‘বাইজু’স

বিন্দু থেকেই হয়েছিল সিন্ধু! একসময় এই সংস্থার হয়েই বিজ্ঞাপনে মুখ দেখিয়েছেন স্বয়ং শাহরুখ খান! ভারতের সেই নামি সংস্থা বাইজু’স-ই এখন দেউলিয়া! কীভাবে শূন্য হল বাইজু’স-এর লক্ষ্মী ভান্ডার? ঋণের বোঝা কমাতে বাড়িটাও বন্দক রাখছেন তিনি!  ভারতের এই তরুণ ব্যবসায়ীর এখন দিন কাটছে এইভাবে!

শূন্য থেকে হাজার কোটি, তার পরেই পতন! ভারতের তরুণ ব্যবসায়ীর পক্ষীরাজের ডানা ভাঙল কী ভাবে?
বাইজু’সই ছিল এশিয়ার প্রথম সংস্থা, যাদের বেছে নিয়েছিল ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতার বিনিয়োগ সংস্থা। বাইজু’সকে বড় অঙ্কের অর্থসাহায্য করেছিল তারা।

কেরলের এক সাধারণ ভারতীয় যুবক খুব অল্প বয়সেই তৈরি করে ফেলেছিলেন নিজের স্বপ্নের উড়ান! তাঁর তৈরী স্টার্ট আপ  সংস্থাই  মুখ দেখেছিল বিরাট সাফল্যের। তাঁর সংস্থার বিজ্ঞাপনে মুখ হিসেবে দেখা যেত বলিউডের সবচেয়ে নামি সুপারস্টার শাহরুখ খানকেও।  কিন্তু ৬ বছর পর এখন সেই সংস্থার দিকে আর ফিরেও তাকাতে চান না কিং খান। কারণ এই সংস্থার জন্যই তাঁকে  দিতে হয়েছে আর্থিক গুণগারি। সেই সাথে আঁচ পড়েছে তাঁর  ভাবমূর্তিতে।

হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন, এখানে কথা হচ্ছে ‘বাইজু’সকে নিয়েই। মাত্র  ৪৩ বছর বয়সেই এই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ভারতীয় তরুণ বাইজু রবীন্দ্রন ১০ হাজার কোটি ডলারের মালিক হয়েছেন। আর সেই সংস্থারই এখন দেউলিয়া হয়ে পথে বসার জোগাড়। কর্মচারীদের বেতন দিতে না পেরে নিজের বাড়ি পর্যন্ত বন্ধক রাখতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। নিতে হয়েছে মোটা টাকার ঋণ। দিন কয়েক ইডিও তল্লাশি চালিয়েছে তাঁর বাড়িতে। তাঁর বিরুদ্ধে উঠেছে বিদেশি মুদ্রা পরিচালনা আইন (ফেমা) ভাঙার অভিযোগ। ভাবলে অবাক লাগে,  একটা সময় এই সংস্থাই শূন্য থেকে শুরু করার স্বপ্ন দেখিয়েছিল কোটি কোটি ভারতীয়কে। অথচ আজ তারই পক্ষীরাজের সেই উড়ান আছাড় খেয়ে পড়েছে বাস্তবের মাটিতে।

বাইজুর বাবা-মা দুজনেই পেশায় শিক্ষক। তাই ছোট থেকেই বাড়িতে পড়াশোনার পরিবেশের মধ্যে বড় হয়েছেন বাইজু। বাইজু নিজেও বিজ্ঞানের ছাত্র। ইঞ্জনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করলেও পেশা হিসাবে তিনিও বেছে নিয়েছিলেন শিক্ষকতা।

ইঞ্জিনিয়ারিংয় পাশ করার পর চাকরি জীবনেই নিজের এক বন্ধুকে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা ‘ক্যাট’এর প্রস্তুতিতে সাহায্য করতেন বাইজু। সেই বন্ধুর রেজাল্ট ভালো হওয়ার পর নিজেও পরীক্ষা দিয়ে প্রথম বারের চেষ্টাতেই ক্যাটে শীর্ষ স্থান লাভ করেছিলেন তিনি। এরপর তাঁর ছাত্রসংখ্যা বাড়তে থাকে।

সালটা ছিল ২০০৬। সেবছর চাকরি ছাড়েন বাইজু। তত দিনে তাঁর ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কয়েকশো পেরিয়ে যায় । বাড়তে থাকে ক্যাটে সফল হওয়া পরীক্ষার্থীর সংখ্যাও।২০০৭ সালে নিজের নামেই ক্লাসের নাম দেন ‘বাইজু’স ক্লাস’। বিরাট ছাত্রছাত্রীদের জায়গা দিতে না পেরে ২০০৮ থেকে ২০০৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে ভিডিয়ো কোচিং শুরু করেন তিনি।

পরবর্তীতে স্ত্রী দিব্যা গোকুলনাথের সাথে মিলে তৈরি করেন স্টার্ট আপ সংস্থা ‘বাইজু’স’। ধীরে ধীরে বাইজু’স অজস্র সিড ফান্ডিং করে বহু নামি সংস্থা। ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জ়াকারবার্গও বাইজু’সে মোটা টাকার অর্থসাহায্য করেছিল। ভাবেই ২০১৮ সালের মধ্যে ১০০ কোটি ডলারের স্টার্ট আপ সংস্থায় পরিণত হয় বাইজু’স। ২০১৮ সালের মধ্যে ব্রিটেন, আমেরিকা-সহ অধিকাংশ ইংরেজিভাষী দেশেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল বাইজু’স অ্যাপ।

দু’বছর পর মাথায় বাইজু’স-এর মূল্য ১০ গুণ বৃদ্ধি হয়। ১০০ কোটি থেকে এক লাফে হাজার কোটির সংস্থায় পরিণত হয়। ততদিনে লোকডাউনের ধাক্কায় দেশজুড়ে অনলাইনে পড়াশোনা করার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। তখনও সাজানো-গোছানো সহজ প্রযুক্তি নিয়ে এগিয়ে এসেছিল বাইজু’স।২০২১ সালে বাইজু’স-এর সংস্থার মূল্য বেড়ে দাঁড়ায় ১৬৫০ কোটি ডলারে। ওই বছরই বাইজু’স-এর মূল্য বেড়ে দাঁড়ায় ২২০০ কোটি ডলারে। ভারতীয় ক্রিকেট টিমের স্পনসরের দায়িত্বও পেয়েছিল এই সংস্থা।

তারপরেই আচমকা ছন্দপতন! শেষ অর্থবর্ষে ৪৫৮৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বাইজু’স-এর। তাই বোঝা কমাতে হাজার হাজার কর্মী ছাঁটাই করা হয় বাইজু’সে। কিন্তু কোনও ভাবেই ঋণের বোঝা কমানো যায়নি বাইজু’স-এর। সুরাহা হয়নি শেষ ছ’মাসেও। এখন ১৫ হাজার কর্মীর বেতন দেওয়ারও ক্ষমতা নেই তাদের। তাই শেষ চেষ্টা করতে নিজের বাড়ি বন্ধক রেখে এক কোটি ২০ লক্ষ ডলার ঋণ নিতে চাইছেন বাইজু।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *