কৈলাশ পর্বত

রহস্যে মোড়া কৈলাশ পর্বত! মহাদেবের আবাস কৈলাসে কেন আজও পৌঁছাতে পারেনি কেউ? মাউন্ট এভারেস্টের চেয়ে উচ্চতায় ছোট হলেও কৈলাশ পর্বত অজেয় কেন? কৈলাশ পর্বতের কাছে গেলেই কেন শোনা যায় মহাদেবের ডমরুর শব্দ? কৈলাশ পর্বতের এই অজানা রহস্য চমকে দেবে আপনাকে!

কৈলাশ হল দেবাধিদেব মহাদেবের বাসস্থান। হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈনসহ বহু ধর্মের মানুষ কৈলাসকে শিবের বাসস্থান হিসাবে পুজো করেন।  তিব্বতের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত এই কৈলাস পর্বতের সাথে ওতপ্রতভাবে জড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের বিশ্বাস। এই  কৈলাস  বহু বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুসারে কৈলাস পর্বত মহাকাশীয় গোলকের ঘূর্ণনের অক্ষ। একাধিক ধর্ম গ্রন্থ যেমন স্কন্দ পুরাণ, শিব পুরাণ, মৎস্য পুরাণসহ  বেদ ও পৌরাণিক গ্রন্থ রামায়ণেও উল্লেখ রয়েছে এই কৈলাস পর্বতের।

বৈজ্ঞানিকভাবে অক্ষমুন্ডিও বলা হয় কৈলাস পর্বতকে। কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয় হল কৈলাস পর্বত মাউন্ট এভারেস্টের চেয়ে  ছোট হলেও আজ পর্যন্ত কেউই শিবের এই আবাসে পৌঁছাতে পারেননি। কৈলাস পর্বতের পাদদেশে শুয়ে আছে রাক্ষসতাল হ্রদ ও মানস সরোবর। হিন্দু বৌদ্ধ জৈন ধর্মাবলম্বী মানুষদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র এই কৈলাস পর্বত। পিরামিড আকৃতির এই কৈলাস পর্বত ঘিরে রয়েছে একাধিক অজানা রহস্য। বহু মানুষের বিশ্বাস যে ব্যক্তি নিজের জীবদ্দশায় পুণ্যকর্ম করেন  মৃত্যুর পর তাঁদের কৈলাস পর্বতের স্থান লাভ করেন।

আসুন জানা যাক সাদা বরফে মোড়া কৈলাস পর্বত ঘিরে থাকা আটটি অজানা রহস্য সম্পর্কে।

১. পৃথিবীর কেন্দ্র কৈলাশ পর্বত

ভৌগোলিক তথ্য বলছে পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর মাঝেই অবস্থিত হিমালয় পর্বত। এরই কেন্দ্রস্থল হল কৈলাশ পর্বত। তাই বিজ্ঞানে কৈলাশ পর্বতকে পৃথিবীর কেন্দ্র বলে মান্যতা দেওয়া হয়েছে। ধর্মীয় মতানুসারে এই হিন্দুদের পবিত্র চার ধামের কেন্দ্র স্থল।

২. অজেয় এই পর্বত

গ্রানাইট ও চুনাপাথরে তৈরী কৈলাশ পর্বতের উচ্চতা ৬,৬০০ মিটার। যা মাউন্ট এভারেস্টের চেয়েও কম। কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয় এই মাউন্ট এভারেস্টের চূড়া পর্যন্ত অনেকে পৌঁছতে পারলেও তার চেয়ে কম উচ্চতা সম্পন্ন কৈলাশে আজও পৌঁছাতে পারেনি কেউ।

৩. রহস্যময় বৌদ্ধ ভিক্ষুক

মহাদেবের পবিত্র নিবাস কৈলাশ পর্বতের চূড়ায় ওঠা নিষিদ্ধ। তবে জনশ্রুতি আছে একাদশ শতকে মিলারেপা নামের এক বৌদ্ধ ভিক্ষু যোগীই  প্রথম  কৈলাশ পর্বতে উঠেছিলেন। কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয় সেখান থেকে ফিরে আসার পর এই যাত্রা সম্পর্কে তিনি নাকি আর কিছুই বলতে পারেননি। যা আজও রহস্য হয়ে আছে।

৪. নদীর উৎপত্তি

কৈলাশ পর্বতের চারদিক থেকে উৎপত্তি হয়েছে চার নদী ব্রহ্মপুত্র, সিন্ধু, শতদ্রু ও করনালী। এই নদী থেকেই গঙ্গা, সরস্বতী-সহ একাধিক নদী প্রবাহিত হয়ে থাকে। কৈলাশের চার দিকে রয়েছে বিভিন্ন পশুর মুখ। কৈলাশের পূর্বে রয়েছে  অশ্বমুখ, পশ্চিমে হস্তিমুখ, উত্তরে সিংহ মুখ ও দক্ষিণে ময়ূরের মুখ ।

 

৫. ডমরুর ধ্বনি শোনা যায়

কথিত আছে যাঁরাই কৈলাশ পর্বত কিংবা মানস সরোবরের  কাছাকাছি পৌঁছেছেন  তাঁদের কানে এসেছে এক বিশেষ ধরনের শব্দ। অনেকের বিশ্বাস এই ধ্বনিটি মহাদেবের ডমরুর মতো। তবে বৈজ্ঞানিকদের মতে এটি আসলে বরফ গলার শব্দও।

৬. স্বর্গের সিঁড়ি

একাধিক হিন্দু ধর্ম গ্রন্থ ও বেদ অনুযায়ী কৈলাশ পর্বত পৃথিবী ও স্বর্গের মধ্যে তৈরী হওয়া একটি সেতু। হিন্দুদের বিশ্বাস এই কৈলাসে রয়েছে স্বর্গে যাওয়ার সিঁড়ি। মহাভারতে কথিত আছে  মোক্ষ লাভের জন্য কৈলাশ পর্বতে আরোহণ করেছিলেন পাণ্ডবরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত  যুধিষ্ঠিরই এই পথে স্বর্গে পৌঁছতে পেরেছিলেন। তাই হিন্দুদের বিশ্বাস কৈলাসই হল স্বর্গের প্রবেশদ্বার।

৭. পাহাড়ের গায়ে ওম অঙ্কিত

কৈলাশ স্বয়ং মহাদেবের  নিবাস। ঈশ্বরের এমনই লীলা যে এই পর্বতের গায়ে প্রাকৃতিক ভাবেই বরফের ওম চিহ্ন তৈরী হয়ে যায়। ভক্তদের বিশ্বাস এই ওম ঈশ্বরের সৃষ্টি।

৮. সময়ের মধ্যে একটি লাফ দেওয়া

আশ্চর্যজনক ভাবে কৈলাশ পর্বতারোহীদের বয়স নাকি এক লাফে অনেকটাই বেড়ে যায়। তাই যেসমস্ত ট্রেকার আর তীর্থযাত্রীরা কৈলাস পর্বত পরিদর্শন করেন তারা বলেন এই পবিত্র পর্বত থেকে ফিরে আসার পর তাঁরা তাঁদের নখ এবং চুলের দ্রুত বৃদ্ধি লক্ষ্য করেছেন।

৯.সূর্য এবং চাঁদের সাথে হ্রদের মিল

কৈলাস পর্বতের পাদদেশে শুয়ে থাকা দুটি পবিত্র হ্রদ হল মানস সরোবর এবং রাক্ষসতাল।এই দুটি আদিম হ্রদ আলো এবং অন্ধকার, ইতিবাচক এবং নেতিবাচক শক্তিকে প্রকাশ করে।  অনেক ভক্ত মনে করেন মানসরোবরের তীর্থযাত্রা তাদের পাপ থেকে মুক্তি দেয়। এই দুটি হ্রদের সাথে সূর্য এবং চাঁদের তুলনা করা হয়।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *