ডঃ বিধানচন্দ্র রায়

কল্যাণী নামে ডঃ বিধানচন্দ্র রায়ের সত্যিই কি কোনো প্রেমিকা ছিলেন? ধন্বন্তরি চিকিৎসকের সাথে স্মার্ট সিটি ‘কল্যাণী’-র সম্পর্কের নেপথ্যে রয়েছে কোন কাহিনী? ধন্বন্তরি এই চিকিৎসক সত্যিই কি রোগী দেখেই বলে দিতেন কি অসুখ? জানেন কে ছিলেন এই কল্যাণী? কেন পরিণতি পেল না বিধানচন্দ্র রায়ের সাথে কল্যাণীর সম্পর্ক? কার জন্য ভেঙে গিয়েছিল তাঁদের সম্পর্ক!  রইল সেই না হওয়া প্রেমের অজানা কাহিনী।

বাংলার একমাত্র ধন্বন্তরি চিকিৎসক ছিলেন ডঃ বিধানচন্দ্র রায়। তাঁর  চিকিৎসার খ্যাতি ছিল জগৎজোড়া। ছাত্র জীবন থেকেই এক আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল বিধানচন্দ্র রায়ের। রোগী দেখে কিংবা রোগীর কাশি শুনে বা  শুধু চোখ দেখেই তিনি নির্ভুলভাবে বলে দিতে পারতেন ওই রোগীর কি হয়েছে।

এই বিশেষ ক্ষমতার জন্য এশিয়া মহাদেশে তো বটেই সুদূর ইউরোপ-আমেরিকাতেও ছড়িয়ে পড়েছিল তাঁর  খ্যাতি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেও রোজ সকালে নিজের বাসভবনে বিনা পয়সায় রোগী দেখতেন তিনি। তবে শুধু সাধারণ মানুষ নয় একসময় বিধানচন্দ্র রায়ের হাতে চিকিৎসা হয়েছে মহাত্মা গান্ধী,মতিলাল নেহেরু, জহরলাল নেহেরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এমনকি আমেরিকার রাষ্ট্রপতি জন এফ কেনেডির-ও।

অথচ তাঁরই নাকি ডাক্তার হওয়ার  ইচ্ছা ছিল না। পরাধীন ভারতে রবীন্দ্রনাথের নোবেল প্রাপ্তির আগে ১৯১১ সালে ইংল্যান্ডে অর্জন করেছিলেন এমআরসিপি এবং এফআরসিএস ডিগ্রি। তাঁর  চিকিৎসা করার ক্ষমতা ছিল যে কোন  প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা তথা ডিগ্রির থেকে অনেক বড়।

পরবর্তীকালে তিনিই হয়েছিলেন বাংলার দ্বিতীয় এবং অন্যতম সফল মুখ্যমন্ত্রী। একসময় কলকাতার  মহানাগরিক অর্থাৎ মেয়রও ছিলেন বিধানচন্দ্র রায়। এক কথায় এক জীবনে অতিরিক্ত সফল মানুষ তিনি। তবে মহান এই বাঙালি চিকিৎসককে নিয়ে প্রচলিত রয়েছে এমন কিছু কাহিনী যা সত্যি নাকি সত্যির মতো তা নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট সন্দেহ। তাঁকে নিয়ে প্রচলিত রয়েছে এমনই একটি  অসম্পূর্ণ প্রেমকাহিনি। যার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে স্মার্ট সিটি কল্যাণীর নাম।

প্রশ্ন ওঠে কেন চিরকুমার রইলেন বিধান রায়? এই প্রশ্নের হাত ধরেই চলে আসে বহু প্রচলিত এক কাহিনী। তখন   ডাক্তারি পাশ করে সবে প্র্যাকটিস শুরু করেছিলেন তিনি। তবে রোজগার খুব বেশি ছিল না। পারিবারও ছিল সাধারণ মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবার। তখন নাকি  কিংবদন্তি ডাক্তার নীলরতন সরকারের মেয়ে কল্যাণীর সঙ্গে সম্পর্ক হয় তাঁর। কিন্তু বিধানচন্দ্র রায়ের রোজগার শুনে নীলরতন সরকার তাঁকে বলছিলেন তাঁর মেয়ের হাতখরচ নাকি এর থেকে বেশি। তাই এই সম্পর্ক পরিণতি না পাওয়ার কারণেই কি চিরকুমার থেকে গিয়েছিলেন বিধানচন্দ্র রায়? তবে  জনপ্রবাদ একথা বললেও এর কোন লিখিত প্রমাণ নেই।

অনেকের মতে, প্রেমিকা কল্যাণীর সঙ্গে অপূর্ণ প্রেমের স্মৃতি হিসাবেই রাজ্যের নতুন আধুনিক শহরের এই নাম রেখেছিলেন বিধানচন্দ্র রায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গঙ্গার পাড়ের এই জায়গাটি  ছিল মার্কিন সেনাদের  উপনিবেশ, ‘রুজভেল্ট নগর’। পরবর্তী সময় সেখানেই বিধানচন্দ্র তৈরি করলেন এখনকার স্মার্ট সিটি  ‘কল্যাণী’। তবে নামটা কতখানি কাকতালীয় তা নিয়ে রয়েছে দ্বিমত।

তবে প্রশ্ন হল জনশ্রুতিতে উঠে আসা এই কল্যাণী কি সত্যিই বিধানচন্দ্র রায়ের মেয়ে ছিলেন? নীলরতন সরকারের স্ত্রী ছিলেন নির্মলা দেবী। তাঁদের পাঁচ মেয়ে এবং এক ছেলে।  প্রত্যেকেই ছিলেন সুপ্রতিষ্ঠিত। কিন্তু বাস্তবে তাঁদের  কল্যাণী নামের কোনও মেয়ে ছিল না। নীলরতন সরকারের দ্বিতীয় কোনও স্ত্রীও ছিল না। তাই আদতে কল্যাণী নামে নীলরতন সরকারের কোনও মেয়েই ছিল না। তাই সম্ভবত সবটাই বাঙালির কল্পনা শক্তির জাদু।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *