কোহিনূর হীরে

কোহিনূর শব্দের অর্থ কি? বহু মূল্যবান কোহিনূর হীরেকে কেন অভিশপ্ত বলা হয়? জানেন রক্তক্ষয়ী কোহিনূর হীরের অভিশাপের পিছনে রয়েছে কোন অজানা রহস্য? এই হীরে কীভাবে শাসকদের জীবনে অভিশাপের কারণ হয়ে উঠত জানেন? তাহলে এর অভিশাপ থেকে ইংরেজের রানীরা মুক্তি পেলেন কোন জাদু বলে? বর্তমানে এই হীরের আনুমানিক মূল্য কত? ইংল্যান্ড থেকে কি ভারতে কোহিনূর ফিরিয়ে আনা সম্ভব?

কোহিনুর শব্দের অর্থ অপূর্ব আলোর ঝলকানি বা আলোর পাহাড়। বলা হয় কোহিনুরের আকারের মতো পরিবর্তন হয়েছে নাম। এই কোহিনুর নামটি দিয়েছিলেন ইরানের সুলতান নাদির শাহ। বলা হয় এই হীরে যার কাছেই থাকে সে হয়ে যায় পৃথিবীর মালিক। কিন্তু সেইসাথে তাঁর জীবনে নেমে আসে অভিশাপ।

তাই কোহিনূর হীরের সাথে জড়িয়ে রয়েছে পাঁচ হাজার বছরের পুরনো রক্তক্ষয়ী ইতিহাস। বর্তমানে যা ইংরেজ রাজ পরিবারের সম্পত্তি। তাই ভারতের বহুমূল্যবান এই রত্ন এখন জ্বলজ্বল করছে ব্রিটেনের লন্ডন টাওয়ারে ব্রিটিশ রানীর মুকুটে।

এই কোহিনূর হীরের অভিশাপ থেকে বাদ যাননি মোঘল সম্রাট শাহজাহানও। এই হীরের অভিশাপেই ধ্বংস হয়েছে বহু সাম্রাজ্য। তাই কোহিনূর মানেই তার সাথে লেপ্টে রয়েছে সিংহাসনচূত,সংঘাত কিংবা খুনাখুনির রক্তাক্ত ইতিহাস।

কিন্তু জানলে অবাক হবেন আজ পর্যন্ত কোহিনূর হীরা কোথাও বিক্রি হয়নি বা নিলামে ওঠেনি। কারণ বিগত ৫ হাজার বছরে এই হীরা প্রতিবারই কোন যুদ্ধ অথবা ছলনার মাধ্যমে হাতবদল হয়েছে। তবে এই হীরের ঐতিহাসিক দিক আর আকারের ভিত্তিতে এর আনুমানিক মূল্য হতে পারে চার হাজার কোটি টাকা।

গবেষকরা স্থান ভেদে কোহিনুরের ভ্রমণ পথ চিহ্নিত করেছেন। তাঁদের মতে, কোহিনুর বহু শাসকের হাত ধরে বিশ্বের বহু দেশ ভ্রমণ করেছে। পাঁচ হাজার বছর আগে কোহিনুর খনিতে তৈরি হওয়ার পর তা ১৩০৪ সালে মালওয়া, ১৩০৬ সালে অরুগাল্লু, ১৩২৩ সালে দিল্লি, ১৩৩৯ সালে সামরখা-, ১৫২৬ সালে দিল্লি, ১৭৩৯ সালে পারস্য, ১৮০০ সালে পাঞ্জাব, ১৮৪৯ সালে লাহোর, ১৮৫০ সালে যুক্তরাজ্য এবং বর্তমানে এটি টাওয়ার অব লন্ডনে রয়েছে।

একাধিকবার হাত বদল হয়ে কোহিনুর বিট্রিনে যাওয়ার পর এর অন্য একটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। তা হলো কোহিনুরের অভিশাপে শুধু পুরুষ শাসকদেরই ক্ষতি হয়। নারীরাই শুধু অভিশাপ থেকে নিস্তার পান। তাই কোহিনুরের অভিশাপে ব্রিটেনের রানীর কোনো ক্ষতি হয়নি।

এই অভিশপ্ত হীরেটি ভারতের অন্ধ্র[প্রদেশের গোলকোন্ডা খনি থেকে তোলার পর এর ওজন ছিল আনুমানিক প্রায় ৮০০ ক্যারেট বা প্রায় ১৬০ গ্রাম। বর্তমানে এর ওজন ১০৫ ক্যারেট বা ২১ গ্রাম। কিন্তু প্রশ্ন হল ইংল্যান্ডের রাজ পরিবারের হেফাজতে থাকা এই কোহিনুর কি ভারতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব? স্বাধীন হওয়ার পর ভারতের তরফে ক্রমাগত ইংল্যান্ড সরকারকে চাপ দেওয়া হয়েছে এই কোহিনূর হীরে ফিরত দেওয়ার জন্য।

কিন্তু প্রতিবারই ব্রিটিশ সরকার শিখ রাজা দিলীপ সিং-এর সাথে হওয়া লর্ড ডালহৌসির লাহোর চুক্তির কথা উল্লেখ করে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তবে কোহিনুর যে একটা অভিশপ্ত হীরে এটা কিন্তু শুধুমাত্র একটা লোককথা। ইতিহাসে আজ পর্যন্ত এমন কোন নথি পাওয়া যায়নি যেখানে হীরাটিকে অভিশপ্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে হীরের মালিকদের সাথে হওয়া ঘটনার উপর ভিত্তি করেই এই হীরাকে অভিশপ্ত বলা হয়।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *