সপ্তম আশ্চর্যের দিন শেষ! এবার খোঁজ মিলল বিশ্বের অষ্টম আশ্চর্যের! জানেন পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্যের শিরোপা পেল কোন প্ৰাচীন স্থাপত্য? এশিয়াতেই রয়েছে বিশ্বের এই অভাবনীয় সৃষ্টি! নামটা জানলে চমকে যাবেন যে কেউ! ভারত থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বেই রয়েছে পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য! ৯৯ শতাংশ মানুষই জানেন না সঠিক উত্তর!
বিশ্বের কাছে প্রাচীন যুগের সাতটি স্থাপত্য সপ্তম আশ্চর্য বলে পরিচিত। তাই এতদিন সকলেই শুনেছেন বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের কথা! এবার হদিশ মিলল পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য্যের। অভাবনীয় নির্মাণের জন্য এবার অষ্টম আশ্চর্যের শিরোপা উঠল কম্বোডিয়ার আঙ্করভাট মন্দিরের মুকুটে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে রোমান শহর পম্পেইকে হারিয়ে অষ্টম আশ্চর্যের স্থান দখল করে নিয়েছে এশিয়ার এই প্রাচীন স্থাপত্য।
তাই আঙ্করভাট মন্দিরকে এমনি এমনিই এশিয়ার গর্ব বলা হয় না! প্রাচীন এই মন্দিরের বিস্ময়কর সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। স্থাপত্যের নিরিখেই এই অষ্টম আশ্চর্যের তালিকায় জায়গা পেয়েছে এই মন্দির ।বিশ্ব বিখ্যাত এই মন্দিরের ঐতিহাসিক গুরুত্বও অপরিসীম। ইতিহাসবিদদের মতে দ্বাদশ শতাব্দীতে রাজা দ্বিতীয় সূর্যবর্মন এই আঙ্কোরভাট মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আরাধ্য দেবতা বিষ্ণুকে নিবেদন করেই এই মন্দির নির্মাণ করেছিলেন তিনি।
পরবর্তীতে প্রাচ্যে বৌদ্ধ ধর্ম ছড়াতে শুরু করে। তাই প্রথমদিকে এটি হিসাবে বিষ্ণু মন্দির হিসাবে পরিচিতি পেলেও কালক্রমে এই বিষ্ণুমন্দিরই বদলে যায় বৌদ্ধমন্দিরে। ৫০০ একর জমির ওপর তৈরি এই মন্দিরে এই মন্দিরে আজও রয়েছে আট হাতের ভগবান বিষ্ণুর মূর্তি। স্থানীয় বাসিন্দাদের বিশ্বাস, যুগ যুগ ধরে ওই মূর্তিই তাঁদের সমস্ত বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করছে।
পাশাপাশি মন্দিরের দেওয়ালে আজও খোদাই করা রয়েছে বৌদ্ধ পুরাণ। খোদাই করা আছে হিন্দু ধর্মেরও নানান পৌরাণিক কাহিনী। তাই বোঝাই যাচ্ছে হিন্দু ও বৌদ্ধ দুই ধর্মের সংস্কৃতির মেলবন্ধন রয়েছে এই মন্দিরে। তাই হিন্দু থেকে বৌদ্ধ ধর্মস্থলে রূপান্তরিত হওয়ার স্মারক হিসেবে তো বটেই সেইসাথে ওই অঞ্চলের ধর্মীয় এবং ঐতিহাসিক বিবর্তনের সাক্ষীও এই মন্দির। এখনও সন্ন্যাসীরা প্রার্থনা করতে হাজির হন এই মন্দিরে।
মন্দিরের ভাস্কর্য্যের টানেই বছর বছর ভিড় জমান অসংখ্য পর্যটক। মূল মন্দিরে চত্বরে পাঁচটি পদ্মের আকারের মিনার রয়েছে। যা আসলে হিন্দু, বৌদ্ধ এবং জৈন গ্রন্থে উল্লেখিত পঞ্চশিখরবিশিষ্ট মেরু পর্বতের প্রতিরূপ। মূল মন্দিরটিকে ঘিরে রয়েছে একটি আকর্ষণীয় পরিখা। মন্দিরগাত্রের কারুকার্যও রীতিমতো নজর কাড়ে।
এসবের পাশাপাশি অঙ্কোরবাট মন্দিরের মূল আকর্ষণ হল, রাজকীয় মিনারের মধ্যে দিয়ে সূর্যোদয় দেখা। ভোরের আলো-আঁধারি কাটিয়ে পূর্ব দিকে যখন একটু একটু করে সূর্য্যি মামার দেখা মেলে যখন সূর্য দেখা মেলে, ঠিক তখনই গোলাপি, কমলা আর সোনালী আভায় সেজে ওঠে গোটা মন্দির। শুধুমাত্র এই স্বর্গীয় দৃশ্য দেখার জন্য হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসেন এই আঙ্করভাট মন্দিরে। আর এখন পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্যের শিরোপা পাওয়ায় ভীড় আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।
২০০১ সালে, সুইজারল্যান্ডের জুরিখ শহরে তৈরী হয়েছিল নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্সেডশন। ২০০৭ সালে আধুনিক পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য হিসাবে ওই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিল চিনের পাঁচিল, মেক্সিকোর মায়া সভ্যতার সময়ে তৈরি পিরামিড চিচেন ইত্জা, জর্ডনের পেত্রা, ইনকা সভ্যতার শহর পেরুর মাচুপিচু, রিও ডি জেনেইরোর ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার, রোমের কলোজিয়াম আর ভারতের তাজমহল। এবার অষ্টম স্থান পেল কম্বোডিয়ার আঙ্করভাট মন্দির। উল্লেখ্য,এই আঙ্করভাট মন্দিরকে আগেই ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের স্বীকৃতি দিয়েছে UNESCO। তাছাড়া বৃহত্তম ধর্মীয় নির্মাণস্থল হিসেবে গিনেস ওয়র্ল্ড রেকর্ডসে নাম রয়েছে এই মন্দিরের।
Leave a Reply