিত আছে, সূর্য অস্ত গেলে ভগবান শ্রী কৃষ্ণ আজও তাঁর গোপিনীদের সাথে রাসলীলায় মত্ত হন এই মন্দিরে। অনেকে নাকি গভীর রাতে এখানে শ্রীরাধার ঘুঙুরের শব্দও পেয়েছেন ।
৬. কেরালার কোদুঙ্গালুর মন্দির
কেরালার এই মন্দিরে স্থাপিত রয়েছেন দেবী ভদ্রকালী। প্রতিবছর এই মন্দিরে সাত দিন ব্যাপী ভারানী নামে এক অদ্ভুত উৎসব পালন করা হয়। এই উৎসবে নারী-পুরুষ সবাই লাল পোশাক পরে তরবারি নিয়ে একে অপরের মাথায় আঘাত করে রক্ত ঝরান এবং মন্দিরে প্রবেশ করে ভগবানের উদ্দেশ্যে অশ্লীল গান করে ভগবানকে তুষ্ট করেন। এছাড়াও দেবতার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন মূর্তি এবং লাঠি ছোড়েন। এই ধ্বংসাত্মক উৎসব সম্পন্ন হওয়ার পর প্রায় সাতদিন এই মন্দির বন্ধ থাকে।
৭.অন্ধ্রপ্রদেশের ভেঙ্কটেশ্বর মন্দির
এই মন্দিরে ভক্তরা ভগবানকে নিজেদের চুল উৎসর্গ করেন। এই মন্দিরের বড়ো বড়ো দু’টি হলঘর জুড়ে কর্মরত রয়েছেন অনেক নাপিত। এই মন্দিরে প্রতিদিন প্রায় ১২,০০০ দর্শণার্থীর ভিড় জমে। তারাই দেবতার জন্য নিজেদের চুল দান করেন। যা প্রতিবছর ৭৫টন চুল সংগ্রহ করে ইতালি, চিনে বিক্রি করে এই মন্দির ৬.৫ মিলিয়ন ডলার আয় করে।
৮. গুজরাটের স্তম্ভেশ্বর মহাদেব মন্দির
গুজরাটের স্তম্ভেশ্বর মহাদেব মন্দিরটি বেশিরভাগ সময় আরব সাগরের জলের তলায় ডুবে থাকে। শুধু ভাঁটার সময়েই ভক্তরা এই মন্দির দর্শন করতে পারেন। স্থানীয়দের বিশ্বাস জলে নিমজ্জিত অবস্থায় যদি কোনো ভক্ত প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে মন্দির দর্শন করে দেবতাকে আরাধনা করতে পারেন, তিনি ভগবান শিবের আশীর্বাদ পান।
৯. অন্ধ্রপ্রদেশের দেবারগাট্টু মন্দির
অন্ধ্র প্রদেশের কুর্ণল জেলার দেবারগাট্টু মন্দির বাণী উৎসবের জন্য বিখ্যাত। দশেরার দিন এই মন্দিরে আসা সব ভক্তরা লাঠি দিয়ে একে অপরের মাথায় আঘাত করেন। কথিত আছে ভগবান শিব এই দিনে রাক্ষসকে হত্যা করেন। পুরানের সেই ঘটনাকে স্মরণ করেই ভক্তরা একে অপরকে আঘাত করে রক্তপাত ঘটান। আগে এই উৎসবে কুঠার বা তরবারির ব্যবহার করা হত।
১০. অন্ধ্র প্রদেশের বীরভদ্র মন্দির
১৬শ শতকে নির্মিত বীরভদ্র মন্দিরটি স্থানীয়দের কাছে লেপক্ষী মন্দির নামেও পরিচিত। এই মন্দিরে প্রায় ৭০টি বড় বড় স্তম্ভ আছে। তবে এমন অনেক স্তম্ভ রয়েছে যা অন্য স্তম্ভের সাথে যুক্ত নয়।জানলে অবাক হবেন এই স্তম্ভ গুলি মন্দিরের ছাদ থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকলেও নিচের মেঝে স্পর্শ করেনি। তাই জায়গাটি দেখে বিপজ্জনক মনে হলেও আজ পর্যন্ত এখানে কোনওরকম বিপজ্জনক ঘটনা ঘটেনি ।
১১. রাজস্থানের মহেন্দিপুর বালাজি মন্দির
এই মন্দিরে মানুষ ভূত, প্রেত অশুভ শক্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রতিদিন আরাধ্য দেবতার পুজো করেন। এখানকার মানুষ ভূত তাড়াতে ভর করা মানুষটির উপর প্রথমে উষ্ণ গরম জল ঢালেন,তারপর দেওয়ালে শিকল দিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে ঝাড়ুর সাহায্যে আঘাত করেন। একই সাথে অনবরত তার মাথা দেওয়ালে ঠুকে দেওয়া হয়। সবটাই হয় বালাজি মন্দিরের পুরোহিতের পরিচালনায়। মানুষের বিশ্বাস এইভাবেই তারা অশুভ শক্তি থেকে রক্ষা পাবেন। এই মন্দিরে কোনও প্রসাদ দেওয়া হয় না। এছাড়াও মন্দির থেকে ফেরার সময় মন্দির দর্শন করা বারণ।
Leave a Reply