সৌরঝড়

সাবধান, ঝড়ের আগে অশনি সংকেত! ঠিক যেন আগুনের গোলা! দুরন্ত গতিতে পৃথিবীর দিকে ছুটে আসছে এক ভয়ানক সৌরঝড়! ধ্বংসের মুখে গোটা দুনিয়া! বিজ্ঞানীদের পূর্বাভাস শুনলেই ভয়ে ঠান্ডা হয়ে আসছে হাত পা! স্তব্ধ হতে পারে বহু পরিষেবা!

বছর শেষের আগেই এক বিরাট আশঙ্কার কথা শোনালেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবীর দিকে তেড়েফুঁড়ে আসছে এক বিরাট সৌরঝড়। যার ফলে এবার প্রায় ধ্বংসের মুখে গোটা পৃথিবী। আমেরিকার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ন্যাশনাল ওসিয়ানিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ ওরফে নোয়ার এই আশংকার কথা শুনলে ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসার জোগাড়।

পূর্বাভাস অনুযায়ী শুক্রবারই আঘাত হানতে পারে সৌরঝড়। যার ধাক্কায় ভেঙে পড়তে পারে গোটা বিশ্বের যাবতীয় ইন্টারনেট যোগাযোগ সংযোগ। ভয়াবহ এই সৌরঝড় শক্তিশালী ভূ-চৌম্বকীয় ঝাপটায় পরিণত হলে তার প্রভাব স্থায়ী হতে পারে বেশ কিছু দিন। পূর্বাভাস অনুযায়ী একাধিক জি-২ মাত্রার (মাঝারি শক্তির) সিএমই মিলে গিয়ে শক্তিশালী জি-৩ মাত্রায় সৌরঝড়ে পরিণত হয়ে আঘাত হানতে পারে পৃথিবীতে।

সৌরঝড় কী?

সৌর ঝড় হল সূর্য থেকে নির্গত তীব্র ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বিকিরণ। এই বিকিরণ মূলত নির্গত হয় সূর্যের বায়ুমণ্ডল থেকে। বিজ্ঞানের পরিভাষায়এই ধরনের সৌরঝড়কে বলা হয়, ‘করোনাল মাস ইজেকশান (সিএমই)’। এই সিএমই হল, সূর্যের করোনা থেকে নিঃসৃত বিপুল পরিমাণ প্লাজ়মা (আয়নিত কণা ও ইলেকট্রন) ও চৌম্বকক্ষেত্র। সিএমই-র গতি কমবেশি হতে পারে। তাই এই ঝড় পৃথিবীতে পৌঁছতে কখনও ১৫-১৮ ঘণ্টা লাগে আবার কখনও কয়েক দিন। সৌরঝড়ের ফলে কেঁপে উঠবে পৃথিবীর চারপাশে থাকা চৌম্বক ক্ষেত্র। উজ্জ্বল হয়ে উঠবে দুই মেরুতে থাকা  মেরুজ্যোতি।

সিএমই পৃথিবীর ম্যাগনেটোস্ফিয়ারের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া ঘটিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে। যার ফলে কৃত্রিম উপগ্রহের পাশাপাশি  প্রভাব পড়তে পারে জিপিএস -এও ।

সৌরঝড়ের প্রভাবে পৃথিবীতে কী হতে পারে?

আমেরিকার গবেষণা প্রতিষ্ঠান NOAA জানিয়েছে, কয়েকদিন আগেই জানিয়েছে, সূর্যের পরিমণ্ডলে একটি ফাটল দেখতে পাওয়া গিয়েছে। সেই ফাটল থেকেই পৃথিবীর দিকে  প্রবল বেগে ধেয়ে আসতে পারে সৌরবায়ু। তবে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের ওপর সৌরবায়ুর প্রভাব পড়লেও মানুষের স্বাস্থ্যের উপর এর প্রভাব পড়বে না।

সৌর বিজ্ঞানীরা বলেন, এই শক্তিশালী সৌরকণারা  পৃথিবীর  কাছাকাছি  আসলে পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের সাথে   তাদের ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। কিন্তু সৌরকণার সম্মিলিত শক্তি যদি বেশি হয়, তাহলে পৃথিবীর রেডিও বা টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থাকে তছনছ হয়ে যায়।

তবে  এই সৌরঝড় ইন্টারনেট পরিষেবার কতটা ক্ষতি করতে পারে সে ব্যাপারে কোনও নির্দিষ্ট তথ্য নেই বিজ্ঞানীদের হাতে। কারণ, এর আগে ১৯২১ সালে পৃথিবীতে যখন ভয়ঙ্কর সৌরঝড় আছড়ে পড়েছিল, তখন আজকের এই ডিজিটাল দুনিয়ার কোনো অস্তিত্বই ছিল না।

বিজ্ঞানীদের অনুমান এই সৌরঝড়ে প্রবল ক্ষতি হতে পারে সমুদ্রের নীচে বিছিয়ে রাখা ইন্টারনেট কেবলের। বার্তার গতি বাড়াতে কেবল গুলিতে কয়েক মাইল অন্তর ‘রিপিটার’ বসানো থাকে। পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র স্বাভাবিক না থাকলে বিগড়ে যায় ‘রিপিটর’গুলি। ১৯৮৯ সালের মার্চে যে সৌরঝড়ের দাপটে কানাডার কুইবেক প্রদেশে টানা ন’ঘণ্টা ‘ব্ল্যাক আউট’ হয়ে গিয়েছিল। তবে এবারও তেমনটা হবে কিনা তার উত্তর দেবে সময়।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *