স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে আর এই সুবিধা পাবেন না রাজ্যবাসী! এবার থেকে শুধুমাত্র সরকারি হাসপাতালেই এই ছাড় পাবেন সাধারণ মানুষ! স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প নিয়ে বড় ঘোষণা রাজ্য সরকারের! সাধারণ মানুষ ছাড়াও এক গুচ্ছ নিয়ম জারি হল রাজ্যের চিকিৎসকদের জন্যও।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের দ্বারা উপকারিত হয়েছে রাজ্যের লক্ষ লক্ষ মানুষ। ২০১৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর এই প্রকল্পের শুভ সূচনা করেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। এই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল রাজ্যবাসীকে নিখরচায় সরকারি ও অনান্য প্রকল্পের আওতাভুক্ত সমস্ত বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ন্যূনতম স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া।
স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক পরিবার ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত প্রাথমিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা পায়। তবে এই প্রকল্পের আওতায় থাকা কোনো পরিবারের সদস্য যদি কোন জটিল রোগে অসুস্থ হয়ে পড়েন তাহলে তার চিকিৎসার জন্য সরকারের তরফ থেকে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা পর্যন্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষা পাওয়া যায়। নতুন বছর শুরুর আগেই স্বাস্থ্যসাথী নিয়ে কড়া হয়েছে রাজ্য সরকার।
তাই এবার স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প নিয়ে একগুচ্ছ নতুন নির্দেশিকা জারি করল রাজ্য সরকার। এতদিন এই সরকারি প্রকল্পের সাহায্যে বেসরকারি হাসপাতালেও স্বাস্থ্য সুরক্ষা পাওয়া যেত। কিন্তু এবার থেকে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড থাকলেও হাড়ের অস্ত্রপচার করানো যাবে না বেসরকারি হাসপাতালে। তবে পথ দুর্ঘটনায় যদি হাড়ে চোট লেগে থাকে তবে বেসরকারি হাসপাতালে এই কার্ডের সুবিধা পাওয়া যাবে।
স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকায় সাফ জানানো হয়েছে এবার থেকে হাড়ের অপারেশন করা যাবে শুধুমাত্র সরকারি হাসপাতালে। সরকারি হাসপাতালে অর্থোপেডিক চিকিৎসার পরিকাঠামো না থাকলে তবেই তাকে বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা যাবে। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে বেসরকারি হাসপাতালে হাড়ের অস্ত্রোপচার করার জন্য এবার থেকে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসককে দিয়ে নির্দিষ্ট ফর্মে রেফারাল সার্টিফিকেট বানাতে হবে। প্রথমে রাজ্যের মালদা ও মুর্শিদাবাদ জেলায় এই নিয়ম চালু ছিল। এবার সেই মডেলই সামনে রেখে এগোতে চাইছে রাজ্য সরকার।
বিজ্ঞপ্তিতে হাইড্রোসিল সার্জারির ক্ষেত্রেও জারি হয়েছে নির্দেশিকা:
– হাইড্রোসিল অপারেশন করাতে গেলে সরকারি হাসপাতালেই করতে হবে।
– বেসরকারি হাসপাতালে হার্নিয়া অপারেশন করা যাবে না। ছাড় দেওয়া হয়েছে কেবলমাত্র অবস্ট্রাকটিভ হার্নিয়া, ইনকারসিরেটেড হার্নিয়া, স্ট্র্যাঙ্গুলেটেড হার্নিয়া বা হার্নিয়ার ক্ষেত্রে।
– স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় দাঁতের স্কেলিং, ফিলিং, পাল্প ক্যাপিং বা দাঁত তোলা, পূর্ণ বা আংশিক ডেঞ্চারও করা যাবে না বেসরকারি হাসপাতালে।
-এছাড়াও, ক্যান্সার সার্জারি, পথ দুর্ঘটনার শিকার রোগীদের প্রস্থেসিস ছাড়া দাঁতের যাবতীয় চিকিৎসার সুবিধা পাওয়া যাবে না বেসরকারি হাসপাতালে।
আর কী কী আছে নির্দেশিকায়?
-চিকিৎসা শুরুর আগে রোগী রেফার করলে বা মারা গেলে বিমার পুরো টাকা পাবে না হাসপাতাল। – অপারেশন দরকার নেই এমন রোগীর ক্ষেত্রে ভর্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু হলে মিলবে মাত্র ১৫ শতাংশ টাকা।
– পরীক্ষার পর অপারেশন না করে রেফার করলে মিলবে ২৫ শতাংশ টাকা।
– অপারেশন করতে গিয়ে যদি দেখা যায় অপারেশন সম্ভব নয়, তাহলে মিলবে প্যাকেজের ৩৫ শতাংশ টাকা।
– হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়ার আগে রোগী মারা গেলে মিলবে ৮৫ শতাংশ টাকা।
স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের নিয়মে এবার পরিবর্তন আনা হয়েছে ডাক্তারদের জন্যও। এবার থেকে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের কোনও পরিষেবা দিতে হলে সংশ্লিষ্ট ডাক্তারকে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের নথিভুক্ত করতে হবে। একই নিয়ম প্রযোজ্য ভিন রাজ্যে রেজিস্ট্রেশন থাকা ডাক্তারদের জন্যও। অন্য রাজ্যের রেজিস্ট্রেশন নম্বর নিয়ে এখানে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে চাইলে কাজ শুরুর ৬ মাসের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ মেডিক্যাল কাউন্সিলে নাম নথিভুক্ত করাতে হবে।
কেন এই নিয়ম?
স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় চিকিৎসা সম্পর্কিত কোনও অভিযোগের তদন্ত করার সময় চিকিৎসকের খোঁজ পেতে সমস্যা হয়। অনেক সময় নম্বর ধরে খোঁজ করতে গিয়ে দুজন ডাক্তারের নাম উঠে আসে। তাঁদের মধ্য়ে এক জনের রেজিস্ট্রেশন আবার অন্য রাজ্যে। তাই বাংলায় চিকিৎসা করলে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলে নাম নথিভুক্ত করা আবশ্যক। ইতিমধ্যেই হাসপাতাল গুলিকেও এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, রাজ্যের সব চিকিৎসককে বাধ্যতামূলক ভাবে আধার ও প্যান কার্ডের নম্বর দিয়ে স্বাস্থ্যসাথী পোর্টালে নাম রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে।
ইদানিং জেলা হাসপাতাল, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজগুলির মান বেড়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ ছুটছেন বেসরকারি হাসপাতালেই। তাই রাশ টানতেই এই নতুন নিয়ম জারি করা হয়েছে বলে দাবি ওয়াকিবহাল মহলের।
Leave a Reply