দুর্গাপুজো শেষ হয়ে যেতেই মন খারাপ হয়ে যায় গোটা বাংলার। আবার সেই একটা বছরের অপেক্ষা।
তবে দুর্গাপুজোর পর সবচেয়ে বেশি মন খারাপ হয় পুজো প্যান্ডেল খুলতে দেখলে। কিন্তু বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। তাই দুর্গাপুজো শেষ হয়ে গেলেও শেষ হয় না বাঙালির পুজো পার্বণ।
আমাদের রাজ্যেই এমন কিছু জায়গা রয়েছে যেখানে দুর্গা পুজো ছাড়াও গুরুত্ব পেয়ে থাকে একাধিক দেবদেবীর পুজো।ঠিক যেমন বারাসাতের কালীপুজো, কৃষ্ণনগর-চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজো,কালনার সরস্বতী পুজো, বাঁশবেড়িয়ার কার্তিক পুজো কিংবা হাওড়ার বিখ্যাত ‘লক্ষ্মীগ্রাম’-এর দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা।
জানেন বাংলার কোথায় রয়েছে এই লক্ষ্মী গ্রাম? হাওড়ার বাগনান রেলস্টেশন থেকে মাত্র ১৯ কিলোমিটার দূরেই অবস্থিত খালনা গ্রাম। সার্বজনীন লক্ষ্মীপুজোর জন্য বিখ্যাত হাওড়ার এই প্রাচীন গ্রামই পরিচিত ‘লক্ষী গ্রাম’ নামে। বিজয়া দশমীর দিন চোখের জল ফেলতে ফেলতে মা দুর্গাকে সবাই যখন কৈলাসে পাঠান ঠিক তখনই হাওড়ার এই লক্ষী গ্রামে থাকে সাজো সাজো রব।
আকাশে কোজাগরি পূর্ণিমার চাঁদকে সাক্ষী রেখেই এই গ্রামের মানুষজন আহ্বান জানান দেবী লক্ষীকে। ছোট বড় মিলিয়ে এই গ্রামে মোট ১৫০টিরও বেশি পুজো হয়ে থাকে। বিরাট বিরাট সব পুজো প্যান্ডেলে দেবী লক্ষ্মী অধিষ্ঠান করেন তিন দিন ধরে। বাংলার এই বিখ্যাত পুজোর সাথে জড়িয়ে রয়েছে বিগত ২০০ বছরের পুরনো ইতিহাস। জনশ্রুতি রয়েছে ২০০ বছর আগে প্রায় প্রত্যেক বছর ভয়াবহ বন্যায় নদীর জল দুকুল ভাসিয়ে নষ্ট করে দিত কৃষকদের সমস্ত ফসল।
তখন এই পরিস্থিতি থেকে নিস্তার পেতেই কৃষকরা স্মরণাপন্ন হয়েছিলেন দেবী লক্ষ্মীর। শুরু করেছিলেন চারুময়ী লক্ষ্মীর আরাধনা। সে সময় এই গ্রামের কৃষকরাই কৃষি কাজের বদলে মনোনিবেশ করেছিলেন ব্যবসা-বাণিজ্যে। সেই থেকেই খালনাতে অচলা দেবী লক্ষ্মী। এই গ্রামের মানুষ জন সোনা,লোহা ও অন্যান্য ধাতুর ব্যবসা করে সমৃদ্ধি লাভ করেছেন। খালনার মানুষের ব্যবসায়িক প্রবৃত্তি থেকেই উদ্ভব হয় এই লক্ষ্মীপুজোর। কালের নিয়মে সেই পুজো এখন উৎসবে পরিণত। এই লক্ষ্মীপুজোকে কেন্দ্র করে গ্রামজুড়ে তৈরি হয় এক অলৌকিক পরিমণ্ডল। ঐতিহ্যময় সাবেকি পুজোর সাথে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শুরু হয়েছে ‘থিম’ পুজোও।
অতীতে যখন খালনা গ্রাম বন্যার জলে ডুবে যেত তখন দুর্গাপুজোর আয়োজন হতো না। কিন্তু লক্ষ্মী পুজোর সময় বন্যার জল নেমে গিয়ে জেগে উঠতো গ্রাম। সেই থেকেই গ্রামের মানুষমা লক্ষ্মীর আরাধনায় মেতে ওঠেন।তাই দুর্গা পুজো,কালীপুজো কিংবা জগদ্ধাত্রী পুজোর ভীড়ে লক্ষ্মী গ্রামের মানুষদের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে শুধুমাত্র এই লক্ষ্মী পুজোর সাথেই। বাইরে থাকা গ্রামবাসীরাও ফিরে আসেন ঘরে।
Leave a Reply