ফুঁসছে ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম! ঘূর্ণিঝড়ের খেল দেখে ইতিমধ্যেই লাল সতর্কতা জারি করেছে হাওয়া অফিস! কে রাখল এই মিগজাউম নাম? এই নামের অর্থই বা কী? মিগজাউম শব্দটির উৎপত্তি কোথা থেকে? ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ কারা, কীভাবে করেন? ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ কেন করা হয়? আগে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ কিভাবে করা হতো?
বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপই এখন শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড মেটেরলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের তথ্য অনুযায়ী গ্রীষ্মমণ্ডলীয় সামুদ্রিক ঝড়ের ক্ষেত্রে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬৩ কিলোমিটারের বেশি হলে সেটি ‘সাইক্লোন’ আর কম থাকলে বলা হয় ‘নিম্নচাপ’। সেই হিসাবে, বর্তমানে এই গভীর নিম্নচাপটি শক্তি সঞ্চয় করে সাইক্লোনে পরিণত হয়েছে।
তাই দেশ জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে এখন এই ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম। মৌসম ভবনের তরফে জানানো হয়েছে মঙ্গলবার দুপুরেই এই ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়বে দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু এবং অন্ধ্রপ্রদেশে। যদিও ফুঁসতে থাকা মিগজাউম ঘূর্ণিঝড় ইতিমধ্য়েই খেল দেখতে শুরু করে দিয়েছে তামিলনাড়ু এবং অন্ধ্রপ্রদেশের বিভিন্ন এলাকায়।
সোমবার থেকেই ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়ে হয়েছে তামিলনাড়ু এবং অন্ধ্রপ্রদেশের বিভিন্ন এলাকায়। সেইসাথে চলছে দমকা হাওয়া। বানভাসী চেন্নাইয়ের দেয়াল ধসে পড়ায় ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ২ জন। আহত হয়েছেন আরও একজন।বর্তমানে এই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান পশ্চিম-মধ্য ও সংলগ্ন দক্ষিণ পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে, দক্ষিণ অন্ধ্রপ্রদেশ ও সংলগ্ন উত্তর তামিলনাড়ুর উপকূলের কাছে। অন্ধ্রপ্রদেশে ও সংসগ্ন উত্তর তামিলনাড়ু-পুদুচেরিতে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ইতিমধ্যেই লাল সতর্কতা জারি করেছে হাওয়া অফিস।
তবে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কিন্তু শুধুমাত্র তামিলনাড়ু এবং অন্ধ্রপ্রদেশের উপরেই সীমাবদ্ধ নয়। ইতিমধ্যেই মিগজাউমের উপস্থিতি টের পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গবাসীরাও। সম্ভবত এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবেই সোমবার সকাল থেকেই কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের অধিকাংশ জেলা ছেয়ে গিয়েছিল ঘন কালো মেঘে।
ইতিমধ্যেই সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পারদ ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া, কলকাতা সহ ১১ জেলায়। মূলত মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টির হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন হল এই ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম-এর নাম দিয়েছে কোন দেশ? এই নামের অর্থই বা কি?
প্রত্যেক ঘূর্ণিঝড়েরই থাকে একটা নাম। থাকে সেই নামের নির্দিষ্ট অর্থও। তেমনই এই মিগজাউম শব্দের অর্থ হল শক্তি বা প্রতিরোধ। এই মিগজাউম নাম দিয়েছে মায়ানমার। ২০০০ সাল থেকে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (WMO) বা ESCAP-এর অন্তর্গত ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা এবং ওমান ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করে। পরে এই প্য়ানেলে ২০১৮ সালে সামিল হয় ইরান, কাতার, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহী।
নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক দেশই ঝড়ের নাম ঠিক করার জন্য কিছু নাম প্রস্তাব করেছে। ‘প্যানেল অন ট্রপিকল সাইক্লোন’-এর কাছে সেই নামগুলি পেশ করার পর একটি তালিকা তৈরী করা হয়। ২০২৩ সালে বঙ্গোপসাগরের বুকে এটি চতুর্থ ঘূর্ণিঝড়। অন্য়দিকে এটিই ভারত মহাসাগরে উদ্ভূত ষষ্ঠ ঘূর্ণিঝড়। তবে এখনকার আবহাওয়ার ভিত্তিতে এটিই হতে চলেছে চলতি বছরের শেষ ঘূর্ণিঝড়।
আগে যেভাবে নামকরণ করা হতো
এক সময় এই ঝড়গুলোকে বিভিন্ন নম্বর দিয়ে শনাক্ত করা হতো। কিন্তু সেসব নম্বর সাধারণ মানুষের কাছে দুর্বোধ্য। ফলে সেগুলোর পূর্বাভাস দিয়ে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করা অনেক কঠিন আর সময়সাপেক্ষ ছিল। তাই পরবর্তীতে ১৯৫৩ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়া অফিস আনুষ্ঠানিকভাবে Q, U, X, Y, Z বাদে A থেকে W পর্যন্ত আদ্যক্ষরের মেয়েদের নামে ঝড়ের নামকরণ করতেন। পরে ১৯৭৮ সাল থেকে ছেলেদের নামেও ঝড়ের নামকরণ করা শুরু হয়।
Leave a Reply