ল্যাকমে

জানেন  ল্যাকমে আবিষ্কারের অজানা কাহানি? কিভাবে তৈরী হয়েছিল ল্যাকমে? সম্পূর্ণ স্বদেশী এই ব্র্যান্ড তৈরির পিছনে জওহরলাল নেহেরুর কি অবদান ছিল জানেন? ল্যাকমে শব্দের অর্থ কি? দেশি প্রোডাক্টের বিদেশী নামকরণের অজানা কাহানি জানেন? ল্যাকমে’র  সাথে জামশেদজি টাটার কি যোগসূত্র ছিল জানেন? কে এই  দেশীয় ব্র্যান্ড তৈরী করেছিলেন জানেন?

দীর্ঘ প্রায় এক শতাব্দী ধরে ভারতের বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বিউটি প্রোডাক্ট হল ল্যাকমে। যা আজও গুনে গুনে দশ গোল দিতে পারে যেকোনো নামি-দামি বিদেশি ব্র্যান্ডের বিউটি প্রোডাক্টকে। সেই পঞ্চাশের দশকে সৌন্দর্যের যে সফর শুরু হয়েছিল তা অব্যাহত আজও। ভারতীয় যে কোন মহিলাই তাঁদের সাজসজ্জার ক্ষেত্রে চোখ বুজে ভরসা করেন ল্যাকমে’র লিপস্টিক,কাজল,লিপ বাম, আই লাইনার কিংবা নেইলপলিশের মতো এক গুচ্ছ মেক-আপ কিটসের ওপর।

সুলভ মূল্যে আন্তর্জাতিক মানের বিউটি প্রোডাক্টস ল্যাকমে-কে জনপ্রিয়তা দিয়েছে মধ্যবিত্ত পরিবারের মহিলা মহলেও। কিন্তু অনেকেই জানেন না সম্পূর্ণ স্বদেশী এই  বিউটি প্রোডাক্টের জন্মের ইতিহাস। বিশেষ করে ল্যাকমে তৈরি হওয়ার নেপথ্যে বিশেষ অবদান ছিল ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর। আসুন জানা যাক সেই অজানা কাহিনী।

সাজসজ্জার ব্যাপারে আমাদের দেশের মেয়েদের শৌখিনতার চল কিন্তু আজকেই নয়, তা প্রচলিত রয়েছে বহুবছর  ধরে। তখন সবেমাত্র দেশ স্বাধীন হয়েছে। সে সময় দেশের অর্থ নৈতিক পরিকাঠামোও বেশ নড়বড়ে। সেসময় দেশের অধিকাংশ মধ্যবিত্ত পরিবারের মহিলারা  নিজেদের সাজসজ্জার জন্য বিভিন্ন ঘরোয়া উপকরণ ব্যবহার করলেও, উচ্চবিত্ত পরিবারের মহিলারা তাদের সাজগোজের জিনিস কিনে আনতেন বিদেশ থেকেই। যার ফলে ভারতীয় মুদ্রা চলে যেত বিদেশে।

এমন সময় পাঁচের দশকে ভারতে বিদেশী কসমেটিকস কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তাই  বিক্ষোভ শুরু করেন দেশের শহুরে মহিলা মহলে। তখন দেশের মহিলাদের এই দাবিই  দেশের অর্থিনীতিকে চাঙ্গা করে তোলার নতুন পথ প্রসারিত করে দেয় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর সামনে। সেসময় ভারতের নিজস্ব কোন  ব্র্যান্ড ছিল না, তাই  তিনি ভরতেই দেশজ প্রসাধনীর ব্র্যান্ড তৈরির পরামর্শ দিয়েছিলেন টাটা গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা জামশেদজি টাটাকে।

ফরাসি কোম্পানি রবের পিজে আর রেনোয়া-র  সঙ্গে হাত মিলিয়ে টাটা শুরু করলেন ল্যাকমে। যার আগের নাম ছিল লক্ষ্মী। ভারতীয় প্রসাধনী ব্রান্ডের এই নামকরণ নিয়েও রয়েছে এক অজানা কাহিনী। প্যারিসে তখন অপেরা হাউসে চলছে  ল্যাকমে। রেনোয়া টিমের কোন এক সদস্য সেই অপেরা দেখে এসে ভারতের প্রসাধনী  কোম্পানির নাম দিয়েছিলেন ল্যাকমে। মজার বিষয় এই ফরাসি নাম ল্যাকমের বাংলা অর্থ লক্ষ্মী। যিনি রূপ এবং গুণের প্রতিমূর্তি এবং ভারতীয়দের কাছে অর্থ এবং ধন-সম্পত্তির দেবী। তাই একই সাথে ভারতীয় প্রসাধনী কোম্পানি পেল বিদেশি নামের ছোঁয়া  সঙ্গে দেশীয় ঐতিহ্যের সাথেই বজায় থাকল ফরাসি কেত।

 

ল্যাকমের জনপ্রিয়তায় অবদান রয়েছে বলিউড অভিনেত্রীদেরও। রেখা, হেমা মালিনী, জয়া প্রদা সহ ৫০ এবং ৬০-র দশকের বলিউড অভিনেত্রীরা  বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন ল্যাকমের। এই দেশজ প্রোডাক্ট বাজারে আসতেই  ভারতের মুদ্রা  বিদেশে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু জামশেদজি  টাটা ১৯৯৮ সালেই এই ব্র্যান্ড বিক্রি করে দিয়েছিলেন  হিন্দুস্তান ইউনিলিভারকে। বর্তমান সময়ে ভারতে প্রায় ১১০ টি ল্যাকমির পার্লার রয়েছে এবং গোটা বিশ্বে প্রায় ১০০ টি পার্লার রয়েছে। বর্তমানে ল্যাকমে শুধু প্রসাধন প্রস্তুতকারক সংস্থাই নয়, এটি এখন এমন একটি  ‘ব্র্যান্ড’ যা  ল্যাকমে ফ্যাশন উইক, ল্যাকমে শো-এর মতো একাধিক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতাও আয়োজন করে। এছাড়া বিভিন্ন  সমাজকল্যাণমূলক কাজও করে ল্যাকমে। গরিব মেয়েদের নিয়মিত স্কলারশিপ দেয়  এই সংস্থা।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *