চন্দননগরের আলোকসজ্জার জনক যিনি তার হাত ধরেই প্রথম শুরু হয় চলমান আলো! এই জনক আসলে কে?

কখনোও ভেবে দেখেছেন, চন্দন নগরের লাইটিং এত বিখ্যাত কেন? কার জন্য হঠাৎ করে এত
জনপ্রিয়তা পেল চন্দননগরের লাইটিং?

কখনোও ভেবে দেখেছেন,
চন্দন নগরের লাইটিং
এত বিখ্যাত কেন ?

কার জন্য হঠাৎ করে এত
জনপ্রিয়তা পেল চন্দননগরের লাইটিং?

যার কথাতেই ওঠাবসা
করে আলো!

যার ইশারাতেই জীবন্ত হয়ে ওঠে
বিক্রম বেতাল থেকে ঠাকুমার ঝুলি!

চেনেন কি সেই মহান ব্যক্তিকে ?

আলোর শহর মানেই চন্দনগর! দেশ থেকে বিদেশ সর্বত্র চন্দননগরের আলোসজ্জার নাম ডাক রয়েছে। কলকাতায় যত নামজাদা বড় বড় পুজো দেখেছেন, তার বেশিরভাগ আলোকসজ্জা চন্দননগর থেকেই যাওয়া। কিন্তু জানেন কি চন্দননগরের আলোর জনক কাকে বলা হয়? যিনি আজ আলো তৈরি করে গোটা দেশ, বিদেশ চমকাচ্ছেন তার যাত্রা পথ কিন্তু খুব একটা আলোকিত ছিল না।

এই মানুষটির নাম শ্রী ধরদাস। অনেক লড়াই ও অন্ধকারের পেরিয়ে তিনি আলোর জনক হয়েছেন। নিজে অন্ধকারে থেকে বাকিদের আলোকিত করে গেছেন সব সময়। ছোটবেলায় মাত্র ১০ টাকাতেই স্কুলের সরস্বতী পূজায় তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন এই মানুষটি। আজ তার আলোকসজ্জাই সারা জগৎ বিখ্যাত। খোদ বিদেশ থেকে আলোকসজ্জার অনুরোধ আসে তার ঘরে। হাওড়া ব্রিজের আলোসজ্জা থেকে শুরু করে প্যারিসের আইফেল টাওয়ার পর্যন্ত ছড়িয়েছে তার হাতের জাদু। মস্কো, ব্রিটেন, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ইতালি বিশ্বের নানান প্রান্তে কাজ করেছেন এই মানুষটি। চন্দননগর আলো নিয়ে আজ যা ভাবছে, গোটা দেশ তা ভাববে আগামী বছর। আর এই কথাটি যে কতটা খাঁটি তা চন্দননগর গেলেই বোঝা যায়। চন্দননগরের আলোকসজ্জা দেখবার জন্য জগদ্ধাত্রী পুজোর সময় লক্ষ লক্ষ মানুষ। আপনি চন্দননগরে গেলে এমন কিছু বিস্ময়কর আলোকসজ্জা দেখতে পাবেন, যা আপনি আর কোথাও দেখেননি। পুজোর সময় আপনারা যে সমস্ত চলমান লাইটিং দেখতে পান এগুলো সবই শ্রীধর বাবুর সৃষ্টি। ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে যখন ঠাকুর দেখতে যেতেন, তখন অন্যান্য ছেলেপুলেরা ঠাকুর দেখলেও, শ্রীধর বাবু দেখতেন মণ্ডপের আলোকসজ্জা। ঝিলিমিলে ,, নানা রঙের টিউবলাইটের আলোর দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকত ছোট্ট শ্রীধর। একবার ক্লাস সেভেনে পড়া কালীন শ্রীধর বাবু, স্কুলের সরস্বতী পুজোর আলোকসজ্জার দায়িত্ব পান। সেটাই ছিল শ্রীধর বাবুর কাছে সুবর্ণ সুযোগ। ওই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে প্রমাণ করেন নিজের প্রতিভা। সেই সময় শ্রীধর বাবুর স্কুলের হেডমাস্টার তাকে সরস্বতী পূজার আলোসজ্জার জন্য মাত্র ১০ টাকা দিয়েছিলেন। আর বলেছিলেন ভালোভাবে সরস্বতী পুজোর আলোকসজ্জা করতে। আর এই ১০ টাকাতেই শ্রীধর বাবু এমন আলোকসজ্জা করেছিলেন, যা দেখে রীতিমত অবাক হয়েছিল স্কুলের প্রত্যেক সদস্য!! এই দশ টাকাতেই দুটি বার্লির কৌটা কেটে এমন তিনটি বাতি বানিয়েছিলেন তিনি, যা দেখে কেউ বিশ্বাসই করতে পারেননি শ্রীধর বাবুই সেই বাতি বানিয়েছেন। ছোটবেলা থেকেই আলোর প্রতি তার একটি তীব্র আকর্ষণ ছিল। যখন বন্ধুরা ফুটবল নিয়ে মাঠে খেলতো তখন তিনি লাইট আর তার নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। পড়াশুনোর এত সাবজেক্ট থাকা সত্ত্বেও তার পছন্দের সাবজেক্ট ছিল ইলেকট্রিকেল সার্কিট। এভাবেই ভাবনা চিন্তা করতে করতে একদিন শ্রীধর বাবুর মাথায় আসে চলমান লাইটের ভাবনা। লাইট শুধু জ্বলবেই না, সেই সঙ্গে চলবেও! অর্থাৎ লাইট ও কথা বলবে। যেই ভাবা সেই কাজ। কোন রকমে ৮০ টাকা জোগাড় করে, দুই বন্ধুর সাহায্যে, হাজারটা টুনি লাইট কিনে শুরু করে দেন আলোক শিল্প। এরপর শ্রীধর বাবুর হাত ধরে বাজারে আসে চলমান লাইট। মানুষ প্রথমবার দেখতে শুরু করল আলোর মধ্যে পশু, পাখি ঘুরছে, হাঁটছে। ঠাকুরমার ঝুলি থেকে বিক্রম বেতালেরর গল্প ফুটে উঠছে আলোর মধ্যে! শুধু তাই নয় শাহরুখ খান থেকে সালমান খানের মতো বড় বড় তারকাদের মুখও ভেসে উঠছে আলোর মধ্যে।অর্থাৎ আলোর মধ্য দিয়ে ফুটে উঠছে মনের কথা। এভাবেই আলো এবং মানুষকে এক সূত্রে গেঁথে দিলেন শ্রীধর বাবু। এভাবেই ধীরে ধীরে শ্রীধর বাবুর বানানো চলমান আলোকসজ্জা, ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে গোটা বাংলা জুড়ে। এই মানুষটির হাত ধরেই প্রথম টর্চের ল্যাম্প দিয়ে আলো তৈরি হয়। তিনিই কলেজের স্কয়ারের দুর্গাপূজায় জলের নিচে আলো জ্বালিয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। ১৯৫৪ সাল থেকে আলো তৈরির সঙ্গে যুক্ত এই মানুষটি, চন্দননগরে একবার, আলোর তৈরি গাছ বানিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন।

বার্ধক্যজনিত কারণে এখন আলোর কাজ বন্ধ হয়ে রেখেছেন তিনি। তার বাড়িতে প্রবেশ করলেই দেখা যায় ত ঘরের দেওয়ালে টাঙানো, দেশ-বিদেশের খ্যাতি। দেশ বিদেশ থেকে বহু ডাক আসে তার কাছে। বর্তমান বাজারে যে সমস্ত আলো দেখতে পাওয়া যায় সেগুলোর বেশিরভাগই চায়না আলো। কিন্তু এক্ষেত্রে শ্রীধর বাবুর বানানো আলো একেবারেই ব্যতিক্রম। কারণ শ্রীধর বাবু আলো বানাতেন নিজের হাতে। কখনো ভাঙ্গা টিউবলাইট কিংবা কখনো নষ্ট বাঁশের কঞ্চি,, এইসবই ছিল শ্রীধর বাবুর আলো তৈরীর উপকরণ। এগুলো দিয়েই নানারকম আলোর ভেলকি দেখা দেন তিনি। তবে বয়সের ভারে আজ তার হাতের কাজ কমে এলেও, যতবারই চন্দননগরের আলোকসজ্জার কথা হবে, ততবারই উঠে আসবে চন্দননগরের আলোর জনক শ্রীধর দাসের নাম।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *