গরুকে কেন মা বলা হয়? এতো প্রাণী থাকতে গোরুকেই কেন ‘গোমাতা’ সম্বোধন করা হয়? গরুর দুধ কেন মাতৃদুগ্ধের সমান জানেন?হিন্দুশাস্ত্রে এর কি ব্যাখ্যা আছে জানেন? গরুর দুধ ছাড়া পুজো অসম্পূর্ণ কেন জানেন? গো-মাংস ভক্ষণ করলে নরকে ঠাঁই হয় কেন জানেন? শাস্ত্রমতে গোহত্যাকারীর কি শাস্তি হয় জানেন? জানলে হাড় হিম হয়ে আসবে আপনার!
হিন্দুধর্মে গোমাতার গুরুত্ব অপরিসীম। এমনি এমনিই তাকে দেবতার আসনে বসানো হয়নি। শুধু দেবতা নয় হিন্দুধর্মে গাভীকে গোটা পৃথিবীর মায়ের সম্মান দেওয়া হয়। হিন্দুদের যেকোনো শুভ অনুষ্ঠান গরুর দুধ ছাড়া অসম্পূর্ণ। কিন্তু অনেকের মনেই প্রশ্ন আসে এত প্রাণী থাকতে গরুকেই মায়ের সম্মান দেওয়া হয়? কি বলছে হিন্দু ধর্ম? শাস্ত্রেই বা গরুকে কেন এত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে?
সনাতন হিন্দু ধর্মে যে ৭ ধরনের মাতার উল্লেখ আছে,তাদের মধ্যে অন্যতম এই গো-মাতা। হিন্দুধর্মের এই ৭ মা হলেন –
১. বেদমাতা
২, ধরণী মাতা
৩, ব্রাহ্মণ মাতা
৪. গুরু মাতা
৫. গােমাতা
৬, রাজ মাতা
৭. গর্ভধারিণী মাতা
হিন্দুধর্মে গরুকে কেন মাতা বলে সম্বোধন করা হয়েছে জানেন?
বলা হয় মাতৃদুগ্ধ অমৃতের সময় তবে অনেক জন্মের পর প্রত্যেক শিশুই এই মাতৃদুগ্ধ পান করে বেঁচে থাকে। কিন্তু অনেক শিশুই জন্মের পর মাতৃহারা হয়। সেই শিশু যাতে মাতৃদুগ্ধ থেকে বঞ্চিত না হয় জন্য তখন তার জন্য অন্যতম সেরা বিকল্প হল এই গরুর দুধ। সেদিক দিয়ে গরু আমাদের জন্মদাত্রী মা না হলেও আমাদের মায়ের মতই হয়ে থাকে। তাই হিন্দু শাস্ত্রে এমনি এমনিই গরুকে মাতা বলে সম্মোধন করা হয় না!
হিন্দুধর্ম মতে, গরুর গোবর, গোমূত্র,ক্ষীর, দই এবং ঘি পরম পবিত্র ও বহুগুণ যুক্ত। এই পাঁচটি পদার্থকে একসাথে পঞ্চগব্য বলা হয়। হিন্দুদের প্রায় প্রত্যেক পুজো, নিত্য কর্ম, মনে শিশুর জন্ম, বিয়ে কিংবা শ্রাদ্ধ শান্তিতেও এই পঞ্চগব্য প্রয়ােজন হয়। হিন্দুদের বিশ্বাস একটি গরু দেন করা শত ভরি সোনা দেন করার সমান।
হিন্দু ধর্মে গোমাংস ভক্ষণ করা মহাপাপ। মহাভারতে বলা হয়েছে যে মানুষ শাস্ত্রীয় নিষেধ অগ্রাহ্য করে গোমাংস ভক্ষণ করে সেই গরুর শরীরে যত লোম থাকে গো হত্যাকারীকে তত বছর নরক যন্ত্রণার মধ্যে পচতে হবে। এছাড়াও মহাভারতে গরুকে গোটা বিশ্বের মায়ের আসনে বসানো হয়েছে।
ব্রহ্মপুরাণে বলা হয়, গরুকে প্রদক্ষিণ করলে সপ্তদীপা পৃথিবীতে ভ্রমণের ফল হয়।প্রাচীন ভারতে গোপালন ছিল অত্যন্ত সম্মানজনক পেশা। স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জন্ম গ্রহণ করেছিলেন গোকুলে। নিজেকে গোপালক হিসাবেই তুলে ধরেছিলেন বিশ্ব বাসীর কাছে। কিন্তু এত প্রাণী থাকতে গরুকেই কেন এত প্রাধান্য দিয়েছিলেন তিনি? তবে শ্রীকৃষ্ণ একা নন দেবাদিদেব মহাদেবের বাহনও একটি বৃষ অর্থাৎ ষাঁড়। এছাড়া তিনিও নিজেও একবার বৃষভ অবতার ধারণ করে রক্ষা করেছিলেন সৃষ্টিকে। এছাড়া নবরাত্রিতে পূজিত দেবী শৈলপুত্রীর বাহনও একটি ষাঁড়।
বিষ্ণুপুরাণে গরুর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। বলা হয় ভগবান বিষ্ণুর বাহন গােমাতা। চৈতন্য চরিতামৃতে মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্যদেব বলেছেন , ‘আমরা গরুর দুধ খাই তাই গরু আমাদের মাতা, আর বৃষ যে অন্ন উৎপাদন করে তা খেয়েই আমরা বেঁচে থাকি। সেই সে সূত্রে সে আমাদের পিতা ‘।
গীতার দশম অধ্যায়ের ২৮ নম্বর শ্লোকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন ‘ধেনুদের মধ্যে আমি কামধেনু। সব গাভীই কামধেনুর পার্থিব রূপ। তাই সব গাভীই শ্রীকৃষ্ণের রূপ। বেদে বলা হয়েছে গভীর দেহেই সব দেবতাদের বাস। তাই গাভীকে দেবতাজ্ঞানে পুজো করা হয়।
Leave a Reply