বিদেশের মাটিতে ভারতীয়দের জয়জয়কার! বিশ্বসেরা বিদেশী সংস্থার মাথায় রয়েছেন কোন ভারতীয়রা? কাদের হাত ধরে জগৎ সভায় আবার শ্রেষ্ঠ ভারত? কোন ভারতীয়দের ওপর বিশ্বের সেরা সংস্থার দায়ীত্ব? নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রতিভাধর এই ভারতীয়রা কারা?
দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও ভারতীয়দের জয়জয়কার! শিক্ষাক্ষেত্রে ভারতীয়রা প্রাচীনকাল থেকেই দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন। প্রাচীনকালে ভারতের আর্যভট্ট কিংবা বরাহমিহিররা যে জ্ঞানের আলো ফুটিয়েছিল তা আজও অব্যাহত নতুন প্রজন্মের হাত ধরে। শিক্ষা,বৈজ্ঞানিক গবেষণা,শিল্প অভিনয়, চিকিৎসা কিংবা অর্থনীতি সবকিছুতেই নিজেদের বিশেষ প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন ভারতীয়রা। পিছিয়ে নেই ব্যবসা-বাণিজ্যতেও। তাই বিশ্বের বড় বড় বহু বহুজাতিক সংস্থাও কুর্নিশ জানাচ্ছে ভারতীয়দের। আসুন দেখে নেওয়া যাক বিশ্বসেরা এই সমস্ত নামী সংস্থার মাথায় বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কোন ভারতীয়রা?
অরবিন্দ কৃষ্ণা: আমেরিকার অন্যতম বড় প্রযুক্তি সংস্থা আইবিএম গোটা বিশ্বের ১৭৫টি দেশে ব্যবসা করে। বর্তমানে এই এই বহুজাতিক সংস্থার সিইও হলেন অরবিন্দ কৃষ্ণা। তিনি ভারতের আইআইটি কানপুরের ছাত্র। ৬১ বছর বয়সী এই ব্যক্তি গত দু’দশক ধরে আইবিএমের সাথে যুক্ত।
সুন্দর পিচাই: গুগ্ল এলএলসি এবং অ্যালফাবেট আইএনসির সিইও-ও সুন্দর পিচাইকে সবাই চেনেন। খড়্গপুর আইআইটির ছাত্র তিনি। আদতে তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ের বাসিন্দা সুন্দর ২০০৪ সালে সাধারণ ম্যানেজমেন্ট এগজিউটিভ হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন গুগলে। পরবর্তীতে গুগলে যোগ দেওয়ার ১৫ বছরের মাথায় অর্থাৎ ২০১৯ সালে গুগলের মূল সংস্থা অ্যালফাবেটের শীর্ষ স্থানে বসেন তিনি। তখন তাঁর বয়স মাত্র ৪৭।
সত্য নাদেলা: ১৯৯২ সালে মাইক্রোসফটে যোগ দেন নাদেলা। কাজ শুরু করেছিলেন সার্ভার অ্যান্ড টুল বিভাগ থেকে। পরবর্তীতে তাঁর নেতৃত্বেই ক্লাউড কম্পিউটিং সংক্রান্ত কাজে বিরাট সাফল্য করে মাইক্রোসফট। তবে আদতে ভারতীয় সত্য নাদেলার জন্ম তেলুগু পরিবারে। বর্তমানে তাঁর বয়স ৫৬ বছর। ২০১৪ সালে তাঁকে মাইক্রোসফটের মাথায় বসানো হয়। পরে মাইক্রোসফটের এগজিকিউটিভ চেয়ারম্যানও হন তিনি।
শান্তনু নারায়ণ: অ্যাডোব ইনকর্পোরেশেনর সিইও শান্তনু নারায়ণও ভারতীয়। হায়দরাবাদের বাসিন্দা শান্তনু ১৯৯৮ সালে অ্যাডোবে যোগ দেওয়ার আগে দীর্ঘদিন অ্যাপলে কাজ করেছেন। সাত বছরের মাথায় ২০০৫ সালে তাঁকে সিওও পদে বসানো হয়। আর ২০০৭ সালে আমেরিকান সংস্থাটি তাদের আমেরিকান সিইওকে সরিয়ে দায়িত্ব দেয় শান্তনুকে।
অজয়পাল সিংহ বঙ্গা: ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট অজয়পাল সিংহ বঙ্গা জলন্ধরের শিখ পরিবারের সন্তান। আগে তিনি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পেমেন্ট প্রসেসিং কর্পোরেশেন মাস্টারকার্ড ইনকর্পোরেশেনরেও সিইও এবং এগজিকিউটিভ চেয়ারম্যান ছিলেন। আমদাবাদ আইআইএমের ছাত্র অজয়পাল জন্মেছিলেন পুণেতে। ১৯৮১ সালে নেসলে-তে ইন্টার্নশিপ করেছিলেন তিনি।
জয়শ্রী উল্লাল: আমেরিকার কম্পিউটার নেটওয়ার্কিংয়ের নামী সংস্থা আরিস্টা নেটওয়ার্কের শীর্ষ স্থানে রয়েছেন ভারতীয় নারী জয়শ্রী উল্লাল। ৬২ বয়সী জয়শ্রী লন্ডনের হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ জয়শ্রীর স্কুলের পড়াশোনা পুরোটাই দিল্লিতে। পরে বিদেশে ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করার পর বিদেশেই চাকরি করেন জয়শ্রী। বিশ্বের নেটওয়ার্কিং জগতের প্রথম পাঁচ প্রভাবশালীদের একজন তিনি। ২০০৮ সালে তাঁকেই আরিস্তা তাদের সিইও এবং প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন।
রাজীব সুরি: ব্রিটেনের নামি টেলিকমিউনিকেশন সংস্থা ইনমারস্যাটের সিইও রাজীব সুরি। ২০১৪ সালে তিনি নোকিয়ার সিইও পদে বসেন। টানা ৬ বছর দায়িত্ব সামলেছেন রাজীব। দিল্লির বাসিন্দা রাজীব মনিপাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেছেন।
জর্জ কুরিয়েন: কেরলের বাসিন্দা জর্জ কুরিয়েন ২০১৫ সালে ক্যালিফোর্নিয়া কেন্দ্রিক ডাটা ইনফ্রাস্ট্রাকচার সংস্থা নেট অ্যাপের সিইও হন। তিনি গুগ্ল ক্লাউডের সিইও টমাস কুরিয়েনের যমজ ভাই। টমাস ২০১৯ সালে গুগ্ল ক্লাউডের সিইও হন। তাঁরা দু’জনেই আইআইটি মাদ্রাজের ছাত্র। পরে স্কলারশিপ পেয়ে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে যান পড়াশোনা করেছেন।
নিকেশ আরোরা: ভারতের উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের বাসিন্দা নিকেশ আরোরাও আমেরিকার বহুজাতিক সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা পালো অল্টো নেটওয়ার্কের সিইও। বর্তমানে তাঁর বয়স ৫৫ বছর। বাবার চাকরি সূত্রেই বায়ুসেনা স্কুলে পড়াশোনা করেন তিনি। পরে বেনারসের আইআইটি (বিএইচইউ)-এ ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে স্নাতক হন। ২০১১-২০১৪ সাল পর্যন্ত গুগলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। ২০১৪ সালে সফট ব্যাঙ্কের প্রেসিডেন্ট হন। আর ২০১৮ সালে পালো অল্টোয় সিইও হন
সঞ্জয় মেহরোত্রা: কানপুরের বাসিন্দা সঞ্জয় মেহরোত্রা আমেরিকার বহুজাতিক সংস্থা স্যানডিস্কের সহ প্রতিষ্ঠাতা। দিল্লিতে পড়াশোনা শেষ করে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাশ করেন তিনি। ২০১৭ সালে তাঁকে কম্পিউটার মেমরি প্রস্তুতকারী সংস্থা মাইক্রোন টেকনোলজির সিইও পদের দায়িত্ব পান তিনি।
লক্ষ্মণ নরসিংহ: মহারাষ্ট্রের পুণের হিন্দু পরিবারের বাসিন্দা লক্ষ্মণ নরসিংহ। ২০২২ সালে তাঁকে সিইও হিসাবে ঘোষণা করে আমেরিকার বহুজাতিক কফি সংস্থা স্টারবাকস। একসময় তিনি পেপসিকো-র সিওও এবং রেকিট সংস্থার সিইও হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পুণেতে পড়াশোনা শেষ করে বিদেশে এমবিএ করেন তিনি।
রেবতী অদ্বৈতী: ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতীয় এই নারী রেবতীকে নতুন সিইও ঘোষণা করে আমেরিকার বহুজাতিক সংস্থা ফ্লেক্স। বর্তমানে তাঁর বয়স ৫৬। রাজস্থানের বিড়লা ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সের ছাত্রী তিনি ।
লীনা নায়ার: জনপ্রিয় ফরাসি ফ্যাশন ব্র্যান্ড শ্যানেলের সিইও-ও একজন ভারতীয়। মহারাষ্ট্রের হিন্দু পরিবারে মেয়ে লীনা পড়াশোনা করেছেন ভারতেই। জামশেদপুর থেকে সোনার পদক পেয়ে ম্যানেজমেন্ট নিয়ে স্নাতকোত্তর পাস করেন তিনি। কাজ করেছেন কলকাতাতেও।বর্তমানে এই সফল ব্যবসায়ীর বয়স ৫৪ বছর।
মীরা: টানা ২০ বছর ইউনিলিভারে কাজ করার পর তাদের চিফ হিউম্যান রিসোর্স অফিসার হয়েছিলেন মীরা। পরে যোগ দেন শ্যানেলে। তিনি প্রাক্তন পেপসিকো প্রধান ইন্দ্রা নুয়ির ছাত্রী।
Leave a Reply