জম্মু-কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়! জম্মু ও কাশ্মীর ৩৭০-ধারার বিশেষ অধিকার কেন হারাল? ভারতীয় সংবিধানের এই ৩৭০-ধারা ঠিক কী? এতদিন ভূস্বর্গের বাসিন্দারা এই ধারায় কী কী সুবিধা ভোগ করতেন? জানুন জম্মু কাশ্মীর সম্পর্কে এই জরুরি বিষয়!
জম্মু-কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বিলুপ্তি নিয়ে ‘সুপ্রিম’ রায় দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত। তাই এই রায়কে ঐতিহাসিক বলে আখ্যা দিয়েছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ২০১৯ সালের ৫ অগস্ট জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করা হয়েছিল। যার ফলে বিশেষ মর্যাদা হারিয়েছিল জম্মু ও কাশ্মীর। এই রাজ্যকে ভেঙে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ, এই দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছিল। এরপরই সরগরম হয়ে ওঠে জাতীয় রাজনীতি।
কেন্দ্রের এই পদক্ষেপের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে বেশ কয়েকটি মামলা করা হয়েছিল দেশের শীর্ষ আদালতে। সেই মামলাগুলি একত্র করে সম্প্রতি শুনানি হয়েছিল আদালতে। এদিন দেশের শীর্ষ আদালত জানিয়েছে সংসদে নেওয়া এই সিদ্ধান্ত সংবিধানসম্মত।
পাশাপাশি জম্মু-কাশ্মীরকে পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রকে। অর্থাৎ এবার থেকে জম্মু-কাশ্মীর আর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে পড়বে না। তাই ২০২৪ সালে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। ইতিমধ্যেই এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনকেও। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ এদিন এই ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেছেন।
৩৭০ অনুচ্ছেদ কী?
ভারতীয় সংবিধানে একটি অস্থায়ী সংস্থান ৩৭০ অনুচ্ছেদ। এই অনুচ্ছেদে জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল,দেওয়া হয়েছিল বিশেষ স্বায়ত্তশাসন। সংবিধানের ১১ নম্বর অংশে জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে অস্থায়ী, পরিবর্তনশীল এবং বিশেষ সংস্থানের কথা বলা হয়েছে। সংবিধানের বাকি সব ধারা দেশের অন্য রাজ্যগুলিতে প্রযোজ্য হলেও জম্মু ও কাশ্মীরের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য ছিল না।
৩৭০ অনুচ্ছেদে কী রয়েছে?
সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রতিরক্ষা, বিদেশ, অর্থ এবং যোগাযোগ ছাড়া অন্য কোনও বিষয়ে রাজ্যে হস্তক্ষেপের অধিকার ছিল না কেন্দ্রের। অধিকার ছিল না কোনও আইন প্রণয়নেরও। তাই এতদিন পর্যন্ত ভূস্বর্গে আইন প্রণয়ন করতে হলে সম্মতি নিতে হত জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের।
এই অনুচ্ছেদের অধীনেই ছিল ৩৫এ ধারা। এই ধারায় বিশেষ সুবিধা পেতেন জম্মু ও কাশ্মীরের স্থায়ী বাসিন্দারাও। এই অনুযায়ী এতদিন পর্যন্ত স্থায়ী বাসিন্দা ছাড়া দেশের অন্য রাজ্যের বাসিন্দাদের জম্মু ও কাশ্মীরে স্থাবর সম্পত্তি কেনার অধিকার ছিল না। সম্পত্তি কেনার ক্ষেত্রে জম্মু ও কাশ্মীরে অন্তত ১০ বছর থাকতে হত।
এছাড়া চাকরির ক্ষেত্রেও ছিল আলাদা নিয়ম। স্থায়ী বাসিন্দা ছাড়া অন্য রাজ্যের কেউই জম্মু ও কাশ্মীরে চাকরির আবেদন করতে পারতেন না। অধিকার ছিল না ভোট দেওয়ারও। এছাড়াও স্থায়ী বাসিন্দা কে হবেন, তা ঠিক করত রাজ্য বিধানসভা। এই রাজ্যের কোনও মহিলা ভিনরাজ্যের কাউকে বিয়ে করলে তিনি সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হতেন।
৩৭০ অনুচ্ছেদের ইতিহাস
১৯৪৭ সালে ৩৭০ অনুচ্ছেদের খসড়া তৈরি করেছিলেন জম্মু ও কাশ্মীরের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ আবদুল্লা। তাঁকে নিয়োগ করেছিলেন মহারাজা হরি সিংহ এবং জওহরলাল নেহরু। তবে অস্থায়ী ভাবে বিশেষ মর্যাদা নয় স্থায়ী ভাবে বিশেষ মর্যাদা চেয়েছিলেন আবদুল্লা। তবে তাতে মত ছিল না কেন্দ্রর।
Leave a Reply