যমরাজ কে? জানেন যমরাজের বাড়ি কোথায়? যম কেন প্রকান্ড মহিষে চড়ে আসেন? এতো প্রাণী থাকতে মহিষই কেন যমরাজের বাহন জানেন? যমুনা কি সত্যই যমকে ভাই ফোঁটা দিয়েছিল? জেনে নিন যমরাজের সাথে জড়িত নানান অজানা পৌরাণিক কাহিনী !
যমরাজ হলেন মৃত্যু দেবতা। মৃত্যুর পর মানুষের কর্ম অনুযায়ী পাপ পুণ্যের বিচার করে শাস্তি দেন স্বয়ং যমরাজ। যম শব্দটির উৎপন্ন হয়েছে যমজ থেকে। সূর্য দেবতার দুজন যমজ পুত্র-কন্যা। তাঁদের মধ্যেই জ্যেষ্ঠ পুত্র যম আর কন্যাকে বলা হয় যমুনা। এই যম এবং যমুনাকে কেন্দ্র করেই ভাইফোঁটা অনুষ্ঠানে বোনেরা উচ্চারণ করেন ‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা। যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা’।
তবে যমুনা আদৌ যমকে ফোঁটা দিয়েছিল কিনা তা নিয়ে মাতভেদ রয়েছে বেদজ্ঞদের মধ্যে। তাছাড়া এই যম এবং যমুনার মধ্যে আদৌ কোনো ভাই বোনের সম্পর্ক ছিল কিনা তা নিয়েও অজস্র মতভেদ প্রচলিত রয়েছে পন্ডিত ব্যক্তিদের মধ্যে। এই যমরাজ সম্পর্কে হিন্দু পুরাণে অনেক তথ্যই রয়েছে। সৌরজগতের একটি গ্রহকে বলা হয় যমালয় অর্থাৎ যমরাজের বাড়ি।
অতীতে আমাদের সৌরজগতে– বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন এবং প্লুটো নামের নয়টি গ্রহ ছিল। কিন্তু ২০০৬ সালে প্লুটো থেকে গ্রহের মর্যাদা কেড়ে নেওয়া হয়। এই বামন গ্রহটিকেই অনেকে যমরাজের বাড়ি বলেন।
যমরাজ বিভিন্ন গ্রন্থে কালপুরুষ, ধর্মরাজ, কালা বা লোকপাল নামে পরিচিত। যমরাজের শরীরের রং কখনও ঝড়ের পূর্ববর্তী ঘন কালো মেঘের মতো, আবার কখনও নীলাভ আবার কখনো বা লাল। প্রকাণ্ড একটি মহিষের উপর আসীন এই যমরাজের পরনে সব সময় থাকে সোনার মতো উজ্জ্বল পোশাক। তাঁর একহাতে গদা এবং অন্য হাতে থাকে দড়ির ফাঁস। আবার কোন কোন রূপে মৃত্যুদূত চার হাত বিশিষ্টও হয়। জলন্ত আগুনের মালা দ্বারা ঘেরা এবং লাল হলুদ বা নীল পোশাক পরিহিত এই রূপে যমদূতের হাতে দেখা যায় যমদন্ড,ফাঁদ গদা,তরবারি,ডান্ডা ইত্যাদি।
যমরাজ পাপীদের গ্রহ নরকের অধিপতি। এই নরলোক পৃথিবী থেকে বহু যোজন নিচে অবস্থিত। এই নরকপুরীতে সার্বক্ষণ শোনা যায় আর্ট পীড়িতদের আত্ম চিৎকার। নাকে আসে উৎকট পোড়া-পচা গন্ধ। নরক পুরীতে যমরাজ সস্ত্রীক বাস করেন। তবে তাঁর স্ত্রীর নাম নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। তবে পণ্ডিতগণ ধূমর্ণাকেই যমের প্রধান বা একমাত্র স্ত্রী হিসেবে বিবেচনা করেন।
যমালয়ে তার প্রধান হিসাব রক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন চিত্রগুপ্ত। ভগবান ব্রহ্মার শরীর থেকেই যমের সহকারী হিসেবে উৎপত্তি হয়েছিল এই চিত্রগুপ্তের। এই চিত্রগুপ্তের হিসাবের খাতা থেকেই মৃত ব্যক্তির পাপ পুণ্যের হিসাব কষে শাস্তির মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে বিভিন্ন বৈষ্ণব ধর্ম গ্রন্থে যমরাজকে সজ্জন, পরম বৈষ্ণব, মহাজন কিংবা বিষ্ণুভুক্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সনাতন শাস্ত্র গ্রন্থ অনুযায়ী যমরাজ হলেন সেই ব্যক্তি যিনি এই পৃথিবীতে সর্বপ্রথম মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
যমরাজের সাথে সব সময় থাকেন তার বাহন মহিষ। কালো কুচকুচে এই অত্যন্ত ধীর গতির প্রাণী। মহিষের এই গতির সাথে মিল রয়েছে আর মানুষের মৃত্যুর। আসলে প্রত্যেক মানুষের জন্মের সাথে সাথেই তার দিকে ধীরগতিতেই এগিয়ে আসে মৃত্যু। তাছাড়া প্রত্যেক মানুষের জীবন বড়ই অনিশ্চিত। আমরা কেউ জানি না এই মৃত্যুদূত কখন আমাদের জীবন নিতে চলে আসবেন। তাই প্রত্যেকেরই উচিত মহাপুরুষদের অনুসরণ করে সারা জীবন সৎকর্ম এবং ধর্মের পথে চলা।
Leave a Reply