করনি মাতার মন্দির

ইঁদুর মানেই সিদ্ধিদাতা গণেশের বাহন। অথচ এই ইঁদুর দেখলেই দুর ছাই করে তাড়িয়ে দেয় সবাই। কিন্তু আমাদের দেশেই এমন এক মন্দির রয়েছে যেখানে ইঁদুরকেই রাখা হয় মাথায় করে। প্রায় ৩০ হাজার ইঁদুরকে দেবতাজ্ঞানে পুজো করা হয়  এই মন্দিরে। যারা কাব্বাস  পরিচিত। ভারতের  এই বিখ্যাত মন্দিরের আরাধ্য দেবী করনি মাতা হলেন দেবী দুর্গারই এক অবতার। তবে জানলে অবাক হবেন এই দেবীর কোন উল্লেখ নেই হিন্দু পুরাণে। আসলে তিনি ছিলেন জীবন্ত এক কিংবদন্তি! কি ভাবছেন কোথায় রয়েছে এমন অদ্ভুত মন্দির? আমাদের দেশের বিখ্যাত ঐ মন্দিরটি রয়েছে রাজস্থানের বিকানের থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দেশনোকে।

কে এই করনি মাতা?

প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী এই এই করনি মাতা হলেন দেবী দুর্গারই এক অবতার। তিনি নাকি জীবিত অবস্থাতেই দেবীত্ব অর্জন করেছিলেন। জানা যায় চতুর্দশ শতকে হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এই করনি মাতা। প্রথমে তাঁর নাম ছিল ঋদ্ধি বাই। চরণ পরিবারে বিয়ে হলেও সংসারে মন না বসায় নিজের বোনের সাথে স্বামীর বিয়ে দিয়ে সংসার ত্যাগ করে সন্ন্যাসিনী রূপেই নিজের গোটা জীবন কাটিয়েছিলেন তিনি।

কেন তাকে দেবতা জ্ঞানে পূজো করা হয়?

সে সময় বিকানের এবং যোধপুরের রাজ পরিবারের কাছে এই করনি মাতার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এমনকি রাজ্য পরিচালনা থেকে শুরু করে নানান গুরুত্ব পূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এই করোনি মাতার মতামতকে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন এই দুই রাজ পরিবার। কিন্তু একদিন  হঠাৎ করেই হারিয়ে যান তিনি। তাঁর সেই অন্তর্ধান রহস্যের সমাধান হয়নি আজও। তবে করনি মাতার অন্তর্ধান রহস্য নিয়ে উঠে আসে একাধিক কারণ।

করনি মাতার অন্তর্ধান রহস্য

একদল দাবি করেন দুই রাজ পরিবারের ওপর কনিমাতার ব্যাপক প্রভাব ছিল বলেই কেউ ইচ্ছা করেই তাঁকে  খুন করে দিয়েছিল। করনি মাতা হারিয়ে যাওয়ার পর বিকানের রাজ পরিবার এই করনি মাতার মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ভক্তদের বিশ্বাস এই মন্দিরে এখন যে ইঁদুররা থাকে তারা আসলে করনি মাতার সন্তান।

ইঁদুর কিভাবে করনি মাতার সন্তান হল?

এর পিছনেও রয়েছে  দুটি প্রচলিত কাহিনী। জনশ্রুতি অনুযায়ী করনিমাতার শত শত সন্তান এবং সৎ ছেলে লক্ষণ কপিল সরোবরের জল খেতে গিয়ে ডুবে গিয়েছিলেন। তখন সন্তানদের প্রাণভিক্ষা চেয়ে যমরাজের শরণাপন্ন হয়েছিলেন করনি মাতা। যমরাজ করনি মাতার সন্তানদের ইঁদুর রূপে পুনর্জন্ম দিয়েছিলেন। মানুষের বিশ্বাস করনি মাতার মন্দিরের ইঁদুররাই তাদের বংশধর।

এছাড়াও কথিত আছে  একবার কুড়ি হাজার সৈনিক বিকানেরের কাছাকাছি কোন এক যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে দেশনোকে এসেছিলেন। কিন্তু যোদ্ধাদের জন্য যুদ্ধভুমি ছেড়ে পালানো মহাপাপ। তাই শাস্তি হিসেবে করনিমাতা তাদের প্রাণে না মারলেও ইঁদুরে রূপান্তরিত করে মন্দিরে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।

ইঁদুরের উচ্ছিষ্ট  প্রসাদ:

এখানেই শেষ নয়, এই  মন্দিরের ইঁদুরদের প্রতি ভক্তদের ভক্তির বহর দেখলে চোখ কপালে উঠবে যে কারও। জানলে অবাক হবেন এই মন্দিরের প্রসাদ আসলে ইঁদুরের খাওয়া উচ্ছিষ্ট। আর এই প্রসাদ পাওয়ার জন্যই নাকি ভক্তদের লম্বা লাইন পড়ে। তবে মন্দিরের ঢুকে ইঁদুর দেখে ভয় পেলে কিন্তু চলবে না।  যদি কোনো ইঁদুর কারও পদপিষ্ট হয় তাহলে  প্রথা অনুযায়ী সেই ইঁদুরের সমান ওজনের সোনার ইঁদুর দান করতে হবে মন্দিরে । এই মন্দিরের বেশীরভাগ ইঁদুরই কালো। কিন্তু কেউ যদি সাদা ইঁদুর দেখতে পান তাহলে তিনি নাকি দারুন ভাগ্যবান।

ভোট চারটের সময় খুলে যায় এই মন্দির। নবরাত্রিতে এখনই লক্ষ লক্ষ ভক্ত সমাগম হয়। ধর্মীয় বিশ্বাস ছাড়াও এই মন্দিরের  স্থাপত্য এবং ভাস্কর্য রীতিমতো তাকে লাগিয়ে দেয়। স্থানীয় মানুষদের বিশ্বাস এই মন্দির চত্বরের প্রধান ফটকে যে বিশাল সিংহমূর্তি রয়েছে তার কানে কানে মনের ইচ্ছার কথা জানালে তা নাকি সত্যিই পূরণ হয়। এই দেশনোকে বছরে দুবার মেলা বসে, যার নাম করনি মেলা।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *