শ্রী কৃষ্ণের অভিশাপে, পৃথিবীতে আজও কষ্ট পাচ্ছেন এই ১ জন!

শ্রী কৃষ্ণের অভিশাপে, পৃথিবীতে আজও কষ্ট পাচ্ছেন এই ১ জন!

শ্রী কৃষ্ণের অভিশাপে,
পৃথিবীতে আজও কষ্ট পাচ্ছেন এই ১ জন!

এখনো দুয়ারে দুয়ারে
ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি!

জানেন ইনি কে?
কি কারণে, এনার উপর
শ্রী কৃষ্ণ রুষ্ট হয়েছিলেন?

কি কি অভিশাপ পেয়েছিলেন
তিনি?

শুনলে শিউরে উঠবেন

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন সনাতন হিন্দু ধর্মের পরম পুরুষোত্তম ভগবান। হিন্দুধর্ম অনুযায়ী তিনি বিষ্ণুর অষ্টম অবতার। তাকে সনাতন ধর্মে সর্বোচ্চ ঈশ্বর রুপে পুজো করা হয়। তার উপর আর কোন দেবতার স্থান নেই। তিনি সৃষ্টির পালন এবং দুষ্টের দমন। তিনি যুগে যুগে এই পৃথিবীতে অবতার রূপে নেমে আসেন। এই পরম দয়ালু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কি কখনো কাউকে অভিশাপ দিতে পারে?

বিশ্বাস না হলেও মহাভারতে এমনটাই হয়েছিল। পরম দয়ালু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ১ জনের উপর এতটাই রাগান্বিত হয়েছিলেন যে, তাকে অভিশাপ দিয়ে ছারখার করে দিয়েছিলেন। ত্রেতা যুগে দেওয়া ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেই অভিশাপের বোঝা আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন সেই অভিশপ্ত ব্যাক্তি। পবিত্র মহাভারতে এই অভিশাপের ঘটনা বিস্তারিত বলা হয়েছে। আসুন আজ আমরা জেনে নেব, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কাকে অভিশাপ দিয়েছিলেন এবং সেই অভিশাপ নিয়ে আজও তিনি কিভাবে দিন যাপন করছেন সেই সম্পর্কে।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যাকে অভিশাপ দিয়েছিলেন তিনি হলেন মহাভারতের অত্যন্ত পরিচিত মুখ অশ্বথামা। যিনি ছিলেন দ্রোণাচার্যের পুত্র। কৌরব সেনাদের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন এই অশ্বথামা। গুরু দ্রোণাচার্যের সাত পুত্রের মধ্যে অশ্বথামা অত্যন্ত শক্তিশালী ছিলেন। দ্রোনপুত্র অশ্বথামাকে ভগবান শিব নিজে অমরত্ব প্রদান করেছিলেন। ওষুধ আমার কপালে একটি রত্ন ছিল। যে রত্নের বলে তার দৈবিক শক্তি ছিল আকাশ ছোঁয়া। তার শরীরে ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ব্যথা ও শান্তি বলে কিছুই ছিল না। অর্থাৎ তিনি ছিলেন চিরঞ্জীবী। মনে করা হয়, গোটা কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সমাধান, একা করে ফেলার ক্ষমতা ছিল তার। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণের অভিশাপে অশ্বথামার মর্মান্তিক পরিণত হয়েছিল। মহাভারত অনুযায়ী অশ্বথামা আজও ঘুরে বেড়ানো পৃথিবীতে। শ্রীকৃষ্ণ তাকে এমন অভিশাপ দিয়েছেন যে এই পৃথিবী থেকে মুক্তি পেল তার শান্তি হবে না। স্বর্গ হোক বা নরক কোথাও তার ঠাঁই হবে না।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অশ্বথামাকে কি অভিশাপ দিয়েছিলেন জানেন?

মহাভারতের যুদ্ধে কোনভাবেই দমানো যাচ্ছিল না গুরু দ্রোণাচার্যকে। আর তাই পঞ্চপান্ডব পরামর্শের জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে যান। তখন শ্রীকৃষ্ণ পঞ্চপান্ডবদের বলেন গুরু দ্রোণাচার্যের কানে তার পুত্র অশ্বথমার মিথ্যে মৃত্যু সংবাদ পৌঁছে দিতে। সুচতুর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পরামর্শ মতে পঞ্চপান্ডব একটি হাতির নাম দেন অশ্বথামা। এরপর পঞ্চপান্ডবদের ভাই ভীম, সেই হাতিটির প্রাণ নাশ করেন। এরপর যুধিষ্ঠির গুরু দ্রোণাচার্যের উদ্দেশ্যে বলেন “অশ্বতমা হতো ইতি গজ”, যার বাংলা অর্থ অশ্বথামা নামক হাতিটি মারা গিয়েছে। কিন্তু যুধিষ্ঠির ইতি গজ এই শব্দটি খুবই আস্তে উচ্চারণ করেছিল। যার ফলে গুরু দ্রোণাচার্যের কানে পৌঁছেছিল শুধুমাত্র অশ্বধামা হত এই দুটি শব্দ। যা শুনে গুরু দ্রোণাচার্য মনে করেছিলেন তার প্রাণপ্রিয় পুত্র বুঝি আর নেই। পুত্র শোকে তখন তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। আর এই সুযোগে পঞ্চপান্ডবেরা তাকে মেরে ফেলেন। পঞ্চপান্ডবদের এই কাণ্ড শুনে দ্রোনপুত্র অশ্বথামা রেগে লাল হয়ে যান। আর তখনই পিতার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতেই পঞ্চপান্ডব ভেবে একে একে মেরে ফেলেন দ্রৌপদীর ৫ ঘুমন্ত সন্তানকে। অর্থাৎ অশ্বথামার রোষে পড়ে প্রাণ হারায় দ্রৌপদীর নিষ্পাপ সন্তানেরা।। অশ্বথামার এমন কাণ্ডে ক্ষেপে যান ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কিছুতেই অশ্বথামাকে ক্ষমা করেননি। তিনি অভিশাপ দিয়ে বলেছিলেন অন্যায় ভাবে এতগুলো প্রাণনাশের জন্য অশ্বথামা কখনোই মুক্তি পাবে না। এমনকি মৃত্যুর মাধ্যমেও অশ্বথামার মুক্তি হবে না। কলিযুগের শেষ দিন পর্যন্ত তাকে বেঁচে থাকতে হবে। অশ্বথামা চাইলেও কখনো এই পৃথিবী থেকে বেরোতে পারবেন না। পৃথিবীর সমস্ত জ্বালা যন্ত্রণা ভুগতে ভুগতে জর্জরিত হয়ে যাবেন তিনি। মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে ঘুরে মাথা ঠুকে ঢুকে অশ্বথমা ধ্বংস হবে। শ্রীকৃষ্ণ তাকে আমরণ বেঁচে থাকার অভিশাপ দিয়েছিলেন। কিন্তু যেভাবে তিনি আমরণ বেঁচে থাকবেন তার থেকে মরে যাওয়ায় অনেক ভালো।

এখন কোথায় আছেন অশ্বথামা?

মধ্যপ্রদেশের বুরহানপুর থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরে সাতপুরা পাহাড়ের চূড়ায় অসির গড় ফোর্ট রয়েছে। মনে করা হয় এই ফোর্ট এই নাকি আজও বসবাস করেন অশ্বথামা। কারণ এখানে একটি শিব মন্দির রয়েছে। যেখানে প্রতিদিন সকালে টাটকা ফুল আর শিবলিঙ্গে আবিরের দাগ দেখা যায়। অথচ বেলা না হওয়ার আগে পর্যন্ত সেখানে কেউ যায় না। তাহলে কে সবার আগে সেখানে গিয়ে পুজো করে যান? প্রত্যক্ষদর্শীরা কেউ এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাননি। সেখানকার স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন হাজার হাজার বছর ধরে স্বয়ং অশ্বথামা ওই মন্দিরটিতে শিব পুজো করে নিজের পাপ মোচনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *