লীলা চিটনিস

লাক্স সাবানের প্রথম ‘স্টার ফেস’ নায়িকা! অথচ পরাধীন ভারতে বাল্যবিবাহের শিকার তিনি! মাত্র ১৫ বছরে বিয়ে, ৪ সন্তানের মা! বিবাহ বিচ্ছিন্না হয়ে পেট চালাতে এসেছিলেন অভিনয়ে!  হিন্দি সিনেমার এই নায়িকার নিজের জীবনই যেন সিনামার চিত্রনাট্য। বলিউডের প্রথম স্নাতক অভিনেত্রী ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন দেশ স্বাধীন করতে! হিন্দি সিনেমার এই রোম্যান্টিক নায়িকাই ছিলেন দিলীপ কুমার কিংবা রাজ কাপুরের অনস্ক্রিন মা! চিনে নিন বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাওয়া এই অভিনেত্রী আসলে কে?

ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এমন অনেক অভিনেত্রী রয়েছেন,যাঁরা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেই বড় ব্রেক পেয়ে থাকেন সিনেমায়। হিন্দি সিনেমার স্বর্ণযুগের এমনই একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী ছিলেন লীলা চিটনিস। তিনি ছিলেন লাক্স সাবানের মতো জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের প্রথম মুখ। এই একটি বিজ্ঞাপনের মধ্য দিয়েই রাতারাতি সেলিব্রেটি হয়ে গিয়েছিলেন গোটা দেশে। সাধারণত ফিল্মি দুমিয়ায় মেয়েরা বিয়ের পরেই অভিনয় করা ছেড়ে দেন, কিংবা কমিয়ে দেন কাজ।

কিন্তু তখনকার দিনে দাঁড়িয়ে এই মিথ ভেঙে গুঁড়িয়ে  দিয়েছিলেন লীলা চিটনিস। জানলে অবাক হবেন ভারতীয় সিনেমার  এই জনপ্রিয় অভিনেত্রীর ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামেও  বিরাট অবদান ছিল। তিনি মাত্র ১৫ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন। তারপর চার সন্তানের মা-ও  হয়েছিলেন। কিন্তু তারপরেও অভিনয় ছাড়েননি নায়িকা। বিয়ের পর লীলা তার স্বামীর সাথেই দেশ স্বাধীনের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। লীলা চিটনিস, ১৯০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর,কর্ণাটকের একটি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। আর ২০০৩ সালে ৯৪ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

কিন্তু বিয়ের পর তার সংসার সুখের হয়নি। চার সন্তান নিয়েই স্বামীর থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন লীলা চিটনিস। সে সময় সন্তানদের পালন করতে স্কুলের শিক্ষিকা হিসেবে ছাত্র পড়াতে শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু তা তার পক্ষে যথেষ্ট ছিল না, তাই তিনি সেই সময় থেকেই থিয়েটার এবং নাটকে অভিনয় করতে শুরু করেছিলেন লীলা। লীলা ১৯৩০ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ভারতীয় সিনেমার একজন সক্রিয় অভিনেত্রী ছিলেন।

লীলা যখন সাবানের বিজ্ঞাপনে অভিনয় করেছিলেন তখন তা আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল সারা দেশে। এই সাবানের বিজ্ঞাপন থেকে শুধু লাক্সেরই লক্ষী লাভ হয়নি। পাশাপাশি এই বিজ্ঞাপন থেকে সারা দেশে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন লীলাও। তখনই প্রথম পরিচালকদের নজরে আসেন লীলা।

তারপর ধীরে ধীরে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ আসে লীলার কাছে। জানা যায় শুধুমাত্র সন্তানদের পেট চালাতেই সেই সময় অভিনয় জগতে প্রবেশ করেছিলেন লীলা। যদিও সেই সময় আমাদের দেশে সিনেমায় মেয়েদের অভিনয় করার বিষয়টা খুব একটা ভালো চোখে দেখা হতো না। কিন্তু সমাজের কোন চোখ রাঙানিই তাকে আটকে রাখতে পারেনি।

তাঁর অপরূপ সৌন্দর্যে শুধু সাধারণ মানুষই নয় মুগ্ধ ছিলেন সিনেমার নির্মাতারাও। তৎকালীন সময়ে লীলা চিটনিস ছিলেন হিন্দি সিনেমার সবচেয়ে শিক্ষিত অভিনেত্রী। তিনি ছিলেন মহারাষ্ট্রের প্রথম স্নাতক পাশ  নায়িকা। অভিনয় জীবনের  শুরুটা লীলা একজন রোমান্টিক অভিনেত্রী হিসেবে করেছিলেন। কিন্তু পরে তিনি বলিউড সুপারস্টারদের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান ।

তার অভিনীত প্রথম সুপারহিট সিনেমা ছিল ১৯৩৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘জেন্টেলম্যান ডাকু’। এই সিনেমায় প্রথম পুরুষের পোশাকে দেখা গিয়েছিল লীলাকে। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দীর্ঘদিনের অভিনয় জীবনে লীলা অভিনয় করেছেন ‘বোম্বে টকিজ’, ‘কঙ্গন’, ‘আজাদ’, ‘বন্ধন’, ‘ঝুলা’ মত একাধিক জনপ্রিয় সিনেমায়। অভিনেতা অশোক কুমারের সাথে লীলার জুটি ছিল দারুণ জনপ্রিয়। পরবর্তীতে ১৯৪৮ সালে ‘শহীদ’ সিনেমায় তিনি দিলীপ কুমারের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।

এছাড়া রাজ কাপুরের ‘আওয়ারা’ ছবিতেও মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন লীলা চিটনিস।জনপ্রিয়তার শিখরে থাকা সত্বেও, ১৯৮৭ ‘সালে দিল তুঝকো দিয়া’ সিনেমার পর অভিনয় জীবনকে চিরকালের জন্য বিদায় জানান লীলা চিটনিস। এরপর তিনি সন্তানদের নিয়ে আমেরিকায় থাকতে শুরু করেন।

 

 


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *