বড্ড ভারী! সুমো ফাইটারদের ওজনের জন্য উড়ল না বিমান! সাধারণ মানুষের থেকে ২০ গুণ বেশি ওজন! সুমো পালোয়ানদের ওজন কত কেজি জানেন? সুমো পালোয়ানরা কী খেয়ে এত ওজন বাড়ায় জানেন? সুমো কুস্তিগীরদের প্রিয় খাবার চাঙ্কো নাবে আসলে কি? কী কী থাকে সুমো পালোয়ানদের ডায়েটে?
বড্ড ভারি! অতিরিক্ত ওজনের কারণেই সুমো পালোয়ানদের নিয়ে উড়তেই পারলো বিমান। সম্প্রতি এমনই এক অস্বাভাবিক ঘটনার সাক্ষী থাকলো জাপানের এয়ারলাইন্স। তাই তখন বাধ্য হয়েই তাদের জন্য অন্য বিমানের ব্যবস্থা করে এই উড়ান সংস্থা।
মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী খবর ওশিমা দ্বীপে জাতীয় ক্রীড়া উৎসবে যোগ দেওয়ার জন্যই এই সুমো ফাইটারদের টোকিও থেকে ওসাকা যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গন্ডগোলটা হয় একেবারে শেষ মুহূর্তে। নির্ধারিত দিনে সুমো ফাইটাররা বিমানে ওঠার পরেই দেখা যায় কুস্তিগীরদের ওজন এতোটাই বেশি, যে তাঁদের নিয়ে ওড়া সম্ভব নয়। ফলে বাধ্য হয়েই ওই দু’টি বিমান বাতিল করে জাপান এয়ারলাইন্স।
পরে যদিও কুস্তিগীরদের জন্যই বিশেষ বিমানের ব্যবস্থা করে জাপানের এয়ারলাইন্স। উড়ান সংস্থা সূত্রের খবর ওই বিমানের এক একজন কুস্তিগীরের ওজন ছিল ২৬৪.৫৫ পাইন্ড অর্থাৎ ১২০ কেজির বেশি যা সাধারণ যাত্রীদের ওজনের চেয়ে ১০০ পাউন্ড অর্থাৎ প্রায় ৪৫ কেজি বেশি।
এই অতিরিক্ত ওজন নিয়ে বিমান আকাশে উড়লে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকতো। তাই তাদের জন্য পরে বিশেষ বিমানের আয়োজন করা হয়। তাই সুমো ফাইটারদের দুটো ভাগে টোকিও থেকে ওসাকা পাঠানো হয়। প্রথম লটে ১৪ জন আর দ্বিতীয় লটে ২৭ জনকে পাঠানো হয়েছিল।
জাপানের এই সুমো পালোয়ানদের খ্যাতি জগৎ জোড়া। ২ হাজার বছরের পুরনো এই সুমো কুস্তিই হল জাপানের জাতীয় খেলা। সুমো কুস্তিগীরদের ওজন মোটামুটি ২৫০ কেজি থেকে ৪০০ কেজির কাছাকাছি। অতিরিক্ত ওজনের জন্য বিশেষ ডায়েট করেন তাঁরা। শুধু তাই নয়, খেলতে নামার আগে বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন প্রত্যেকে। যা অত্যন্ত কঠিন। মাত্র ১৫-১৬ বছর বয়স কিশোরদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়।
কাকভোরে ঘুম থেকে উঠলেও এরা ব্রেকফাস্ট করে না। ঘুম থেকে উঠেই শুরু করে দেন অনুশীলন। এইভাবে হজম শক্তি বেড়ে যাওয়ায় দুপুরে এরা ভারী খাবার খায়। ওজন বাড়ানোর জন্য সুমো পালোয়ানরা বিশেষ ধরনের স্ট্যু খেয়ে থাকে। স্থানীয় ভাষায় একে চাঙ্কো নাবে বলা হয়। নাবের অর্থ পাত্র বা বাটি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চাঙ্কোই খাচ্ছে তাঁরা। সাধারণত তাঁদের হাতে বানানো যে কোনও খাবারকেই চাঙ্কো বলা হয়।
এটি বিশেষ এক ধরনের ডায়েট। এরমধ্যে থাকে তাজা সবজি, মুরগির মাংস ও মাছ। সবজির মধ্যে থাকে পেঁয়াজ, রসুন, বিট, গাজর, বিন, বাঁধকপি, ফুলকপি, মাশরুম ও মুলো। এছাড়া থাকে টোফু, ক্যালরি সমৃদ্ধ মোাচি, স্টার্চের তৈরি কেক ও মাংস।
চাঙ্কো নাবে-তে যে মোচি ব্যবহার করা হয়। সেটি আসলে স্টার্চের তৈরি কেক। এই মোচি দেখতে একটা দেশলাই বাক্সের মতো হলেও এতে এক বাটি ভাতের সমান ক্যালরি থাকে। সুমো কুস্তিগীররা এক বাটি চাঙ্কো নাবে-তে ছয় থেকে সাতটি মোচি দিয়ে থাকেন।
জানলে অবাক হবেন একজন সাধারণ মানুষের যখন ২ হাজার ক্যালরি প্রয়োজন হয় তখন সুমো পালোয়ানদের প্রত্যেকদিন মোটামুটি ২০ হাজার ক্যালরি প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ প্রায় দশ গুণ। দুপুরের খাবারের সঙ্গে অনেকে পাঁচ-ছয় বোতল বিয়ারও খান। দুপুরের খাবারের পর চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা ঘুমান তাঁরা।
ট্রেনিংয়ের সময় এই কুস্তিগীরদের খাবার বানানোও শিখতে হয়। খাবারে কতটা নুন পড়ে, কী সস দিলে তাতে ক্যালরি বেশি, কোন স্যুপ আরও বেশি খিদে বাড়াবে জানতে হয় সমস্ত খুঁটিনাটি বিষয়ও। রাতেও ভারী খাবার খেয়েই ঘুমাতে যান সুমো পালোয়ানরা। সেই খাবারে পর্ক, চিকেন বা বিফ থাকা মাস্ট।
Leave a Reply